নয়াদিল্লি, 9 জুলাই: প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত ৷ বৃষ্টির কারণে উত্তরের রাজ্যগুলিতে কমপক্ষে 14 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ ভূমিধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ৷ জলমগ্ন বহু এলাকা ৷ নদীগুলি ফুলে ফেঁপে ওঠায় ভেসে গিয়েছে সেতু ৷
হিমাচল এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ৷ পাহাড়ি রাজ্যে ভূমিধসে একাধিক বাড়ি এবং অন্যান্য নির্মাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন । উত্তরাখণ্ডে একটি গাড়ি ভূমিধসে ধাক্কা খেয়ে গঙ্গায় ডুবে যাওয়ায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরে শনিবার সন্ধ্যায় পুঞ্চ জেলায় হড়পা বানে ভেসে গিয়ে দুই সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে ৷ রাজস্থানের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে ৷ যার ফলে শনিবার পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে । চিতোরগড়ে বজ্রপাতে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে এবং সাওয়াই মাধোপুরে দুটি পৃথক ঘটনায় দুই ব্যক্তি ডুবে গিয়েছেন ।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পঞ্জাব এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে । আইএমডি জানিয়েছে, উত্তর ভারতে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে ৷ তারই ফলে শনিবার এবং রবিবার তীব্র বৃষ্টিপাত হয়েছে ।
আইএমডি বেলা 1টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, আজ 9 জুলাই হিমাচল, উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাব ও হরিয়ানার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হবে ৷ উত্তর-পশ্চিম ভারত: হালকা/মাঝারি থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাত হবে খুব সম্ভবত পশ্চিম হিমালয় অঞ্চল, পঞ্জাব, হরিয়ানা-চণ্ডীগড়-দিল্লিতে, রাজস্থানে 9-10 তারিখে এবং উত্তরপ্রদেশে পরবর্তী 5 দিন ৷ 9 জুলাই উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ এবং পঞ্জাব, হরিয়ানা-চণ্ডীগড়ের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের খুব সম্ভাবনা রয়েছে ৷ 10-13 জুলাই পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে বিচ্ছিন্ন ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৷
হিমাচলে ফুঁসছে বিপাশা
হিমাচলপ্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধস হয়েছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পাঁচজন নিহত হয়েছেন ৷ সিমলা জেলার কোটগড় এলাকায় বৃষ্টির কারণে ভূমিধসে বাড়ি ধসে এক পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে । কুলু শহরের কাছে একটি ভূমিধসে একটি অস্থায়ী বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে একজন মহিলার মৃত্যু হয় । অন্য একটি ঘটনায়, শনিবার রাতে চাম্বার কাতিয়ান তহসিলে ভূমিধসের ফলে একজন জীবন্ত অবস্থায় মাটি চাপা পড়েন ৷ রাজ্য জরুরি অপারেশন সেন্টার অনুসারে, গত 36 ঘণ্টায় রাজ্যে 13টি ভূমিধস এবং নয়টি হড়পা বানের খবর পাওয়া গিয়েছে ।
রবিবার সকালে 736টি রাস্তা যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং 1,743টি ট্রান্সফরমার এবং 138টি জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় । 21 নং জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ । এটা সেই জায়গা যেখানে গত 27 জুন ভূমিধসের কারণে প্রায় 24 ঘণ্টা যাত্রীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন । ঘোডা ফার্মের কাছে কামান্দ হয়ে মান্ডি-কুলু সড়কও অবরুদ্ধ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: লাহৌল-স্পিতিতে হড়পা বানের জেরে ধস, উদ্ধার করা হল 30 পড়ুয়াকে
মানালিতে দোকানপাট ভেসে যাওয়ার খবর, কুলু, কিন্নর ও চাম্বার নল্লায় আকস্মিক বন্যায় যানবাহন ভেসে গিয়েছে এবং কৃষি জমির ক্ষতি হয়েছে । সিমলা জেলায় বেশ কয়েকটি রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । বিপাশা, শতদ্রু-সহ সমস্ত প্রধান নদীগুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে ৷ পর্যটক ও যাত্রীদের ভারী বৃষ্টির সময় ভ্রমণ এড়াতে এবং নদীর ধারের কাছে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে ।
ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী সিমলা এবং কালকা ট্র্যাকের মধ্যে সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, কারণ ভূমিধস এবং গাছপালা পড়ে অনেক জায়গায় রেলপথ অবরুদ্ধ হয়েছে । সুন্দো-কাজা-গ্রামফু (জাতীয় সড়ক 505) তে গ্রামফু এবং ছোট ধারার মধ্যে আটকে পড়া 30জন কলেজ ছাত্রকে শনিবার রাতে লাহৌল এবং স্পিতি কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করেছে ৷ গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে । স্থানীয় আবহাওয়া অফিস 8 এবং 9 জুলাই রাজ্যের সাতটি জেলায় অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের (204 মিমি উপরে) একটি লাল সতর্কতা জারি করেছিল । সিমলা, সিরমাউর, মান্ডি, চাম্বা, কাংরা, কুলু- এর কয়েকটি জলাশয়ে উচ্চ আকস্মিক বন্যার ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেছে ।
দিল্লি জলমগ্ন, রবিবারের ছুটি বাতিল কেজরিওয়ালের
দিল্লিতে রবিবার 8:30 এ শেষ হওয়া 24 ঘণ্টায় 153 মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা 1982 সালের পর জুলাই মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ৷ ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং মৌসুমী বায়ুর জোড়া ফলায় দিল্লি-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সমস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের রবিবারের ছুটি বাতিল করে তাঁদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন । তিনি আরও বলেন, দিল্লির মন্ত্রিসভার মন্ত্রী এবং মেয়র শেলি ওবেরয় শহরের 'উপদ্রুত এলাকা' পরিদর্শন করবেন ।
উত্তরাখণ্ড: ভূমিধসের কবলে পড়ে গাড়ি গঙ্গায়, মৃত 3
রবিবার তেহরি গাড়ওয়াল জেলার গঙ্গা নদীতে ভূমিধসের কারণে একটি গাড়ি পড়ে যাওয়ার পরে তিনজনের মৃত্যু হয় ৷ তিনজন নিখোঁজ । গাড়িটিতে চালক-সহ 11 জন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷ তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে উদ্ধার করে ঋষিকেশের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । কেদারনাথ থেকে ঋষিকেশে যাচ্ছিলেন তাঁরা ।
স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এসডিআরএফ) কর্মীরা এবং স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং উদ্ধার ও ত্রাণ অভিযান চলছে ৷ এসডিআরএফ-এর পরিদর্শক কাবেন্দ্র সাজওয়ান জানিয়েছেন, নদী থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ডুবুরিদের একটি দল অন্য যাত্রীদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে । তিনি বলেন, নিহতরা দিল্লি, বিহার ও হায়দরাবাদের বাসিন্দা ।
আরও পড়ুন: 41 বছর পর জুলাইতে রেকর্ড বৃষ্টি, দিল্লির সরকারি কর্মীদের রবিবারের ছুটি বাতিল কেজরির
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ভারী বর্ষণ এবং উপচে পড়া নদীর কারণে ভূমিধস হওয়ায় জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন । খারাপ আবহাওয়া এবং অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে, ভূমিধসের ঘটনা, রাস্তা বন্ধ এবং উপচে পড়া নদী ও স্রোতের খবর পাওয়া গিয়েছে । সমস্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ধামি ৷
বর্ষার বৃষ্টি 10 শতাংশ ঘাটতি থেকে হয়ে গেল উদ্বৃত্ত
ভারতের আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) তথ্য অনুসারে, জুলাই মাসের প্রথম আট দিনে ভারতের অনেক জায়গায় বৃষ্টি পুরো দেশের জন্য বৃষ্টিপাতের ঘাটতি পূরণ করেছে । বর্ষার মরশুমে ক্রমবর্ধমান বৃষ্টিপাত 243.2 মিলিমিটারে পৌঁছেছে, যা 239.1 মিমি স্বাভাবিকের থেকে 2 শতাংশ বেশি । তবে, বৃষ্টিপাতের বড় আকারের আঞ্চলিক তারতম্য রয়েছে ।
সাম্প্রতিক আইএমডি ডেটা বলছে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে 17 শতাংশের ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছে (454 মিমি স্বাভাবিকের বিপরীতে 375.3 মিমি), উত্তর ভারতে 59 শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে (125.5 শতাংশ স্বাভাবিকের বিপরীতে 199.7 মিমি) । মধ্য ভারত, যেখানে বিপুল সংখ্যক কৃষক মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভর করে, সেখানে 264.9 মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যা স্বাভাবিক 255.1 মিমির থেকে 4 শতাংশ বেশি । দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি 45 শতাংশ থেকে কমে 23 শতাংশে নেমে এসেছে ।
ঝিলামের জলস্তর কমে যাওয়ায় স্বস্তিতে কাশ্মীর
শ্রীনগর শহর-সহ কাশ্মীরের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা রবিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কারণ আবহাওয়ার অবস্থার উন্নতির পরে ঝিলম নদীর জলস্তর হ্রাস পেয়েছে ৷ ফলে বন্যার হুমকি হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীনগরের আধিকারিকরা । তাঁরা জানান, আবহাওয়ার উন্নতি হচ্ছে এবং জলের স্তর নেমে যাবে, তবে যাঁরা নিচু এলাকায় বসবাস করছেন তাঁদের অন্তত রবিবারের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । আগামী 24 ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ কাশ্মীরে বৃষ্টি প্রত্যাশিত কিন্তু শনিবারের মতো একই তীব্রতা থাকবে না বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ৷