ETV Bharat / bharat

নৈবেদ্য-প্রসাদ সবই বই, ঈশ্বর হল জ্ঞান ! পাহাড়ের কোলে এই মন্দিরে সব ধর্মের অবারিত দ্বার

Temple for books: কেরলের কান্নুরে পাহাড়ের কোলে থাকা একটি বইয়ের মন্দির দেখে সবার তাক লেগে যায় ৷ এই বই মন্দিরে সব ধর্মের জন্য অবারিত দ্বারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷

Temple for books
কেরলে বইয়ের মন্দির
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 30, 2023, 3:17 PM IST

Updated : Nov 30, 2023, 4:03 PM IST

নৈবেদ্য-প্রসাদ সবই বই, ঈশ্বর হল জ্ঞান

কান্নুর, 30 নভেম্বর: পাহাড়ের কোলে আজব এক মন্দির ৷ যেখানে নৈবেদ্য থেকে প্রসাদ - সবই বই ৷ তবে ভক্তদের ক্ষেত্রে ধর্ম ও বর্ণের কোনও বাত-বিচার নেই ৷ সব ধর্মের মানুষের জন্য এই মন্দিরে অবারিত দ্বার ৷ এখানে জ্ঞানই হল ঈশ্বর ৷ কেরলের কান্নুরের বইয়ের মন্দির এককথায় অভিনব ৷

কান্নুর থেকে 58 কিমি দূরে পাহাড়ি গ্রাম চেরুপুঝার প্রপয়েল । সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছোট ছোট পাহাড় পেরোলেই দেখা যাবে একটি বড় পাথরের উপরে নবপুরম মাতাথিথা মন্দির । এটি কোনও বিশেষ ধর্মের মন্দির নয় ৷ কাকোটের পূর্বের এই মন্দিরটি আসলে জ্ঞানের মন্দির । এখানে নৈবেদ্য থেকে শুরু করে প্রসাদ সবই বই । পুজো ও প্রার্থনা জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত । সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি এই মন্দির, যেখানে দেশের নানা বিরল গ্রন্থ রাখা আছে ৷

চেরুপুঝা পিয়েন্স কলেজের শিক্ষক মাস্টার প্রপয়েল নারায়ণন এই মন্দিরের স্তম্ভ । ছাত্রাবস্থা থেকেই চিঠির প্রতি নারায়ণনের ভালোবাসা তাঁর মধ্যে এই উপলব্ধি আনে যে, জ্ঞানই ঈশ্বর । ব্রেনান কলেজে অধ্যয়নরত সময়ে তাঁকে বই ও চলচ্চিত্র বিশেষ ভাবে টানে ৷ তারই ফলস্বরূপ 30 বছর আগে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত হন ৷ সেই সংগঠন বই নিয়ে আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পরিচালনা করে । কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায় ।

কিন্তু নারায়ণন তাঁর স্বপ্ন ছাড়তে রাজি ছিলেন না । এটি একটি স্বপ্ন ছিল যা তাঁর মধ্যে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ৷ এর পর পাহাড়ের ধারে দুই একর জমিতে সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেন তিনি ৷ মন্দিরটি 2021 সালের অক্টোবরে খোলা হয় ৷ মন্দিরে প্রবেশের হলঘরে রয়েছে প্রায় 5000টি বই ৷ সিঁড়ি বেয়ে 30-ফুট লম্বা বিশালাকার পাথরের শীর্ষে গেলে কংক্রিটের তৈরি বইয়ের মন্দিরে পৌঁছে যাবেন ৷ সেখানে কয়েকটি বাক্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । "জ্ঞান হল ঈশ্বর । ধর্ম হল বিস্তৃত চিন্তা ও যুক্তির ক্ষমতা । নম্রতার সঙ্গে প্রজ্ঞাই হল পথ ৷ আসুন প্রার্থনা করি এবং দেবতার সামনে প্রণাম করি ।"

মন্দির প্রাঙ্গণে একটি পাথরের প্রদীপ আছে । এর পাশেই রয়েছে চেরুসেরি ও বুদ্ধের মূর্তি । 20 জনের থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে আর লেখকদের জন্য রয়েছে তিনটি শেড । সেখানে শান্ত পরিবেশে লিখতে পারেন লেখকেরা । এখানে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, একটি ছোট হল এবং পরিবেশনার জন্য একটি ডাইনিং হল রয়েছে । এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের জন্য সমস্ত খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিনামূল্যে । কেরল এবং কর্ণাটকের অনেক জায়গা থেকে শত শত দর্শনার্থী আসেন এখানে ৷

এই মন্দিরের আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানে কোনও পুরোহিত নেই । রবিবার ও বিশেষ দিনে মন্দির খোলা থাকে । 2022 সালে এখানে 15 দিনের জন্য উত্সব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৷ ঐতিহ্য অনুসরণ করে, উত্সবের দিনগুলিতে বইয়ের এই মন্দিরটি বইয়ের দোকানে ভরে যায় ৷ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ হয় । নবরাত্রি মরশুমে বিদ্যারম্ভের জন্য অনেক শিশুর নাম এখানে নথিভুক্ত করা হয় ।

উৎসব উদযাপনের জন্য কোনও কমিটি নেই এবং কোনও অনুদান নেই । পাদিয়ত্তু চালের অধিবাসী সাবু মালিকাল নারায়ণন মাস্টারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ৷ তিনি বই মন্দিরের সমস্ত কাজে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করেন । সাবুকে সেক্রেটারি এবং নারায়ণন মাস্টারকে সভাপতি করে 2 সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি মন্দিরের কার্যাবলী পরিচালনা করছে । মন্দির নির্মাণে এ পর্যন্ত তাঁদের খরচ হয়েছে চল্লিশ লাখ টাকা । নারায়ণন মাস্টারের লক্ষ্য, লেখকদের জন্য নতুন হল যোগ করে নবপুরমকে একটি চেরুসেরি গ্রামে পরিণত করা । প্রসঙ্গত, নারায়ণন মাস্টারও 26টি বইয়ের লেখক ।

আরও পড়ুন:

  1. মালিকের মৃতদেহ মর্গের ভিতরে নিয়ে যেতে দেখেছে, তাই হাসপাতালেই থাকে পোষ্য
  2. সুপ্রিম নির্দেশের পরেও বঙ্গের একটি হলেই কেরালা স্টোরি, কেমন চলছে বিতর্কিত সিনেমা ?
  3. বিজয়নের থেকে পরিস্থিতি জানলেন শাহ, কেরল বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্তের নির্দেশ

নৈবেদ্য-প্রসাদ সবই বই, ঈশ্বর হল জ্ঞান

কান্নুর, 30 নভেম্বর: পাহাড়ের কোলে আজব এক মন্দির ৷ যেখানে নৈবেদ্য থেকে প্রসাদ - সবই বই ৷ তবে ভক্তদের ক্ষেত্রে ধর্ম ও বর্ণের কোনও বাত-বিচার নেই ৷ সব ধর্মের মানুষের জন্য এই মন্দিরে অবারিত দ্বার ৷ এখানে জ্ঞানই হল ঈশ্বর ৷ কেরলের কান্নুরের বইয়ের মন্দির এককথায় অভিনব ৷

কান্নুর থেকে 58 কিমি দূরে পাহাড়ি গ্রাম চেরুপুঝার প্রপয়েল । সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছোট ছোট পাহাড় পেরোলেই দেখা যাবে একটি বড় পাথরের উপরে নবপুরম মাতাথিথা মন্দির । এটি কোনও বিশেষ ধর্মের মন্দির নয় ৷ কাকোটের পূর্বের এই মন্দিরটি আসলে জ্ঞানের মন্দির । এখানে নৈবেদ্য থেকে শুরু করে প্রসাদ সবই বই । পুজো ও প্রার্থনা জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত । সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি এই মন্দির, যেখানে দেশের নানা বিরল গ্রন্থ রাখা আছে ৷

চেরুপুঝা পিয়েন্স কলেজের শিক্ষক মাস্টার প্রপয়েল নারায়ণন এই মন্দিরের স্তম্ভ । ছাত্রাবস্থা থেকেই চিঠির প্রতি নারায়ণনের ভালোবাসা তাঁর মধ্যে এই উপলব্ধি আনে যে, জ্ঞানই ঈশ্বর । ব্রেনান কলেজে অধ্যয়নরত সময়ে তাঁকে বই ও চলচ্চিত্র বিশেষ ভাবে টানে ৷ তারই ফলস্বরূপ 30 বছর আগে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত হন ৷ সেই সংগঠন বই নিয়ে আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পরিচালনা করে । কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায় ।

কিন্তু নারায়ণন তাঁর স্বপ্ন ছাড়তে রাজি ছিলেন না । এটি একটি স্বপ্ন ছিল যা তাঁর মধ্যে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ৷ এর পর পাহাড়ের ধারে দুই একর জমিতে সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেন তিনি ৷ মন্দিরটি 2021 সালের অক্টোবরে খোলা হয় ৷ মন্দিরে প্রবেশের হলঘরে রয়েছে প্রায় 5000টি বই ৷ সিঁড়ি বেয়ে 30-ফুট লম্বা বিশালাকার পাথরের শীর্ষে গেলে কংক্রিটের তৈরি বইয়ের মন্দিরে পৌঁছে যাবেন ৷ সেখানে কয়েকটি বাক্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । "জ্ঞান হল ঈশ্বর । ধর্ম হল বিস্তৃত চিন্তা ও যুক্তির ক্ষমতা । নম্রতার সঙ্গে প্রজ্ঞাই হল পথ ৷ আসুন প্রার্থনা করি এবং দেবতার সামনে প্রণাম করি ।"

মন্দির প্রাঙ্গণে একটি পাথরের প্রদীপ আছে । এর পাশেই রয়েছে চেরুসেরি ও বুদ্ধের মূর্তি । 20 জনের থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে আর লেখকদের জন্য রয়েছে তিনটি শেড । সেখানে শান্ত পরিবেশে লিখতে পারেন লেখকেরা । এখানে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, একটি ছোট হল এবং পরিবেশনার জন্য একটি ডাইনিং হল রয়েছে । এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের জন্য সমস্ত খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিনামূল্যে । কেরল এবং কর্ণাটকের অনেক জায়গা থেকে শত শত দর্শনার্থী আসেন এখানে ৷

এই মন্দিরের আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানে কোনও পুরোহিত নেই । রবিবার ও বিশেষ দিনে মন্দির খোলা থাকে । 2022 সালে এখানে 15 দিনের জন্য উত্সব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৷ ঐতিহ্য অনুসরণ করে, উত্সবের দিনগুলিতে বইয়ের এই মন্দিরটি বইয়ের দোকানে ভরে যায় ৷ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ হয় । নবরাত্রি মরশুমে বিদ্যারম্ভের জন্য অনেক শিশুর নাম এখানে নথিভুক্ত করা হয় ।

উৎসব উদযাপনের জন্য কোনও কমিটি নেই এবং কোনও অনুদান নেই । পাদিয়ত্তু চালের অধিবাসী সাবু মালিকাল নারায়ণন মাস্টারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ৷ তিনি বই মন্দিরের সমস্ত কাজে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করেন । সাবুকে সেক্রেটারি এবং নারায়ণন মাস্টারকে সভাপতি করে 2 সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি মন্দিরের কার্যাবলী পরিচালনা করছে । মন্দির নির্মাণে এ পর্যন্ত তাঁদের খরচ হয়েছে চল্লিশ লাখ টাকা । নারায়ণন মাস্টারের লক্ষ্য, লেখকদের জন্য নতুন হল যোগ করে নবপুরমকে একটি চেরুসেরি গ্রামে পরিণত করা । প্রসঙ্গত, নারায়ণন মাস্টারও 26টি বইয়ের লেখক ।

আরও পড়ুন:

  1. মালিকের মৃতদেহ মর্গের ভিতরে নিয়ে যেতে দেখেছে, তাই হাসপাতালেই থাকে পোষ্য
  2. সুপ্রিম নির্দেশের পরেও বঙ্গের একটি হলেই কেরালা স্টোরি, কেমন চলছে বিতর্কিত সিনেমা ?
  3. বিজয়নের থেকে পরিস্থিতি জানলেন শাহ, কেরল বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্তের নির্দেশ
Last Updated : Nov 30, 2023, 4:03 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.