নয়াদিল্লি, 29 জুলাই: শিশুর উপর আইনি অধিকার মায়েরও ৷ তাই বাবা মারা গেলে সন্তানের পদবি কী হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র মায়েরই ৷ একটি মামলায় অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে বৃহস্পতিবার এই যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
ঘটনার সূত্রপাত 2006 সালে ৷ স্বামী মারা যাওয়ার পরে এক মহিলা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ৷ সে সময় তিনি এক সন্তানের জননী ৷ এই পরিস্থিতিতে 2008 সালে বাচ্চাটির হেফাজত চেয়ে আদালতে আবেদন জানান মৃত স্বামীর বাবা-মা অর্থাৎ বাচ্চাটির দাদু-দিদা ৷ সেই সময় শিশুটির বয়স ছিল আড়াই বছর ৷ তখন অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট বাচ্চাটিকে মায়ের কাছেই রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ৷ পাশাপাশি সন্তানের বাবার নাম হিসেবে জৈবিক বাবার নাম লেখার নির্দেশও দিয়েছিল ওই মহিলাকে ৷ এমনকী বাচ্চাটির নামের পাশে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর নামোল্লেখ করতে হলে 'সৎ পিতা' হিসেবে উল্লেখ করতে বলে রায় দেয় আদালত ৷
অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা ৷ তাঁর বক্তব্য, দাদু-দিদারা কখনও এই পদবি নিয়ে কোনও আবেদন না জানালেও জোর করে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট এই নির্দেশ জুড়ে দিয়েছে ৷ মামলার শুনানি শেষে হাইকোর্টের এই রায়কে 'নিষ্ঠুর ও ভাবনাচিন্তাহীন' বলে আখ্য়া দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারীর ডিভিশন বেঞ্চ (A division bench of Justices Dinesh Maheshwari and Krishna Murari) ৷ দুই বিচারপতি জানান, এই তকমা বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করবে (SC says Mother has the only legal right to decide over surname of her son after biological father dies) ৷
এই শুনানিতে বেঞ্চ আরও জানায়, প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানের একমাত্র জীবিত অভিভাবক তাঁর মা ৷ তাই তাঁর নতুন পরিবারে সন্তানের পদবি কী হবে, তা ঠিক করার আইনি অধিকার মায়েরই ৷ তাই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে আটকানো যায় না ৷ শুধু তাই নয়, কেউ যদি সেই সন্তানকে দত্তক নিতে চায়, সে ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত মতামত জানানোর ক্ষমতা একমাত্র মায়েরই ৷
আরও পড়ুন: সন্তান ও কেরিয়ারের মধ্যে কোনও একটি বেছে নিতে মাকে জোর করা যাবে না: বম্বে হাইকোর্ট
এই রায়ে সর্বোচ্চ আদালত সন্তানের নামের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরে ৷ বিচারপতিরা জানান, একজন সন্তান তার নামেই সমাজে পরিচিতি পায় ৷ অন্য পরিবারের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তাঁর নাম বদলে গেলে, সেই পরিবর্তন তাঁকে সবসময় দত্তক নেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দেবে ৷ আর এই পরিস্থিতির সুযোগে সেই সন্তানকে অনাবশ্যক কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে ৷ যা তার বাবা-মায়ের মধ্যের একটি সহজ ও প্রাকৃতিক সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে ৷