ETV Bharat / bharat

2024 সালে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী মুখ থেকে বাংলার নির্বাচন, খোলামেলা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী

author img

By

Published : Jun 27, 2021, 3:52 PM IST

Updated : Jun 27, 2021, 4:45 PM IST

মোদি বিরোধী মন্তব্যে বরাবর চর্চায় থেকেছেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ৷ ইটিভি ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ফের একাধিক ইশু নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করলেন তিনি ৷ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি অনামিকা রত্নের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ৷

সুব্রহ্মণ্যম স্বামী
সুব্রহ্মণ্যম স্বামী

নয়া দিল্লি, 27 জুন : ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে বিজেপির আইটি সেল, পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি... একাধিক বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তিনি ৷ ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন ৷ দেশের জাতীয় সংগীতের শব্দ পরিবর্তনের দাবি থেকে সম্প্রতি কাশ্মীর বৈঠক ৷ মোদি বিরোধী মন্তব্যে বারবার চর্চায় থেকেছেন তিনি ৷ তিনি বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ৷ ইটিভি ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ফের একাধিক ইশু নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করলেন তিনি ৷ উঠে এল চিন, জম্মু-কাশ্মীরের প্রসঙ্গ ৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চিন নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি ৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, আমাদের সরকারের চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে তাঁর মন্তব্য, আমেরিকার চাপে এই বৈঠক করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি, দেশে জরুরি অবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ ৷

প্রশ্ন : জরুরি অবস্থা নিয়ে আপনি কী বলতে চান ?

উত্তর : জরুরি অবস্থার জন্য তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধিই দায়ী ৷ কারণ, তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা হেরে গিয়েছিলেন এবং কোর্ট তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচন লড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ৷ সুপ্রিম কোর্টে যেতে তাঁর অনেকটা সময় লেগে যায় ৷ এইসময় জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ ঘাবড়ে গিয়ে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন ৷ এইসময় 1 লাখ 40 হাজার লোককে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল ৷ অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যায় ৷ তার মধ্যে আমিও ছিলাম ৷ আমি ছদ্মবেশ বদল করে প্রথমে দিল্লি থেকে মুম্বই ৷ তারপর আমেরিকায় যাই ৷

প্রশ্ন : বিরোধীরা ইন্দিরা গান্ধির জারি করা জরুরি অবস্থার কথা তো মেনে নেয় ৷ কিন্তু, তাদের বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিও একইরকম...

উত্তর : জরুরি অবস্থার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই ৷ আমরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারি ৷ কেউ আমাদের জেলে বন্দী করবে না ৷ ওই সময় তো আমাদের কোনও অধিকারও ছিল না ৷ আমি বিজেপি করি ৷ সেক্ষেত্রে, দলের কোনও নীতি যদি আমার পছন্দ না হয়, তাহলে তারও সমালোচনা করি আমি ৷ কিন্তু, কংগ্রেসের কেউ এরকম করতে পারবে না ৷ বর্তমান পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থার সঙ্গে এক করে দেওয়া উচিত নয় ৷

প্রশ্ন : কাশ্মীরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আপনার প্রত্যাশা কী? বিরোধীরা বলছে, কাশ্মীরের নেতাদের নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে ৷

উত্তর : এটা ঠিক নয় ৷ এই নেতাদের আদালতে যাওয়ার অধিকার ছিল ৷ কয়েকজন গিয়েওছিলেন ৷ কাশ্মীর আমাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ৷ আমাদের অনেক পবিত্র স্থান আছে ৷ ধর্ম পরিবর্তন করে কাশ্মীরকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৷ জম্মুতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও লাদাখে বৌদ্ধরা ৷ আমাদের সংবিধানে যখন 370 ধারা আনা হয়েছিল, তখন এর বিরোধিতা করা হয়েছিল ৷ সেইসময় সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন, এটা অল্প সময়ের জন্য ৷ সংবিধানেও এটি অস্থায়ী হিসাবে ছিল ৷ এখন 70 বছর পরে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পূরণ করেছি । কিন্তু, কাশ্মীরি পণ্ডিত, শিখ মিলিয়ে 5 লাখ লোককে কাশ্মীর থেকে তাড়ানো হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক করা উচিত ছিল না ৷ তবে আমেরিকার চাপ ছিল ৷

প্রশ্ন : কংগ্রেস কি তাহলে আবার ভুল করছে? তারা পুরনো কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার দাবি তুলছে ৷

উত্তর : কংগ্রেস আত্মহত্যার পর্যায়ে রয়েছে ৷ তাই এইধরনের কথা বলছে ৷ কংগ্রেস চিনকে নিয়ে কোনওদিন নিন্দা করেনি ৷ হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন যে চিন ভারতের সীমানার মধ্যে আসেনি ৷ কিন্তু, বিজেপি আওয়াজ তুলছে ৷ আমি তো রোজ বলছি চিনকে ঠিক করো ৷ চিন আমাদের জমি দখল করে ভুল করেছে ৷

একান্ত সাক্ষাৎকারে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী

প্রশ্ন : চিনকে নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট ?

উত্তর : আমি একেবারেই সন্তুষ্ট নই ৷ আজকের পরিস্থিতিতে সম্ভব নয় ৷ কিন্তু তাও ৷ যেসময় চিন অনুপ্রবেশ করেছিল, সেইসময় আমাদের কোনও পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ৷ গালওয়ান, কৈলাস রেঞ্জে আমরা তা করে দেখিয়েছি ৷ কিন্তু,আবারও তা আলোচনার পর্যায়ে চলে গিয়েছে ৷ কেন এই আলোচনা চলছে? আমি এটা বুঝতে পারি না ৷ ওরা আমাদের জমিতে আমাদের জায়গায় বসে রয়েছে, আমরা কি তাদের সঙ্গে কথা বলব নাকি আমরা আগে তাকে সেখান থেকে উৎখাত করব, তাড়াব ? তাড়াতেও পারতাম ৷

প্রশ্ন : সরকার কি দেরি করে ফেলেছে ?

উত্তর : আমাদের সরকার ভুলের তুষ্টিকরণ করছে ৷ চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, 1962 আর কোনওদিন হবে না ৷ আমাদের ছোট করার জন্য চিন এটা করেছিল এবং সফলও চেয়েছিল ৷

প্রশ্ন : উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ৷ বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও এত মানুষের ধর্মান্তকরণ করা হয়েছিল ৷ আর এখন সরকার তা জানতে পেরেছে ৷ এতে কি রাজ্য সরকারের অবহেলা ছিল ?

উত্তর : ধর্মান্তকরণ যদি নিজের ইচ্ছায় হয় তাহলে তা কেউ আটকাতে পারে না ৷ তবে খ্রিস্টান ও মুসলমানরা নিজের ইচ্ছায় ধর্মান্তকরণ করে ৷ হিন্দুদের আর্থিক পরিস্থিতি মুসলমানদের থেকে ভাল ৷ তাই জনসংখ্যাও কমছে ৷ ধনী ব্যক্তিদের সন্তান কম থাকে ৷ কারণ শিশুদের স্কুল, কলেজ, বিদেশে পাঠাতে হয় । মুসলমানদের জনসংখ্যা হিন্দুদের থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দায়ী । কেরালার হিন্দু এবং উত্তরপ্রদেশের হিন্দুদের জনসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে ৷ উত্তরপ্রদেশে এক-একজনের তিন থেকে চারটি সন্তান রয়েছে ৷ সেই তুলনায় কেরালায় কম শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কারণ তাদের শিক্ষার মান আরও ভাল ।

প্রশ্ন : দুই সন্তানের আইন কি দেশে আসা উচিত ?

উত্তর : আইন দিয়ে কিছু হবে না ৷ এত বড় দেশে শিশুদের হিসাব কে রাখবে? মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে ৷ ভাল স্কুল তৈরি করতে হবে ৷ শিক্ষার স্তর বাড়াতে হবে ৷ আমরা শিক্ষায় জিডিপির মাত্র দেড় শতাংশ খরচ করি ৷ যেখানে উন্নত দেশগুলি 6 শতাংশের চেয়ে কম ব্যয় করে না ।

প্রশ্ন : করোনার পরিস্থিতিতে সরকারের ভুল পরিচালনাই কি কোথাও দায়ী ?

উত্তর : প্রত্যেক শ্রেণির উপর করোনার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়েছে ৷ তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গরিব মানুষদের । আমরা যখন প্রথম ঢেউ আটকাতে সফল হয়েছিলাম, তখন আমরা ঢোল পিটিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম যে দ্বিতীয় ঢেউও আসবে । এখন আমরা ভয় পাচ্ছি যে, তৃতীয় ঢেউও আসবে । তবে প্রথম ঢেউয়ের পরে, আমরা বুক চিতিয়ে বলেছিলাম যে, আমরা করে দেখিয়েছি ৷ আর আমরা অন্য দেশের জন্যও করব । আমাদের এই অহংকার আমাদেরই ক্ষতি করেছে ৷

প্রশ্ন :ভ্যাকসিনের অভাব সত্ত্বেও অন্য দেশে পাঠানোর জন্য অভিযোগ তুলে সরকারকে ঘেরাও করছে বিরোধীরা ৷

উত্তর : সমালোচনা করা খুব সহজ ৷ যখন বলা উচিত ছিল, তখন তো কেউ কিছু বলেনি ৷ ফেব্রুয়ারিতে যখন এটা হচ্ছিল, তখন তো কেউ কিছু বলেনি ৷ সরকারের উচিত ছিল ভ্যাকসিনের জন্য নির্মাতাদের অর্থ প্রদান করা ৷

প্রশ্ন : 2022 এ পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি একজোট হচ্ছে ৷ দেশে সেরকমই এক পরিবেশ তৈরির প্রস্তুতি চলছে ৷ সেক্ষেত্রে এটা কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলবে?

উত্তর : 2024 সালে নরেন্দ্র মোদিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে হবেন? কারণ, তিনি বলে আসছেন, 75 বছরের বেশি বয়সী কাউকে কোনও পদে রাখা যাবে না ৷ এটা ধরেই লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর ও শান্তাকুমারকে এক কোণায় করে রাখা হয়েছে ৷ মোদির বয়স এখন 75-র কাছাকাছি ৷ তাহলে কি এই নিয়ম তাঁর উপরও প্রযোজ্য হবে? ওঁর এখন থেকেই বলা উচিত যে 75 বছর হয়ে গেলেও তিনি ওই পদেই থাকবেন ৷ দলও তাঁর কথা হয়ত মেনে নেবে ৷

প্রশ্ন : 2024-এ কি আরও একবার সরকারে বিজেপি আসবে ? নাকি কংগ্রেস বা তৃতীয় ফ্রন্ট ?

উত্তর : 2024 পর্যন্ত যা খুশি হতে পারে ৷ রাহুল গান্ধি এবং সোনিয়া গান্ধি জাতীয় হেরাল্ড মামলায় কারাগারে গেলে কী হবে ? এত দূর দেখার প্রয়োজন নেই ৷ কর্মীদের উৎসাহ দেওয়া উচিত ৷

প্রশ্ন : বাংলার নির্বাচনের ফলাফলের পর কার্যকর্তাদের মধ্যে কি উৎসাহ কমেছে ?

উত্তর : অবশ্যই উৎসাহ কমেছে ৷ 146 নেতাকে বিজেপি থেকে তৃণমূলে নিয়ে আসা হল ৷ আর এখন তারা ফের ফিরে যাচ্ছে ৷ মুকুল রায়ও তৃণমূলে ওয়াপসি করেছেন ৷ কার্যকর্তাদের যদি জিজ্ঞাসা না করা হয় তাহলে বাজপেয়ী সরকারের মতো পরিস্থিতি হবে ৷ কার্যকর্তাদের যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে জয় কখনও আসবে না ৷ কিন্তু, এইসব কিছু একদিন বদলাবে ৷ আর ক্ষমতায় আমাদেরই সরকার আসবে ৷

প্রশ্ন : রামমন্দিরের জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে ৷ এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন ?

উত্তর : আমি তো এই বিষয় নিয়ে ভাবছি না ৷ আমি তো দেখছি কাজ কেমন চলছে ৷ আর চম্পত রাই যার উপরে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তিনি খুব ভাল মানুষ । তিনি সবকিছু ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন ৷ তাকে দোষ দেওয়া অন্যায় । এর মধ্যে যা হয়েছে, এই সমস্ত মোদিকেই দেখতে হবে ৷ আমি মামলাটি জিতিয়েছি ৷ তার পরে নরেন্দ্র মোদি সবকিছু নিজের হাতে নিয়েছেন । এমনকী, আমাকে ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি । আমি আমন্ত্রণও পাইনি ।

নয়া দিল্লি, 27 জুন : ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে বিজেপির আইটি সেল, পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি... একাধিক বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তিনি ৷ ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন ৷ দেশের জাতীয় সংগীতের শব্দ পরিবর্তনের দাবি থেকে সম্প্রতি কাশ্মীর বৈঠক ৷ মোদি বিরোধী মন্তব্যে বারবার চর্চায় থেকেছেন তিনি ৷ তিনি বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ৷ ইটিভি ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ফের একাধিক ইশু নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করলেন তিনি ৷ উঠে এল চিন, জম্মু-কাশ্মীরের প্রসঙ্গ ৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চিন নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি ৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, আমাদের সরকারের চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে তাঁর মন্তব্য, আমেরিকার চাপে এই বৈঠক করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি, দেশে জরুরি অবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ ৷

প্রশ্ন : জরুরি অবস্থা নিয়ে আপনি কী বলতে চান ?

উত্তর : জরুরি অবস্থার জন্য তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধিই দায়ী ৷ কারণ, তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা হেরে গিয়েছিলেন এবং কোর্ট তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচন লড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ৷ সুপ্রিম কোর্টে যেতে তাঁর অনেকটা সময় লেগে যায় ৷ এইসময় জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ ঘাবড়ে গিয়ে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন ৷ এইসময় 1 লাখ 40 হাজার লোককে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল ৷ অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যায় ৷ তার মধ্যে আমিও ছিলাম ৷ আমি ছদ্মবেশ বদল করে প্রথমে দিল্লি থেকে মুম্বই ৷ তারপর আমেরিকায় যাই ৷

প্রশ্ন : বিরোধীরা ইন্দিরা গান্ধির জারি করা জরুরি অবস্থার কথা তো মেনে নেয় ৷ কিন্তু, তাদের বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিও একইরকম...

উত্তর : জরুরি অবস্থার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই ৷ আমরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারি ৷ কেউ আমাদের জেলে বন্দী করবে না ৷ ওই সময় তো আমাদের কোনও অধিকারও ছিল না ৷ আমি বিজেপি করি ৷ সেক্ষেত্রে, দলের কোনও নীতি যদি আমার পছন্দ না হয়, তাহলে তারও সমালোচনা করি আমি ৷ কিন্তু, কংগ্রেসের কেউ এরকম করতে পারবে না ৷ বর্তমান পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থার সঙ্গে এক করে দেওয়া উচিত নয় ৷

প্রশ্ন : কাশ্মীরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আপনার প্রত্যাশা কী? বিরোধীরা বলছে, কাশ্মীরের নেতাদের নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে ৷

উত্তর : এটা ঠিক নয় ৷ এই নেতাদের আদালতে যাওয়ার অধিকার ছিল ৷ কয়েকজন গিয়েওছিলেন ৷ কাশ্মীর আমাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ৷ আমাদের অনেক পবিত্র স্থান আছে ৷ ধর্ম পরিবর্তন করে কাশ্মীরকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৷ জম্মুতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও লাদাখে বৌদ্ধরা ৷ আমাদের সংবিধানে যখন 370 ধারা আনা হয়েছিল, তখন এর বিরোধিতা করা হয়েছিল ৷ সেইসময় সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন, এটা অল্প সময়ের জন্য ৷ সংবিধানেও এটি অস্থায়ী হিসাবে ছিল ৷ এখন 70 বছর পরে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পূরণ করেছি । কিন্তু, কাশ্মীরি পণ্ডিত, শিখ মিলিয়ে 5 লাখ লোককে কাশ্মীর থেকে তাড়ানো হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক করা উচিত ছিল না ৷ তবে আমেরিকার চাপ ছিল ৷

প্রশ্ন : কংগ্রেস কি তাহলে আবার ভুল করছে? তারা পুরনো কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার দাবি তুলছে ৷

উত্তর : কংগ্রেস আত্মহত্যার পর্যায়ে রয়েছে ৷ তাই এইধরনের কথা বলছে ৷ কংগ্রেস চিনকে নিয়ে কোনওদিন নিন্দা করেনি ৷ হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন যে চিন ভারতের সীমানার মধ্যে আসেনি ৷ কিন্তু, বিজেপি আওয়াজ তুলছে ৷ আমি তো রোজ বলছি চিনকে ঠিক করো ৷ চিন আমাদের জমি দখল করে ভুল করেছে ৷

একান্ত সাক্ষাৎকারে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী

প্রশ্ন : চিনকে নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট ?

উত্তর : আমি একেবারেই সন্তুষ্ট নই ৷ আজকের পরিস্থিতিতে সম্ভব নয় ৷ কিন্তু তাও ৷ যেসময় চিন অনুপ্রবেশ করেছিল, সেইসময় আমাদের কোনও পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ৷ গালওয়ান, কৈলাস রেঞ্জে আমরা তা করে দেখিয়েছি ৷ কিন্তু,আবারও তা আলোচনার পর্যায়ে চলে গিয়েছে ৷ কেন এই আলোচনা চলছে? আমি এটা বুঝতে পারি না ৷ ওরা আমাদের জমিতে আমাদের জায়গায় বসে রয়েছে, আমরা কি তাদের সঙ্গে কথা বলব নাকি আমরা আগে তাকে সেখান থেকে উৎখাত করব, তাড়াব ? তাড়াতেও পারতাম ৷

প্রশ্ন : সরকার কি দেরি করে ফেলেছে ?

উত্তর : আমাদের সরকার ভুলের তুষ্টিকরণ করছে ৷ চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, 1962 আর কোনওদিন হবে না ৷ আমাদের ছোট করার জন্য চিন এটা করেছিল এবং সফলও চেয়েছিল ৷

প্রশ্ন : উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ৷ বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও এত মানুষের ধর্মান্তকরণ করা হয়েছিল ৷ আর এখন সরকার তা জানতে পেরেছে ৷ এতে কি রাজ্য সরকারের অবহেলা ছিল ?

উত্তর : ধর্মান্তকরণ যদি নিজের ইচ্ছায় হয় তাহলে তা কেউ আটকাতে পারে না ৷ তবে খ্রিস্টান ও মুসলমানরা নিজের ইচ্ছায় ধর্মান্তকরণ করে ৷ হিন্দুদের আর্থিক পরিস্থিতি মুসলমানদের থেকে ভাল ৷ তাই জনসংখ্যাও কমছে ৷ ধনী ব্যক্তিদের সন্তান কম থাকে ৷ কারণ শিশুদের স্কুল, কলেজ, বিদেশে পাঠাতে হয় । মুসলমানদের জনসংখ্যা হিন্দুদের থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দায়ী । কেরালার হিন্দু এবং উত্তরপ্রদেশের হিন্দুদের জনসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে ৷ উত্তরপ্রদেশে এক-একজনের তিন থেকে চারটি সন্তান রয়েছে ৷ সেই তুলনায় কেরালায় কম শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কারণ তাদের শিক্ষার মান আরও ভাল ।

প্রশ্ন : দুই সন্তানের আইন কি দেশে আসা উচিত ?

উত্তর : আইন দিয়ে কিছু হবে না ৷ এত বড় দেশে শিশুদের হিসাব কে রাখবে? মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে ৷ ভাল স্কুল তৈরি করতে হবে ৷ শিক্ষার স্তর বাড়াতে হবে ৷ আমরা শিক্ষায় জিডিপির মাত্র দেড় শতাংশ খরচ করি ৷ যেখানে উন্নত দেশগুলি 6 শতাংশের চেয়ে কম ব্যয় করে না ।

প্রশ্ন : করোনার পরিস্থিতিতে সরকারের ভুল পরিচালনাই কি কোথাও দায়ী ?

উত্তর : প্রত্যেক শ্রেণির উপর করোনার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়েছে ৷ তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গরিব মানুষদের । আমরা যখন প্রথম ঢেউ আটকাতে সফল হয়েছিলাম, তখন আমরা ঢোল পিটিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম যে দ্বিতীয় ঢেউও আসবে । এখন আমরা ভয় পাচ্ছি যে, তৃতীয় ঢেউও আসবে । তবে প্রথম ঢেউয়ের পরে, আমরা বুক চিতিয়ে বলেছিলাম যে, আমরা করে দেখিয়েছি ৷ আর আমরা অন্য দেশের জন্যও করব । আমাদের এই অহংকার আমাদেরই ক্ষতি করেছে ৷

প্রশ্ন :ভ্যাকসিনের অভাব সত্ত্বেও অন্য দেশে পাঠানোর জন্য অভিযোগ তুলে সরকারকে ঘেরাও করছে বিরোধীরা ৷

উত্তর : সমালোচনা করা খুব সহজ ৷ যখন বলা উচিত ছিল, তখন তো কেউ কিছু বলেনি ৷ ফেব্রুয়ারিতে যখন এটা হচ্ছিল, তখন তো কেউ কিছু বলেনি ৷ সরকারের উচিত ছিল ভ্যাকসিনের জন্য নির্মাতাদের অর্থ প্রদান করা ৷

প্রশ্ন : 2022 এ পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি একজোট হচ্ছে ৷ দেশে সেরকমই এক পরিবেশ তৈরির প্রস্তুতি চলছে ৷ সেক্ষেত্রে এটা কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলবে?

উত্তর : 2024 সালে নরেন্দ্র মোদিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে হবেন? কারণ, তিনি বলে আসছেন, 75 বছরের বেশি বয়সী কাউকে কোনও পদে রাখা যাবে না ৷ এটা ধরেই লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর ও শান্তাকুমারকে এক কোণায় করে রাখা হয়েছে ৷ মোদির বয়স এখন 75-র কাছাকাছি ৷ তাহলে কি এই নিয়ম তাঁর উপরও প্রযোজ্য হবে? ওঁর এখন থেকেই বলা উচিত যে 75 বছর হয়ে গেলেও তিনি ওই পদেই থাকবেন ৷ দলও তাঁর কথা হয়ত মেনে নেবে ৷

প্রশ্ন : 2024-এ কি আরও একবার সরকারে বিজেপি আসবে ? নাকি কংগ্রেস বা তৃতীয় ফ্রন্ট ?

উত্তর : 2024 পর্যন্ত যা খুশি হতে পারে ৷ রাহুল গান্ধি এবং সোনিয়া গান্ধি জাতীয় হেরাল্ড মামলায় কারাগারে গেলে কী হবে ? এত দূর দেখার প্রয়োজন নেই ৷ কর্মীদের উৎসাহ দেওয়া উচিত ৷

প্রশ্ন : বাংলার নির্বাচনের ফলাফলের পর কার্যকর্তাদের মধ্যে কি উৎসাহ কমেছে ?

উত্তর : অবশ্যই উৎসাহ কমেছে ৷ 146 নেতাকে বিজেপি থেকে তৃণমূলে নিয়ে আসা হল ৷ আর এখন তারা ফের ফিরে যাচ্ছে ৷ মুকুল রায়ও তৃণমূলে ওয়াপসি করেছেন ৷ কার্যকর্তাদের যদি জিজ্ঞাসা না করা হয় তাহলে বাজপেয়ী সরকারের মতো পরিস্থিতি হবে ৷ কার্যকর্তাদের যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে জয় কখনও আসবে না ৷ কিন্তু, এইসব কিছু একদিন বদলাবে ৷ আর ক্ষমতায় আমাদেরই সরকার আসবে ৷

প্রশ্ন : রামমন্দিরের জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে ৷ এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন ?

উত্তর : আমি তো এই বিষয় নিয়ে ভাবছি না ৷ আমি তো দেখছি কাজ কেমন চলছে ৷ আর চম্পত রাই যার উপরে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তিনি খুব ভাল মানুষ । তিনি সবকিছু ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন ৷ তাকে দোষ দেওয়া অন্যায় । এর মধ্যে যা হয়েছে, এই সমস্ত মোদিকেই দেখতে হবে ৷ আমি মামলাটি জিতিয়েছি ৷ তার পরে নরেন্দ্র মোদি সবকিছু নিজের হাতে নিয়েছেন । এমনকী, আমাকে ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি । আমি আমন্ত্রণও পাইনি ।

Last Updated : Jun 27, 2021, 4:45 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.