প্রয়াগরাজ, 16 ফেব্রুয়ারি: জনপ্রিয়তা অর্জন করতেই খুন করেছে তারা ৷ শনিবার গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরফ আহমেদকে গুলি করে খুন করে আততায়ীরা ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত 3 জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তাদের নাম লাভলেশ তিওয়ারি, সানি সিং এবং অরুণ মৌর্য ৷ শনিবারের খুনের ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে 144 ধারা জারি করা হয়েছে ৷ ঘন ঘন পুলিশি টহলদারি চলছে ৷
রবিবার পুলিশের কাছে জেরায় তারা স্বীকার করেছে, আতিক-আশরফের দলকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল লাভলেশ-সানি-অরুণ ৷ সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এফআইআরে ধৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, "আমরা আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আসরফকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম ৷ আতিক-আশরফ গ্যাংকে মিটিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ৷ আর আমাদের নিজেদের নাম উজ্জ্বল করার ইচ্ছে ছিল ৷"
এফআইআরে আরও জানানো হয়েছে, "আতিক এবং আশরফকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ৷ এটা যে মুহূর্তে জানতে পেরেছিলাম, তারপর থেকে তাদের খুনের ছক কষছিলাম ৷ আমরা স্থানীয় সাংবাদিক সেজে ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়েছিলাম ৷' শনিবার রাতে সেভাবেই সাংবাদিক সেজে তারা অপেক্ষা করছিল আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফ আহমেদের জন্য ৷
গ্যাংস্টার হলেও আতিক আহমেদের একটি দীর্ঘ বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনও ছিল ৷ তিনি পশ্চিম এলাহাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে 5 বার বিধায়ক হয়েছে ৷ সমাজবাদী পার্টি টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদও হয়েছে ৷ লোকসভা নির্বাচনে লড়ার নেওয়ার জন্য সে তার বিধানসভা কেন্দ্রটি ছেড়ে দেয় ৷ সেখানে প্রার্থী হয় তার ভাই আশরফ ৷ এদিকে তার প্রতিপক্ষ ছিল বহুজন সমাজ পার্টি বা বিএসপি-র প্রার্থী রাজু পাল ৷ ভোটে তাঁর কাছে পরাজিত হয় আশরফ ৷
এই হার কোনও ভাবে মেনে নিতে পারেনি আতিক আহমেদ ৷ 2005 সালের 25 ফেব্রুয়ারি খুন হয় রাজু পাল ৷ তার স্ত্রী পুলিশের কাছে আতিক ও তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ৷ এরপরও ওই এলাহাবাদ পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয় রাজু পালের স্ত্রী এবং তার প্রতিপক্ষ ফের আশরফ ৷ কিন্তু এবার আশরফ জয়ী হয় ৷ কিন্তু মামলাটি এখানেই থেমে থাকেনি ৷
এমনিতেই আতিক আহমেদের অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে চলছিল ৷ এসপি-র প্রধান অখিলেশ যাদব তার থেকে দূরত্ব তৈর করতে শুরু করে ৷ অন্য একটি মামলায় কারাবাস হয় আতিকের ৷ সম্প্রতি 24 ফেব্রুয়ারি খুন নয় রাজু পালের আইনজীবী উমেশ পাল ৷ সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায় ৷ জানা যায়, আতিকই তার ছোট ছেলে আসাদকে দিয়ে উমেশকে খুন করিয়েছে ৷ এরপর আতিককে সবরমতী জেল থেকে উত্তরপ্রদেশের নাইনি সেন্ট্রাল জেলে আনা হয় ৷
13 এপ্রিল পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় আসাদের ৷ তখন আতিক আদালতকক্ষে ৷ সেদিনই তাকে আদালত 17 এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় ৷ রাতভর তাকে ধুমনগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয় ৷ এরপর শনিবার রাতে তাকে প্রয়াগরাজে একটি হাসপাতালে আনা হচ্ছিল স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ৷ সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল আতিক ৷ আচমকা তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চলল ৷ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে গেল আতিক এবং তারপরই আশরফেরও গুলি লাগে ৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই গ্যাংস্টার ভাইয়ের ৷
আরও পড়ুন: পাঁচ বারের বিধায়ক, জেল থেকে লড়াই মোদির বিরুদ্ধে ; আতিকের রাজনৈতিক জীবনও নাটকীয়