ETV Bharat / bharat

মস্তিষ্কে আঘাত কীভাবে বোঝা সম্ভব? - ব্রেন স্ট্রোকের উপসর্গ

মুখ, বাহু ও পায়ে দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে ? কিংবা চোখে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে ? এই উপসর্গগুলি কিন্তু ব্রেন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে । এছাড়া আর কী কী উপসর্গ থাকে এবং উপসর্গগুলি দেখা দিলে কী পদক্ষেপ নেবেন সেই বিষয়ে জানতে ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলল চিকিৎসক অ্যান্টোনিও ফিগুইয়ের্দোর সঙ্গে ।

Brain Injuries
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Feb 17, 2021, 11:35 AM IST

মিস্টার টমাস কাজ থেকে ফিরছিলেন । হঠাৎই কেমন যেন দিশাহারা বোধ হল তাঁর । রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে দিলেন । কিছুক্ষণ পর নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন । বাড়ি পৌঁছানোর এক ঘণ্টা পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্য করলেন, তিনি ক্রমাগত তাঁর ডান পা নড়িয়ে যাচ্ছেন । তারপর ভারসাম্য হারাতে শুরু করলেন যখন, তখন তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করে দিলেন ।

হাসপাতালে ভরতির কয়েক মিনিটের মধ্যে বিস্তারিত নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হল এবং চিকিৎসা শুরু হল । পাঁচ দিন পর মিস্টার টমাস একেবারে সুস্থ । তাহলে ঠিক কী হয়েছিল তার? এ নিয়ে ইটিভি ভারত সুখীভব, গোয়ার মারগাওয়ের ভিক্টর হাসপাতালের চিকিৎসক, এমবিবিএস, ডিএনবি, নিউরোসার্জারি, ডা. অ্যান্টোনিও ফিগুইয়ের্দোর সঙ্গে কথা বলেছে ।

ব্রেন তথা মস্তিষ্ক আমাদের অস্তিত্ত্বরক্ষার জন্য অপরিহার্যএবং মানব মস্তিষ্ককে একাধিক কার্যকলাপ যেমন চেতনা, ভারসাম্য রক্ষা, গতিবিধি, সমন্বয়সাধন প্রভৃতি করতে হয় । তাই মস্তিষ্কে কোনওভাবে আঘাত লাগলে তার থেকে সেই অংশে অক্ষমতা তৈরি হতে পারে এবং এর ফলে রোগীর জীবনের উপর আর তার চারপাশে যারা আছে, তাদের উপর এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে । এই সময় দ্রুত চিকিৎসাজনিত পদক্ষেপ করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব ।

ব্রেন ইনজুরি তথা মস্তিষ্ক আঘাতের ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী প্রকারভেদ আছে?

ব্রেন ইনজুরি ট্রম্যাটিক (কোনও আঘাতের ফলে সৃষ্ট) এবং নন-ট্রম্যাটিক (অতীতে আঘাতের কোনও ইতিহাস নেই) হতে পারে । ট্র‌ম্যাটিক ব্রেন ইনজুরির আওতায় নানা ধরনের ইনট্রা সেরিব্রাল ব্লিডস (মস্তিষ্কের ভিতরে এবং তার আবরণীর ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়) এবং মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয় । মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়া বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া নন-ট্রম্যাটিক ব্রেন ইনজুরির কারণ হতে পারে ।

ব্রেন ইনজুরির সাধারণ দশা কী কী এবং কীভাবে আমরা তা লক্ষ্য করতে পারি?

স্ট্রোক হলে তার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি থাকে

  • মুখ, বাহু ও পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয় (মূলত দেহের একটি পাশে), কোনও জিনিসের ‘গ্রিপ’ হারানো মানে শক্ত করে ধরতে না পারা, কিছু কিছু অঙ্গ সঞ্চালন করতে না পারা ।
  • বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া, কারও বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, মাথাব্যথা ।
  • এক চোখে বা দু’চোখেই দেখতে অসুবিধা হওয়া ।
  • বমিভাব, গিলতে অসুবিধা হওয়া, কণ্ঠস্বরের আকস্মিক পরিবর্তন ।
  • বুঝতে, চিন্তা করতে, চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হতে অসুবিধা হওয়া ।
  • মলমূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ।

কখন চিকিৎসক দেখানো প্রয়োজন?

যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলির মধ্যে যেকোনও একটি লক্ষ্য করেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিউরোলজিস্টের দ্বারস্থ হন । তবে এমনও উদাহরণ রয়েছে, যেখানে রোগী এমন কোনও উপসর্গই সারাক্ষণ ধরে অনুভব করে না কিন্তু দফায় দফায় করে । পর্যায়ক্রমে এই ধরনের উপসর্গ লক্ষিত হলে তা স্ট্রোকের দিকে এগোয় ।

আরও পড়ুন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকাকরণ

স্ট্রোক আসতে চলেছে, আগে থেকে বুঝবেন কীভাবে?

  • রোগীর নিজের থেকে তার স্বাস্থ্যের এবং তার চারপাশে থাকা মানুষদের কাছ থেকে তার স্বাস্থ্যের বিস্তারিত ইতিহাস জানা থাকলে তা পরবর্তী চিকিৎসার ধাপ গঠনে সাহায্য করবে ।
  • জানতে হবে কখন হল, পড়ে গিয়ে আঘাত লাগল বা শরীরের কোনও অংশে ট্রমা তৈরি হল?
  • শরীরের কোন অংশে আঘাত লাগল?
  • পরপর কী কী হল?
  • ঠিক কোন অংশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল?
  • উপসর্গগুলি স্থায়ী হল কি না?

গোল্ডেন আওয়ারে কীভাবে স্ট্রোক ম্যানেজ করা যাবে?

এই বিষয়টি নির্ভর করে কারণের উপর । তাছাড়াও স্ট্রোকের চিকিৎসা শুরু করার আগে অত্যন্ত জরুরি হল সিটি স্ক্যান করা বা মস্তিষ্কের এমআরআই করা যাতে ব্লিড এবং ইনফার্কটের মধ্যে তফাৎ নির্ধারণ করা যায় ।

যদি এটা ইনফার্কট (একটি ছোটো অংশ, যেখান থেকে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে) হয়, কোনও মেন ভেসেল বা প্রধান রক্তজালিকায় ব্লকেজ তৈরি হওয়ার ফলে রোগীকে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে যাতে রক্তজালিকা পুনরায় খুলে দেওয়া যায় (থ্রম্বোলিসিস) । তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি পেরোতে হবে । যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে রোগীর সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার দরকার হতে পারে । তারপর প্রক্রিয়া মেনে চিকিৎসা চলবে ।

রক্তক্ষরণের কারণ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে বা রক্তজালিকায় কোনও বিপত্তি হতে পারে (একে অ্যানিউরিসিয়াম বলা হয়) । তাছাড়াও শিরা এবং ধমনীর অপুষ্টিও হতে পারে । এর জন্য অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে ।

আরও পড়ুন : 1921 সালের হিউস্টন সফরের শতবর্ষ পালন, রবীন্দ্র আলোয় ভাসল অ্যামেরিকা

ব্রেন ইনজুরি নিয়ন্ত্রণ করতে কোন ধরনের চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন?

খাদ্যাভ্যাস সঠিক রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে, রক্তচাপের সমস্যা-ডায়াবিটিস-কোলেস্টরলের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । ধূমপান এড়ানোও স্ট্রোক প্রতিহত করার জন্য খুব দরকারি ।

আরও তথ্য পেতে প্রশ্ন ইমেল antonio15sept@gmail.com

মিস্টার টমাস কাজ থেকে ফিরছিলেন । হঠাৎই কেমন যেন দিশাহারা বোধ হল তাঁর । রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে দিলেন । কিছুক্ষণ পর নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরলেন । বাড়ি পৌঁছানোর এক ঘণ্টা পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্য করলেন, তিনি ক্রমাগত তাঁর ডান পা নড়িয়ে যাচ্ছেন । তারপর ভারসাম্য হারাতে শুরু করলেন যখন, তখন তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করে দিলেন ।

হাসপাতালে ভরতির কয়েক মিনিটের মধ্যে বিস্তারিত নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হল এবং চিকিৎসা শুরু হল । পাঁচ দিন পর মিস্টার টমাস একেবারে সুস্থ । তাহলে ঠিক কী হয়েছিল তার? এ নিয়ে ইটিভি ভারত সুখীভব, গোয়ার মারগাওয়ের ভিক্টর হাসপাতালের চিকিৎসক, এমবিবিএস, ডিএনবি, নিউরোসার্জারি, ডা. অ্যান্টোনিও ফিগুইয়ের্দোর সঙ্গে কথা বলেছে ।

ব্রেন তথা মস্তিষ্ক আমাদের অস্তিত্ত্বরক্ষার জন্য অপরিহার্যএবং মানব মস্তিষ্ককে একাধিক কার্যকলাপ যেমন চেতনা, ভারসাম্য রক্ষা, গতিবিধি, সমন্বয়সাধন প্রভৃতি করতে হয় । তাই মস্তিষ্কে কোনওভাবে আঘাত লাগলে তার থেকে সেই অংশে অক্ষমতা তৈরি হতে পারে এবং এর ফলে রোগীর জীবনের উপর আর তার চারপাশে যারা আছে, তাদের উপর এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে । এই সময় দ্রুত চিকিৎসাজনিত পদক্ষেপ করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব ।

ব্রেন ইনজুরি তথা মস্তিষ্ক আঘাতের ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী প্রকারভেদ আছে?

ব্রেন ইনজুরি ট্রম্যাটিক (কোনও আঘাতের ফলে সৃষ্ট) এবং নন-ট্রম্যাটিক (অতীতে আঘাতের কোনও ইতিহাস নেই) হতে পারে । ট্র‌ম্যাটিক ব্রেন ইনজুরির আওতায় নানা ধরনের ইনট্রা সেরিব্রাল ব্লিডস (মস্তিষ্কের ভিতরে এবং তার আবরণীর ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়) এবং মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয় । মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়া বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া নন-ট্রম্যাটিক ব্রেন ইনজুরির কারণ হতে পারে ।

ব্রেন ইনজুরির সাধারণ দশা কী কী এবং কীভাবে আমরা তা লক্ষ্য করতে পারি?

স্ট্রোক হলে তার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি থাকে

  • মুখ, বাহু ও পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয় (মূলত দেহের একটি পাশে), কোনও জিনিসের ‘গ্রিপ’ হারানো মানে শক্ত করে ধরতে না পারা, কিছু কিছু অঙ্গ সঞ্চালন করতে না পারা ।
  • বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া, কারও বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, মাথাব্যথা ।
  • এক চোখে বা দু’চোখেই দেখতে অসুবিধা হওয়া ।
  • বমিভাব, গিলতে অসুবিধা হওয়া, কণ্ঠস্বরের আকস্মিক পরিবর্তন ।
  • বুঝতে, চিন্তা করতে, চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হতে অসুবিধা হওয়া ।
  • মলমূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ।

কখন চিকিৎসক দেখানো প্রয়োজন?

যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলির মধ্যে যেকোনও একটি লক্ষ্য করেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব নিউরোলজিস্টের দ্বারস্থ হন । তবে এমনও উদাহরণ রয়েছে, যেখানে রোগী এমন কোনও উপসর্গই সারাক্ষণ ধরে অনুভব করে না কিন্তু দফায় দফায় করে । পর্যায়ক্রমে এই ধরনের উপসর্গ লক্ষিত হলে তা স্ট্রোকের দিকে এগোয় ।

আরও পড়ুন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকাকরণ

স্ট্রোক আসতে চলেছে, আগে থেকে বুঝবেন কীভাবে?

  • রোগীর নিজের থেকে তার স্বাস্থ্যের এবং তার চারপাশে থাকা মানুষদের কাছ থেকে তার স্বাস্থ্যের বিস্তারিত ইতিহাস জানা থাকলে তা পরবর্তী চিকিৎসার ধাপ গঠনে সাহায্য করবে ।
  • জানতে হবে কখন হল, পড়ে গিয়ে আঘাত লাগল বা শরীরের কোনও অংশে ট্রমা তৈরি হল?
  • শরীরের কোন অংশে আঘাত লাগল?
  • পরপর কী কী হল?
  • ঠিক কোন অংশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল?
  • উপসর্গগুলি স্থায়ী হল কি না?

গোল্ডেন আওয়ারে কীভাবে স্ট্রোক ম্যানেজ করা যাবে?

এই বিষয়টি নির্ভর করে কারণের উপর । তাছাড়াও স্ট্রোকের চিকিৎসা শুরু করার আগে অত্যন্ত জরুরি হল সিটি স্ক্যান করা বা মস্তিষ্কের এমআরআই করা যাতে ব্লিড এবং ইনফার্কটের মধ্যে তফাৎ নির্ধারণ করা যায় ।

যদি এটা ইনফার্কট (একটি ছোটো অংশ, যেখান থেকে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে) হয়, কোনও মেন ভেসেল বা প্রধান রক্তজালিকায় ব্লকেজ তৈরি হওয়ার ফলে রোগীকে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে যাতে রক্তজালিকা পুনরায় খুলে দেওয়া যায় (থ্রম্বোলিসিস) । তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠি পেরোতে হবে । যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে রোগীর সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার দরকার হতে পারে । তারপর প্রক্রিয়া মেনে চিকিৎসা চলবে ।

রক্তক্ষরণের কারণ উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে বা রক্তজালিকায় কোনও বিপত্তি হতে পারে (একে অ্যানিউরিসিয়াম বলা হয়) । তাছাড়াও শিরা এবং ধমনীর অপুষ্টিও হতে পারে । এর জন্য অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে ।

আরও পড়ুন : 1921 সালের হিউস্টন সফরের শতবর্ষ পালন, রবীন্দ্র আলোয় ভাসল অ্যামেরিকা

ব্রেন ইনজুরি নিয়ন্ত্রণ করতে কোন ধরনের চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন?

খাদ্যাভ্যাস সঠিক রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে, রক্তচাপের সমস্যা-ডায়াবিটিস-কোলেস্টরলের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । ধূমপান এড়ানোও স্ট্রোক প্রতিহত করার জন্য খুব দরকারি ।

আরও তথ্য পেতে প্রশ্ন ইমেল antonio15sept@gmail.com

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.