নয়াদিল্লি, 7 জুলাই : বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য দিল্লির তখতে মোদি সরকার এসেছিল । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সবথেকে বড় রদবদল । পরিস্থিতি এমন যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন । খাতায় কলমে অবশ্য সরিয়ে দেওয়া হল -- এমনটা বলা যায় না । নিজেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন হর্ষ বর্ধন ।
কিন্তু কেন এমনভাবে সরে দাঁড়ালেন হর্ষ বর্ধন ? এই নিয়েই এখন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর । প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হর্ষ বর্ধনকে ব্যর্থ হিসেবেই ধরে নিচ্ছে কেন্দ্র ?
সমস্যাটা আজকের নয় । করোনার প্রাদুর্ভাব যখন শুরু হল, তখন বিশ্বের দরবারে ভারতের যে চিত্রটা ছিল তা ক্রমেই অবনতি হতে শুরু করে । শুরুর দিকে বাইরের দেশগুলিকে করোনার প্রাণদায়ী ওষুধ রেমডেসিভির পাঠিয়েছিল ভারত । বেশ প্রশংসাও পেয়েছিল বিশ্বের দরবারে । এরপর যখন করোনার টিকা তৈরি হতে শুরু করল, তখনও বাইরের দেশগুলিকে টিকা পাঠাতে শুরু করেছিল দিল্লি । আর এই সিদ্ধান্ত নিয়েই বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে কেন্দ্র ।
বাইরের দেশগুলিতে করোনা টিকা পাঠাতে গিয়ে কেন্দ্র দেশের নাগরিকদের অবহেলা করেছে বলেও বারবার অভিযোগ উঠেছে । ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা এমন জায়গা পৌঁছে গিয়েছে যে বাইরের দেশের থেকে ত্রাণ পর্যন্ত নিতে হয়েছে কেন্দ্রকে । বহুদিন পর দেশকে এমন পরিস্থিতিতে এসে পড়তে হয়েছে, যখন ত্রাণ নিতে বাধ্য হচ্ছে ।
বারবার দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার ছবিটা বেরিয়ে এসেছে । একসময় অক্সিজেনের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছিল । যে পরিমাণ অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তা বসানো হয়ে ওঠেনি । এখন কেন্দ্র-রাজ্য-ঠিকাদার বচসা চলতেই পারে, কিন্তু তাতে যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, প্রাণবায়ুর হাহাকারে যাঁরা মারা গিয়েছেন... সেই ক্ষতির অপূরণীয় ।
একটা সময় দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ 4 লাখের উপর দিয়ে যাচ্ছিল । শ্মশানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না । কবর দেওয়ার জায়গা হচ্ছিল না । গঙ্গার ধারে বালিতে লাশ চাপা দেওয়া হচ্ছিল । গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল লাশ । করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও বেশ কয়েকবার গরমিলের অভিযোগ উঠেছে ।
হর্ষ বর্ধনের সরে দাঁড়ানো নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছে কংগ্রেস শিবির । কেন্দ্রের এই ধরনের সিদ্ধান্ত আসলে করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরছে বলে মনে করছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম ।
তবে হর্ষ বর্ধনকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে । নতুন যিনি দায়িত্ব নেবেন, তিনি এই করোনা পরিস্থিতি কতটা সামাল দিতে পারবেন, তা নিয়েও একটা প্রশ্ন থাকছে ।