নয়াদিল্লি, 29 জুন: মণিপুরে বিষ্ণুপুরের কাছে রাহুল গান্ধির কনভয়কে পুলিশের থামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বৈরাচারী পদ্ধতি ব্যবহার করে, জাতিহিংসার শিকার যাঁরা তাঁদের প্রতি রাহুলের সহানুভূতি প্রকাশের চেষ্টাকে বন্ধ করেছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের । কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না এবং এই পদক্ষেপ সমস্ত সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে ছিন্ন করে দেয় ৷
ত্রাণশিবির পরিদর্শন করতে চুরাচাঁদপুর যাওয়ার পথে রাহুল গান্ধিকে আটকায় পুলিশ ৷ পুলিশের যুক্তি ছিল, হিংসার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে এটা তাদের আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ।
এই নিয়ে একটি টুইট বার্তায়, খাড়গে বলেন, "মণিপুরে গান্ধির কনভয়কে বিষ্ণুপুরের কাছে পুলিশ থামিয়ে দিয়েছে । তিনি সেখানে ত্রাণশিবিরে ভুক্তভোগী মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে এবং সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত রাজ্যকে নিরাময়ের স্পর্শ দিতে গিয়েছিলেন । প্রধানমন্ত্রী মোদি মণিপুর নিয়ে তাঁর নীরবতা ভাঙার কথা ভাবেনওনি ৷ এখন, তাঁর ডাবল ইঞ্জিনের বিপর্যয়কর সরকারগুলি রাহুল গান্ধির সহানুভূতিশীল প্রচেষ্টাকে থামাতে স্বৈরাচারী পদ্ধতি ব্যবহার করছে । এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং সমস্ত সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক নিয়মকে ভেঙে দেয় । মণিপুরে সংঘর্ষের নয়, শান্তির প্রয়োজন ৷"
রাহুল গান্ধির সঙ্গে মণিপুর সফরে যাওয়া কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল বলেন, "প্রাথমিকভাবে আমাদের অনুমতি দেওয়ার পরে, রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে আমাদের কনভয়কে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিষ্ণুপুরের কাছে আটকে দেওয়া হয় । এই ধরনের পদক্ষেপগুলি দুর্ভাগ্যজনক এবং গণতন্ত্রে এর কোনও স্থান নেই ৷ যখন মণিপুরের ক্ষতিগ্রস্তরা ভুগছেন, রাহুলজি তখন শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে মণিপুরে রয়েছেন ৷" বেণুগোপাল টুইটারে আরও বলেন, "আরও ক্ষোভের নয়, মণিপুরের আজ নিরাময়ের স্পর্শ প্রয়োজন ৷ মণিপুর জুড়ে সফর করা, যাঁরা এত ভুগেছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ৷"
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরাও বলেছেন যে, "দেশে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের জন্য প্রচেষ্টা করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের কর্তব্য ।" রাহুল গান্ধিজি মণিপুরের মানুষের কষ্ট ভাগ করে নিতে এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে গিয়েছেন বলে জানান তিনি । বিজেপি সরকার কেন রাহুল গান্ধিকে থামাতে চায়, এই প্রশ্ন তোলেন প্রিয়াঙ্কা ৷
রাহুল গান্ধি উত্তর-পূর্বের রাজ্যে দু'দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ইম্ফলে গিয়েছেন । পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুর জেলার উটলু গ্রামের কাছে হাইওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং কয়েকটি কনভয় লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে । ইম্ফলে এক পুলিশ আধিকারিক বলেছেন, "আমরা এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছি এবং তাই সতর্কতা হিসেবে কনভয়কে বিষ্ণুপুরে থামতে অনুরোধ করেছি ।"
কংগ্রেস তার টুইটার হ্যান্ডেলে বলেছে, রাহুল গান্ধি শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা দিতে মণিপুরে পৌঁছেছেন । সরকার কেন ভয় পেয়েছে ? কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, গত দুই মাস ধরে মণিপুর জ্বলছে এবং সেখানে আইনের শাসন নেই । তাঁর কথায়, "এখানে এতটাই অসহায়ত্ব যে শান্তির কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না । মোদিজি নীরব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে ফেলেছেন । মনে হচ্ছে মণিপুর বিজেপি সরকারের জন্য ভারতের মানচিত্রেও নেই । এমন পরিস্থিতিতে, রাহুল গান্ধি যখন ক্ষত সারাতে 'ত্রাণ সৈনিক' হিসাবে মণিপুরে পৌঁছলেন, তখন তাঁকে থামানো হল ৷"