মুম্বই, 5 জুলাই : বিধানসভার বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই সরগরম মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতি ৷ মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্যে শিবসেনা-বিজেপি সম্পর্ক নিয়ে বাড়ছে জল্পনা ৷ অন্যদিকে, একই দিনে কৃষকদের সমস্য়া-সহ বেশ কয়েকটি ইস্য়ুকে সামনে রেখে বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভে সামিল হলেন বিজেপি বিধায়করা ৷ সব মিলিয়ে কোভিড আবহেই ফের একবার পারদ চড়ছে মারাঠি রাজনীতির ৷
উনিশের বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গেই ভোটের ময়দানে নেমেছিল দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিজেপি ও শিবসেনা ৷ ভোটর ফল বেরোলে দেখা যায়, মহারাষ্ট্র বিধানসভার মোট 288টি আসনের মধ্যে বিজেপি 105টি এবং শিবসেনা 56টিতে জয়ী হয়েছে ৷ অর্থাৎ হিসাব অনুসারে সরকার গড়ার কথা ছিল এই জোটেরই ৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে গোলমালের জেরে গাঁটছড়া খুলে যায় দু’পক্ষের ৷ অনেক নাটকীয় মোড় পার করে মসনদে আসীন হন উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray) ৷ তাঁকে সমর্থন করেন কংগ্রেসের 44 এবং এনসিপি-র 54 জন বিধায়ক ৷
আরও পড়ুন : মতের অমিল থাকলেও শত্রু নয় শিবসেনা, ফড়নবিশের মন্তব্যে বাড়ল জল্পনা
এই ঘটনার পর থেকেই বিজেপি-শিবসেনা খেয়োখেয়ি চলছে ৷ এদিকে, কোভিড আবহে দীর্ঘদিন পর সোমবারই শুরু হয়েছে বিধানসভার বাদল অধিবেশন ৷ তার ঠিক আগে রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে রাজ্য়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশের (Devendra Fadnavis) একটি বিশেষ মন্তব্য ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘শিবসেনা ও বিজেপি একে অপরের শত্রু নয় ৷’’ তবে কি ফের কাছাকাছি আসছে ‘প্রাক্তন’রা ৷ না, সরাসরি তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা বলেননি দেবেন্দ্র ৷ তবে তাতে জল্পনা থামেনি ৷
বিজেপি-শিবসেনা (BJP-Shiv Sena) সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তার জবাব দিতে মাঠে নেমেছেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত (Shiv Sena MP Sanjay Raut) ৷ দুই রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক বোঝাপড়া বোঝাতে গিয়ে সদ্য প্রাক্তন হওয়া তারকা দম্পতি আমির খান ও কিরণ রাওয়ের (Aamir Khan-Kiran Rao) প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : বিজেপি শিবসেনাকে ক্রীতদাস ভাবতো, তোপ সঞ্জয় রাউতের
এই প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, শাসক শিবসেনা ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে এখনও বন্ধুত্বের সম্পর্কই রয়েছে ৷ তবে তাদের পক্ষে আর একজোট হওয়া সম্ভব নয় ৷ সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘ফড়নবিশ বলেছেন, শিবসেনা ও বিজেপির মধ্যে কোনও শত্রুতা নেই ৷ আমাদের মধ্যে অবশ্যই অনেক পার্থক্য আছে ৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা একে-অপরের শত্রু ৷ আমরা ভারত-পাকিস্তান নই ৷ আমাদের মধ্যে এখনও বৈঠক, আলোচনা হয় ৷ বিষয় একটাই, আমাদের রাজনৈতিক পথ ভিন্ন ৷’’ এরপরই আমির-কিরণের বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে সঞ্জয় বলেন, ‘‘ওঁদের দেখুন ৷ ওঁরা ঠিক করে নিয়েছেন, ওঁরা আলাদা থাকবেন ৷ তা সত্ত্বেও ওঁরা এখনও বন্ধু ৷’’
তবে বন্ধুত্ব থাকলেও বিজেপির সঙ্গে জোটে ফেরার তাঁদের যে বিন্দুমাত্র পরিকল্পনা নেই, সেকথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সঞ্জয় ৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই বন্ধুত্বের অর্থ কখনই এমনটা নয় যে শিবসেনা ও বিজেপি ফের একজোট হবে ৷ মহাবিকাশ অঘড়ি সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ অবশ্যই পূর্ণ করবে ৷’’
আরও পড়ুন : প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তাই টুইটারকে ছুড়ে ফেলতে চাইছে বিজেপি : সামনা
এদিকে, রাজনৈতিক সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার অশান্ত হল মহারাষ্ট্র বিধানসভা ৷ এদিন ছিল বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন ৷ আর এদিনই বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসলেন বিজেপি বিধায়করা ৷ কৃষক সমস্য়া, ওবিসি সংরক্ষণ-সহ বেশ কয়েকটি ইস্য়ুকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুললেন তাঁরা ৷
বিরোধী দলনেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন, দু’দিনের চলতি অধিবেশনে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্য সরকার যে প্রস্তাব পেশ করার কথা বলছে, তা অবান্তর ৷ বিজেপির দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাফিক নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার তৈরি না করেই ওবিসি সংরক্ষণ তুলে নেওয়া সম্ভব নয় ৷ একইসঙ্গে বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য়ের কৃষকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে ৷ কিন্তু সেসব নিয়ে কোনও আলোচনাই করতে চাইছে না সরকার ৷