হায়দরাবাদ, 12 জানুয়ারি : এটা কি ওমিক্রন ঢেউ ? কোভিড-19 সংক্রামিত হয়েছে কি না, তা আরটিপিসিআর বা আএটি পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই জানা যায় ৷ কিন্তু সার্স-কোভ-2-এর ঠিক কোন ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত হয়েছেন রোগী, তা নিশ্চিত করতে গেলে জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে ৷ জিআইএসএআইডি জিনোমিক সার্ভেলেন্সে দেখিয়েছে, ভারতে ডিসেম্বরে যত সংখ্যক নমুনার সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তার মধ্যে 30% ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টের ৷
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সংক্রামিতদের মধ্যে বেশির ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে ৷ কিন্তু তা নিশ্চিত করা বাকি রয়েছে ৷ অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গৌতম আই মেনন বললেন, "বর্তমানে আমরা দৈনিক সংক্রমণের খুব কম সংখ্যক সিকোয়েন্স করতে পারছি ৷ তাই প্রশ্নটা হল, এদের মধ্যে সিকোয়েন্স করা নমুনার কত শতাংশ ওমিক্রনের ? বেশির ভাগ সিকোয়েন্সর ফল ওমিক্রন, তাই আমরা ওমিক্রন ঢেউয়ে রয়েছি ৷"
দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন এবং আমেরিকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যার সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি এবং প্রতিরোধক ক্ষমতাকে সহজেই পরাস্ত করতে পারে, সেই ভ্যারিয়্যান্ট তার আগের ভ্যারিয়্যান্টকে হটিয়ে জায়গা করে নেয় ৷ কোচির ডিভিশন অফ ইনফেকশাস ডিজিজেস অমৃতা হসপিটালের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ডঃ দীপু টি এস বললেন, "ঠিক এটাই হচ্ছে ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও, এখন আমেরিকা আর ব্রিটেনে 90%-এরও বেশি সংখ্যক মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ৷ ভারতেও খুব শিগগিরি তেমনটা হবে ৷" তিনি আরও জানান, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ডেল্টা দুর্বল হয়ে গিয়েছে ৷ বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিবর্তিত ভ্যারিয়্যান্টকে জায়গা করে দিয়েছে ডেল্টা ৷
আরও পড়ুন : WHO on Booster dose : বর্তমান টিকাগুলির বুস্টার ডোজ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সেভাবে কার্যকরী নয়, জানাল হু
যদিও মেনন এই তত্ত্ব মানতে রাজি নন ৷ তাঁর কথায়, "ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমণ ক্ষমতার অধিকারী, তাই সংক্রমণ ছড়ানোর সময় ডেল্টাকে সরিয়ে দিয়েছে ৷ ডেল্টার প্রভাব কমে আসছিল, তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় ৷"
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে ৷ অন্য দেশগুলিতে বারে বারে সংক্রমণের খবর সামনে আসছে ৷ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ফের সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি ওমিক্রনের অনেক বেশি, ডেল্টার তুলনায় 5.4 গুণ ৷
এত তাড়াতাড়ি বলা যাবে না, একজন ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত সুস্থ হওয়ার পর ফের ওমিক্রনে সংক্রামিত হয়েছেন, জানালেন ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের এক্সপেরিমেন্টাল ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিংগস্টন মিলস ৷ ছ'মাসের মধ্যে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে ৷ ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্ট আগের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় ৷ ভ্যাকসিন হাসপাতালে যাওয়া আটকাতে পারে, কোভিডে মৃত্যু রুখতে পারে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করা থেকে রেহাই দিতে পারে না ৷
মেনন বলেন, "সৌভাগ্য যে এই ঢেউয়ের তীব্রতা আগের তুলনায় কম ৷ বিশেষত বহু সংখ্যক মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন আর অনেক মানুষ এর আগে ডেল্টা ঢেউয়ে সংক্রামিত হয়েছেন ৷ কিন্তু সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়লে, বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় কী ভাবে তা সামলে ওঠা যাবে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয় ৷"
আরও পড়ুন : Corona Update in India : দেশে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা, এক লাফে সংক্রমণ বাড়ল 15.8 শতাংশ
কানপুরের আইআইটি সহ বহু পরিসংখ্য়ানমূলক গবেষণা জানাচ্ছে, ভারতে জানুয়ারির শেষ নাগাদ কোভিড সংক্রমণ শিখর ছোঁবে ৷ এ প্রসঙ্গে মেনন বলেন, "20 জানুয়ারি থেকে 10 ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেট্রো শহরগুলিতে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছবে, আমরা এটা বিশ্বাস করি ৷ বাকি দেশে এর পর বাড়বে ৷ মার্চেও যথেষ্ট সংক্রমণ থাকবে বলে মনে হয় না ৷ তার মানে এই ঢেউ শেষ হল ৷ কিন্তু আমাদের অবাক করতে আরও অনেক কিছু জমা রয়েছে ৷"