ETV Bharat / bharat

দূষিত জল অন্য সব কিছুর থেকে বেশি বিপজ্জনক

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখনও দূষিত জল ব্যবহার করছে । বছরের হিসাবে দূষিত জলের প্রভাবে কলেরা, টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রির মতো রোগে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় । এদের বেশিরভাগই শিশু । এই ধরনের পরিস্থিতিতে জরুরি হল প্রচারসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কড়া আইন প্রণয়ন করা ।

author img

By

Published : Dec 29, 2020, 11:41 AM IST

POLLUTED WATER
দূষিত জল

পৃথিবীতে প্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে যেগুলি সবচেয়ে শোচনীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে জল অন্যতম । ভৌমজল, নদী, হ্রদ, পুকুর এবং খালগুলি মানুষের কার্যকলাপের জন্য খুব বেশি দূষিত হয় । বিশ্বজুড়ে জলসম্পদের 60 শতাংশই ইতিমধ্যে দূষিত তথা বিষাক্ত হয়ে পড়েছে । এই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমরা 2050 সালের মধ্যে বিশুদ্ধ জল পুরোপুরি হারিয়ে ফেলব ।

ক্ষতিকারক সব উপাদান যেমন রাসায়নিক যখন কোনও নদী, হ্রদ, ঝরণা, সমুদ্র অথবা অ্যাকুইফারে মিশে যায়, তখনই জলদূষণ হয় । কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছেন যে, ইলুরু-তে সাম্প্রতিক যে রহস্যজনক অসুস্থতার খবর সামনে এসেছিল, তার পিছনে ছিল এই জলদূষণই । জলের নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা করার পর তাতে অরগানো-ক্লোরিন কীটনাশক,পারদ, নিকেল এবং সীসার উপস্থিতি মিলেছে এবং তাও আবার অনুমোদিত মাত্রার থেকে অনেকটাই উপরে ।

2013 সালে ওশেন ইনডেক্স হেলথ টিম পৃথিবীর সমুদ্রগুলির বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার উদ্দেশে 171টি দেশের জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছিল । সেই ইনডেক্সে শীর্ষস্থানে ছিল রাশিয়া আর ভারত ছিল 162-তম স্থানে । নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষি ,রাসায়নিক এবং শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যই হল দেশে জলদূষণের প্রধান কারণ । কয়েক বছর আগেও কৃষিখালে মরা মাছ ভেসে বেড়ানোর ছবিও ছিল খুবই পরিচিত । জলাশয় লাগোয়া কৃষিজমিতে বহুল পরিমাণে কীটনাশক এবং সারের ব্যবহারের ফলেই জলজ জীব এবং ওই চত্বরের পাখিকূলের মৃত্যু হয়েছে । শামুক, জোঁক এবং এল্ক সাপেরা ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে । দেশের নদীগুলির বেশিরভাগই বিষাক্ত অবশিষ্টে ভরতি হয়ে যাচ্ছে । এই দূষিত জল যখন চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন দূষিত পদার্থগুলি খাদ্য শৃঙ্খলেরই অংশ হয়ে পড়ছে । চামড়া, সার, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক কারখানা থেকে বিষাক্ত জল নদীগুলিতে ফেলা হচ্ছে । গ্রাম এমনকী ছোটো ছোটো শহরগুলিতেও এমনই দূষিত, নিকাশি জল, নিকাশি নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে গিয়ে ফেলা হচ্ছে । নদী বাঁধগুলিতে প্লাস্টিক কভার আর পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পড়ে পড়ে জমছে ।

তাছাড়া , বর্জ্য নিষ্কাশন করে, বিশুদ্ধ জল মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের সহজাত । কর্দম্যক্ত নিকাশি নালা এবং ড্রেনগুলি এখন উধাও, ফলে বর্জ্যযুক্ত, শিল্পাঞ্চলের নোংরা জল সরাসরি গিয়ে নদীতে পড়ছে । ভারতে গড়ে দৈনিক পার ক্যাপিটা জল লাগে 135 থেকে 150 লিটার । সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের বক্তব্য অনুসারে, দেশে দিনে 26 হাজার টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয় । যার মধ্যে থেকে মাত্র 7 হাজার 800 টনকে পুর্নব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয় । বাকি 18 হাজার 200 টন জমিতে, নদীতে আর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় । প্লাস্টিকের পণ্য বিয়োজিত হতে 450 বছরও লেগে যেতে পারে । এই সব প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে চারপাশের মাটিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা ভৌমজলের মধ্যে প্রবেশ করে বাস্তুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব আনতে পারে ।

আরও পড়ুন, রেললাইনের পাশ থেকে কর্নাটক বিধান পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের দেহ উদ্ধার

ওয়াটার পলিউশন কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যাক্ট ভারতে 1974 সালে কার্যকর হয়েছে । এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট 1986, হ্যাজ়ার্ডাস ওয়েস্টস (ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হ্যান্ডলিং) অ্যাক্ট 1989, ম্যানুফ্যাকচার স্টোরেজ অ্যান্ড ইমপোর্ট অফ হ্যাজ়ার্ডাস কেমিকেল রুলস 1989, ফরেস্ট কনজ়ারভেশন অ্যাক্ট 1970, ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট 1972 এবং বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট 2002–জলদূষণ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে ।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখনও দূষিত জল ব্যবহার করছে । বছরের হিসাবে দূষিত জলের প্রভাবে কলেরা, টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রির মতো রোগে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় । এদের বেশিরভাগই শিশু । বয়স পাঁচের নিচে । এই ধরনের পরিস্থিতিতে জরুরি হল প্রচারসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কড়া আইন প্রণয়ন করা । যাতে প্রত্যেকে জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন ।

পৃথিবীতে প্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে যেগুলি সবচেয়ে শোচনীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে জল অন্যতম । ভৌমজল, নদী, হ্রদ, পুকুর এবং খালগুলি মানুষের কার্যকলাপের জন্য খুব বেশি দূষিত হয় । বিশ্বজুড়ে জলসম্পদের 60 শতাংশই ইতিমধ্যে দূষিত তথা বিষাক্ত হয়ে পড়েছে । এই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমরা 2050 সালের মধ্যে বিশুদ্ধ জল পুরোপুরি হারিয়ে ফেলব ।

ক্ষতিকারক সব উপাদান যেমন রাসায়নিক যখন কোনও নদী, হ্রদ, ঝরণা, সমুদ্র অথবা অ্যাকুইফারে মিশে যায়, তখনই জলদূষণ হয় । কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছেন যে, ইলুরু-তে সাম্প্রতিক যে রহস্যজনক অসুস্থতার খবর সামনে এসেছিল, তার পিছনে ছিল এই জলদূষণই । জলের নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা করার পর তাতে অরগানো-ক্লোরিন কীটনাশক,পারদ, নিকেল এবং সীসার উপস্থিতি মিলেছে এবং তাও আবার অনুমোদিত মাত্রার থেকে অনেকটাই উপরে ।

2013 সালে ওশেন ইনডেক্স হেলথ টিম পৃথিবীর সমুদ্রগুলির বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার উদ্দেশে 171টি দেশের জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছিল । সেই ইনডেক্সে শীর্ষস্থানে ছিল রাশিয়া আর ভারত ছিল 162-তম স্থানে । নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষি ,রাসায়নিক এবং শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যই হল দেশে জলদূষণের প্রধান কারণ । কয়েক বছর আগেও কৃষিখালে মরা মাছ ভেসে বেড়ানোর ছবিও ছিল খুবই পরিচিত । জলাশয় লাগোয়া কৃষিজমিতে বহুল পরিমাণে কীটনাশক এবং সারের ব্যবহারের ফলেই জলজ জীব এবং ওই চত্বরের পাখিকূলের মৃত্যু হয়েছে । শামুক, জোঁক এবং এল্ক সাপেরা ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে । দেশের নদীগুলির বেশিরভাগই বিষাক্ত অবশিষ্টে ভরতি হয়ে যাচ্ছে । এই দূষিত জল যখন চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন দূষিত পদার্থগুলি খাদ্য শৃঙ্খলেরই অংশ হয়ে পড়ছে । চামড়া, সার, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক কারখানা থেকে বিষাক্ত জল নদীগুলিতে ফেলা হচ্ছে । গ্রাম এমনকী ছোটো ছোটো শহরগুলিতেও এমনই দূষিত, নিকাশি জল, নিকাশি নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে গিয়ে ফেলা হচ্ছে । নদী বাঁধগুলিতে প্লাস্টিক কভার আর পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পড়ে পড়ে জমছে ।

তাছাড়া , বর্জ্য নিষ্কাশন করে, বিশুদ্ধ জল মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের সহজাত । কর্দম্যক্ত নিকাশি নালা এবং ড্রেনগুলি এখন উধাও, ফলে বর্জ্যযুক্ত, শিল্পাঞ্চলের নোংরা জল সরাসরি গিয়ে নদীতে পড়ছে । ভারতে গড়ে দৈনিক পার ক্যাপিটা জল লাগে 135 থেকে 150 লিটার । সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের বক্তব্য অনুসারে, দেশে দিনে 26 হাজার টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয় । যার মধ্যে থেকে মাত্র 7 হাজার 800 টনকে পুর্নব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয় । বাকি 18 হাজার 200 টন জমিতে, নদীতে আর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় । প্লাস্টিকের পণ্য বিয়োজিত হতে 450 বছরও লেগে যেতে পারে । এই সব প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে চারপাশের মাটিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা ভৌমজলের মধ্যে প্রবেশ করে বাস্তুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব আনতে পারে ।

আরও পড়ুন, রেললাইনের পাশ থেকে কর্নাটক বিধান পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের দেহ উদ্ধার

ওয়াটার পলিউশন কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যাক্ট ভারতে 1974 সালে কার্যকর হয়েছে । এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট 1986, হ্যাজ়ার্ডাস ওয়েস্টস (ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হ্যান্ডলিং) অ্যাক্ট 1989, ম্যানুফ্যাকচার স্টোরেজ অ্যান্ড ইমপোর্ট অফ হ্যাজ়ার্ডাস কেমিকেল রুলস 1989, ফরেস্ট কনজ়ারভেশন অ্যাক্ট 1970, ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট 1972 এবং বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট 2002–জলদূষণ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে ।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখনও দূষিত জল ব্যবহার করছে । বছরের হিসাবে দূষিত জলের প্রভাবে কলেরা, টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রির মতো রোগে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় । এদের বেশিরভাগই শিশু । বয়স পাঁচের নিচে । এই ধরনের পরিস্থিতিতে জরুরি হল প্রচারসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কড়া আইন প্রণয়ন করা । যাতে প্রত্যেকে জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.