নয়াদিল্লি, 28 মে: 'সেঙ্গল' ইস্যুতে তাঁর দলেরই বিপরীত অবস্থান নিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ৷ বর্তমানের মূল্যবোধ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অতীতের এই প্রতীকটি গ্রহণ করা উচিত বলে রবিবার টুইট করে সাফ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই থারুর স্পষ্ট করে দিয়ে লিখেছেন, "সেঙ্গল রাজদণ্ডটি ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের একটি ঐতিহ্যগত প্রতীক ৷ এটি লোকসভায় স্থাপন করে ভারত নিশ্চিত করছে যে সার্বভৌমত্ব সেখানে কায়েম আছে ৷ "
সেঙ্গল নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝেই উল্লেখযোগ্যভাবে রবিবার নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের পর লোকসভায় অধ্যক্ষের আসনের পাশে ঐতিহাসিক এই প্রতীকটি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ যদিও সেঙ্গলকে কোনও অংশেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে মানতে রাজি নয় কংগ্রেস ৷ পালটা একাধিক যুক্তিকে সামনে রেখে সেঙ্গলের স্বপক্ষে জোরালো মত পোষণ করেছে বিজেপি ৷ থারুর অবশ্য সরকারের যুক্তিকেই এদিন সমর্থন করেছেন ৷ সেঙ্গল ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বোঝায় বলেই দাবি করেছেন থারুর ৷ সেই সঙ্গেই, তিনি বিরোধীদের যুক্তির পালটা দাবি করেছেন, সংবিধানটি জনগণের নামে গৃহীত হয়েছিল।
টুইটারে থারুর লিখেছেন, "সেঙ্গল বিবাদের বিষয়ে আমার কাছে উভয় পক্ষেরই যুক্তিই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার সঠিকভাবে যুক্তি দিচ্ছে, যে রাজদণ্ড পবিত্র সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মের শাসনকে মূর্ত করে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে নির্দেশ করে। বিরোধীদের যুক্তিও সর্বাংশে ফেলে দেওয়া যায় না ৷ তবে সংবিধান জনগণের নামে গৃহীত হয়েছিল এবং ভারতের সার্বভৌমত্বকে সামনে রেখেই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা হয়।" এখানেই শেষ নয়, থারুর এর সঙ্গেই লিখেছেন, "ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে নেহরুকে মাউন্টব্যাটেনের দেওয়া রাজদণ্ডের বিতর্কিত অংশকে বাদ দিলে দু'টি অবস্থানই কিন্তু এক ৷ এমন একটি গল্প যার কোনও প্রমাণ নেই। পরিবর্তে, আমাদের অবশ্যই বলা উচিত যে সেঙ্গল, রাজদণ্ড ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতীক এবং লোকসভায় এটিকে রেখে ভারত নিশ্চিত করছে যে সার্বভৌমত্ব সেখানে কায়েম রয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবনকে কফিনের সঙ্গে তুলনা আরজেডির, দেশদ্রোহিতার মামলা দাবি বিজেপির
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেঙ্গল ইস্যুতে থারুরের অবস্থান দলের অন্যান্য নেতাদের থেকে একেবারেই আলাদা। যেখানে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে 'মিথ্যা তথ্য' প্রচারের মতো গুরুতর অভিযোগ এনে আক্রমণ করেছেন, সেখানে থারুরের মুখে কিন্তু সরকারের এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসাই শোনা গেল ৷ শুক্রবার টুইট করে রমেশ লিখেছেন, "এটা আশ্চর্যের বিষয় যে নতুন সংসদ ভবনের শুরুতেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপবিত্র করা হচ্ছে ৷ সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি থেকে বিজেপি এবং আরএসএস এসব প্রচার করছে ৷" এর ন্যূনতম কোনও প্রমাণ নেই বলেও দাবি করেছেন রমেশ ৷
আরও পড়ুন: নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে রাজ্যাভিষেক মনে করছেন মোদি, কটাক্ষ রাহুলের
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন যে, সেঙ্গলকে ব্রিটিশদের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে দেখার কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই ৷ কিন্তু বিজেপি ভুয়ো দাবি করে চলেছে ৷ প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুর একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নকশা করে এদিন নির্মাণ করা হয় এই সেঙ্গল ৷ যা 1947 সালের অগস্টে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ রাজদণ্ডটি ব্রিটিশদের দেশ ছাড়ার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে। জয়রাম রমেশের দাবি, "রাজদণ্ডটি পরে এলাহাবাদ মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুতে দলের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ঢোল পিটিয়ে এটি নিয়ে আসছেন। আসল প্রশ্ন হল কেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে দেওয়া হল না?"