ETV Bharat / bharat

Independence Special : বার্মার ব্রিটিশ কারাগারে একাকী মৃত্যুবরণ শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের

দেশে স্বাধীনতার 75তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে ৷ ইটিভি ভারত একটি বিশেষ সিরিজে সেইসব ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং ব্যক্তিত্ব, যাঁরা ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের স্মৃতিচারণ করা হচ্ছে ৷ এই সিরিজে, আমরা শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের জীবনের কথা শুনব ৷

বাহাদুর শাহ জাফর
বাহাদুর শাহ জাফর
author img

By

Published : Sep 12, 2021, 2:54 PM IST

নয়াদিল্লি, 12 সেপ্টেম্বর : শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর (Bahadur Shah Zafar) 1857 সালে দেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ৷ বার্মায় ব্রিটিশদের কারাগারে একাকী মৃত্যু বরণ করেন ৷ ব্রিটিশরা তাঁকে গোপনে সমাধিস্থ করে ৷ তাঁর সমাধিতে কোনও ফলক পর্যন্ত রাখা হয়নি ৷ ভারতের স্বাধীনতার 75তম বর্ষে তাঁর স্মৃতিচারণে ইটিভি ভারত ৷

দ্বিতীয় আকবর শাহ এবং লালাবাইয়ের পুত্র বাহাদুর শাহ জাফর জন্মগ্রহণ করেন 1775 সালের 24 অক্টোবর ৷ দ্বিতীয় আকবর শাহের মৃত্যুর পর 1837 সালের 18 সেপ্টেম্বর সিংহাসনে বসেন সম্রাট জাফর ৷ তিনি ছিলেন দেশের একজন নামমাত্র শাসক ৷ তাঁর স্বাধীনতা তৃষ্ণা ছিল গভীর ৷ ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি হয়তো জীবনের বাকি সময়টা বিলাস-ব্যসনের মধ্যে কাটিয়ে দিতে পারতেন ৷ শুধু তাই নয়, দেশে মুঘলদের উপস্থিতিও দীর্ঘায়িত করতে পারতেন ৷ তা না করে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ৷ 1857 সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যাওয়া বিদ্রোহী সেনার নেতৃত্ব যখন তিনি গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স 82 বছর ৷

মিরাটের সৈন্যরা তাঁকে বিদ্রোহের পর নিজেদের নেতা হিসাবে বেছে নেন ৷ ব্রিটিশদের কূটনীতির কারণে সেই বিদ্রোহ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছিল । জাফরকে হুমায়ুনের সমাধিতে লুকিয়ে থাকতে হয় ৷ সেখান থেকে ব্রিটিশ অফিসার উইলিয়াম হাডসন ষড়যন্ত্র করে তাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন । বৃদ্ধ সম্রাটের বিদ্রোহে ভয় পেয়েছিল ব্রিটিশরা ৷ তাঁর ছেলেকে খুন করে তাঁকে তৎকালীন বার্মা, অধুনা মায়ানমারে নির্বাসিত করে তারা ৷ শেষ জীবন তাঁর কেটেছে গভীর অন্ধকারে ৷ কারাগারে তাঁর কক্ষে প্রদীপের আলোটুকু ছিল না ৷ নির্বাসনে থাকার সময় তাঁর মনের ভাব প্রকাশে একমাত্র পথ ছিল কবিতা ৷ কিন্তু ব্রিটিশরা তাঁক কারাগারে কাগজ-কলম এবং আলো পর্যন্ত দেয়নি ৷ তাই বাহাদুর শাহ দেওয়ালে ইট দিয়ে গজ়ল লিখেছেন ৷

জাফরের বিরুদ্ধে ব্রিটিশরা রাষ্ট্রদ্রোহ এবং হত্যার অভিযোগ আনে ৷ মিথ্যা সেই বিচার প্রক্রিয়া চলে 40 দিন ধরে, 1858 সালের 27 জানুয়ারি থেকে 9 মার্চ পর্যন্ত ৷ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয় । ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রিটিশরা আশঙ্কা করেছিল যে বাহাদুর শাহ জাফর দেশে ফের বিদ্রোহের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেন তাই তাঁকে নির্বাসিত করা হয় ৷

শেষ মুঘল সম্রাট ভগ্নহৃদয়, দারিদ্র এবং মানসিক অত্যাচারের মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷ তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, যেন তাঁকে দিল্লিতে কবর দেওয়া হয় ৷ তাও রাখা হয়নি ৷ দেশকে গভীর ভাবে ভাল বেসেছিলেন তিনি ৷ তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁকে যেন মেহেরৌলির জ়াফর মহলে সমাধিস্থ করা হয় ৷ 1862 সালের 7 নভেম্বর রেঙ্গুনের কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল, যদি তাঁর মৃত্যুসংবাদ ভারতে জানাজানি হয়, তাহলে আরও একবার বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে ৷ তাই গোপনে তাঁর শেষকৃত্য সারা হয় ৷ 1907 সালে তাঁর সমাধি চিহ্নিত করা হয় এবং তাতে একটি শিলালিপি রাখা হয় ৷ কিন্তু 1991 সালে খননের সময় দেখা যায় যে প্রকৃত কবরটি এই স্থান থেকে 25 ফুট দূরে ছিল । এখন মানুষের কাছে এটি জাফরের দরগাহ বলে পরিচিত ৷ মায়ানমারে সম্রাট জাফরের সম্পর্কিত স্থানগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে বাহাদুর শাহ জাদুঘর কমিটি ।

তৎকালীন বার্মা, অধুনা মায়ানমারে নির্বাসিত হন বাহাদুর শাহ জাফর

এখন বাহাদুর শাহ জাফরের নামে দিল্লিতে বহু রাস্তা, উদ্যানের নামকরণ হয়েছে ৷ পাকিস্তানের লাহৌরেও তাঁর নামে একটি রাস্তা রয়েছে ৷ বাংলাদেশ ঢাকায় ভিক্টোরিয়া পার্কের নাম বদলে তার নাম রেখেছে বাহাদুর শাহ জাফর পার্ক ৷ ‘দ্য লাস্ট মুঘল’-এর লেখক বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিমপলের (William Dalrymple) ভাষায়, "জাফর ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ । একজন ক্যালিওগ্রাফার, উল্লেখযোগ্য কবি, সুফি পীর এবং একজন মানুষ যিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন । তিনি একজন বীর বিপ্লবী নেতা অনেকটা তাঁর পূর্বপুরুষ সম্রাট আকবরের মতোই ৷"

আরও পড়ুন : Independence Special : জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি

নয়াদিল্লি, 12 সেপ্টেম্বর : শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর (Bahadur Shah Zafar) 1857 সালে দেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ৷ বার্মায় ব্রিটিশদের কারাগারে একাকী মৃত্যু বরণ করেন ৷ ব্রিটিশরা তাঁকে গোপনে সমাধিস্থ করে ৷ তাঁর সমাধিতে কোনও ফলক পর্যন্ত রাখা হয়নি ৷ ভারতের স্বাধীনতার 75তম বর্ষে তাঁর স্মৃতিচারণে ইটিভি ভারত ৷

দ্বিতীয় আকবর শাহ এবং লালাবাইয়ের পুত্র বাহাদুর শাহ জাফর জন্মগ্রহণ করেন 1775 সালের 24 অক্টোবর ৷ দ্বিতীয় আকবর শাহের মৃত্যুর পর 1837 সালের 18 সেপ্টেম্বর সিংহাসনে বসেন সম্রাট জাফর ৷ তিনি ছিলেন দেশের একজন নামমাত্র শাসক ৷ তাঁর স্বাধীনতা তৃষ্ণা ছিল গভীর ৷ ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি হয়তো জীবনের বাকি সময়টা বিলাস-ব্যসনের মধ্যে কাটিয়ে দিতে পারতেন ৷ শুধু তাই নয়, দেশে মুঘলদের উপস্থিতিও দীর্ঘায়িত করতে পারতেন ৷ তা না করে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ৷ 1857 সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যাওয়া বিদ্রোহী সেনার নেতৃত্ব যখন তিনি গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স 82 বছর ৷

মিরাটের সৈন্যরা তাঁকে বিদ্রোহের পর নিজেদের নেতা হিসাবে বেছে নেন ৷ ব্রিটিশদের কূটনীতির কারণে সেই বিদ্রোহ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছিল । জাফরকে হুমায়ুনের সমাধিতে লুকিয়ে থাকতে হয় ৷ সেখান থেকে ব্রিটিশ অফিসার উইলিয়াম হাডসন ষড়যন্ত্র করে তাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন । বৃদ্ধ সম্রাটের বিদ্রোহে ভয় পেয়েছিল ব্রিটিশরা ৷ তাঁর ছেলেকে খুন করে তাঁকে তৎকালীন বার্মা, অধুনা মায়ানমারে নির্বাসিত করে তারা ৷ শেষ জীবন তাঁর কেটেছে গভীর অন্ধকারে ৷ কারাগারে তাঁর কক্ষে প্রদীপের আলোটুকু ছিল না ৷ নির্বাসনে থাকার সময় তাঁর মনের ভাব প্রকাশে একমাত্র পথ ছিল কবিতা ৷ কিন্তু ব্রিটিশরা তাঁক কারাগারে কাগজ-কলম এবং আলো পর্যন্ত দেয়নি ৷ তাই বাহাদুর শাহ দেওয়ালে ইট দিয়ে গজ়ল লিখেছেন ৷

জাফরের বিরুদ্ধে ব্রিটিশরা রাষ্ট্রদ্রোহ এবং হত্যার অভিযোগ আনে ৷ মিথ্যা সেই বিচার প্রক্রিয়া চলে 40 দিন ধরে, 1858 সালের 27 জানুয়ারি থেকে 9 মার্চ পর্যন্ত ৷ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয় । ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রিটিশরা আশঙ্কা করেছিল যে বাহাদুর শাহ জাফর দেশে ফের বিদ্রোহের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেন তাই তাঁকে নির্বাসিত করা হয় ৷

শেষ মুঘল সম্রাট ভগ্নহৃদয়, দারিদ্র এবং মানসিক অত্যাচারের মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷ তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, যেন তাঁকে দিল্লিতে কবর দেওয়া হয় ৷ তাও রাখা হয়নি ৷ দেশকে গভীর ভাবে ভাল বেসেছিলেন তিনি ৷ তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁকে যেন মেহেরৌলির জ়াফর মহলে সমাধিস্থ করা হয় ৷ 1862 সালের 7 নভেম্বর রেঙ্গুনের কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল, যদি তাঁর মৃত্যুসংবাদ ভারতে জানাজানি হয়, তাহলে আরও একবার বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে ৷ তাই গোপনে তাঁর শেষকৃত্য সারা হয় ৷ 1907 সালে তাঁর সমাধি চিহ্নিত করা হয় এবং তাতে একটি শিলালিপি রাখা হয় ৷ কিন্তু 1991 সালে খননের সময় দেখা যায় যে প্রকৃত কবরটি এই স্থান থেকে 25 ফুট দূরে ছিল । এখন মানুষের কাছে এটি জাফরের দরগাহ বলে পরিচিত ৷ মায়ানমারে সম্রাট জাফরের সম্পর্কিত স্থানগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে বাহাদুর শাহ জাদুঘর কমিটি ।

তৎকালীন বার্মা, অধুনা মায়ানমারে নির্বাসিত হন বাহাদুর শাহ জাফর

এখন বাহাদুর শাহ জাফরের নামে দিল্লিতে বহু রাস্তা, উদ্যানের নামকরণ হয়েছে ৷ পাকিস্তানের লাহৌরেও তাঁর নামে একটি রাস্তা রয়েছে ৷ বাংলাদেশ ঢাকায় ভিক্টোরিয়া পার্কের নাম বদলে তার নাম রেখেছে বাহাদুর শাহ জাফর পার্ক ৷ ‘দ্য লাস্ট মুঘল’-এর লেখক বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিমপলের (William Dalrymple) ভাষায়, "জাফর ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ । একজন ক্যালিওগ্রাফার, উল্লেখযোগ্য কবি, সুফি পীর এবং একজন মানুষ যিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন । তিনি একজন বীর বিপ্লবী নেতা অনেকটা তাঁর পূর্বপুরুষ সম্রাট আকবরের মতোই ৷"

আরও পড়ুন : Independence Special : জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.