নয়ডা, 4 জুলাই: প্রেমের টানে সুদূর পাকিস্তান থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চার সন্তানকে নিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন বছর 30-এর মহিলা ৷ পাবজি খেলতে খেলতে গ্রেটার নয়ডার 25-এর যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তাঁর সঙ্গে থাকার স্বপ্ন ছিল চোখে ৷ পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে ৷ তবে অবৈধ ভাবে নথিপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করায় আপাতত সন্তান-সহ ওই যুবতীর স্থান হয়েছে শ্রীঘরে ৷
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা এবং বৈধ নথিপত্র ছাড়া গ্রেটার নয়ডায় বাস করার জন্য গ্রেফতার হওয়া পাকিস্তানি মহিলাকে 14 দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে স্থানীয় আদালত ৷ পুলিশ জানিয়েছে যে, জেল হেফাজতে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর চার সন্তানকে থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক । মহিলার ভারতীয় সঙ্গী, যিনি গ্রেটার নয়ডায় থাকেন ও তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং সঙ্গীর বাবা, যিনি পুরো ঘটনাটি জানতেন, তাঁদেরও হেফাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷
ইমিগ্রেশন ব্যুরো-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি এবং উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডকে ওই পাকিস্তানি মহিলা সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, মে মাসে ভারতে প্রবেশের পরে গ্রেটার নয়ডায় অবৈধভাবে থাকার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ একজন শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, মহিলাটি বৈধ নথি ছাড়াই তাঁর চার সন্তানের সঙ্গে 13 মে ভারতে এসেছিলেন গ্রেটার নয়ডার একজন ব্যক্তির সঙ্গে থাকার জন্য ৷ 2019 সালে অনলাইন গেম পাবজি-র মাধ্যমে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ওই পাক মহিলার । তাঁরা একসঙ্গে অনলাইন গেম খেলার পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে চ্যাট ও ফোন কলও করতেন ৷
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (গ্রেটার নয়ডা) সাদ মিয়া খান সাংবাদিকদের জানান, সীমা গোলাম হায়দার নামে পাকিস্তানি মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা, শচীন মীনা, যিনি ওই মহিলাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং তাঁর বাবা নেত্রপাল মীনা, যিনি এই দম্পতি সম্পর্কে সবকিছু জানতেন, তাঁদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পাকিস্তানি মহিলার চার সন্তান -- যাদের বয়স সাত এবং তার নিচে -- তাদের একটি উপযুক্ত আদালতে হাজির করা হবে এবং আদালতের নির্দেশে তাদের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি কমিশনার ।
আরও পড়ুন: ফের পঞ্জাবে পাক সীমান্তে গুলি করে ড্রোন নামাল বিএসএফ, উদ্ধার মাদক
স্থানীয় রাবুপুরা থানায় বিদেশি আইন, পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা 120বি (অপরাধী ষড়যন্ত্রের জন্য দল) এবং 34-এর ধারায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে । মঙ্গলবার বিকেলে, সীমা, শচীন এবং তাঁর বাবা নেত্রপালকে একটি স্থানীয় আদালতে পেশ করা হয়েছিল, যেখানে তাঁদের 14 দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত ৷
সীমা মে মাসে পাকিস্তান ছেড়ে নেপালে চলে যান ৷ সেখানে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়েছিলেন । তিনি সেখানে পোখরা শহরে থেকে যান এবং কাঠমান্ডু হয়ে দিল্লি যাওয়ার বাসে ওঠেন, এরপর তিনি পৌঁছন গ্রেটার নয়ডায় ৷ 30 বছরের সীমা হায়দার 25 বছর বয়সি মীনার সঙ্গে দেখা করতে ভারতে এসেছিলেন এবং দুজনেই গ্রেটার নয়ডায় একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করেন ।
তিনি একটি ভাড়া করা বাসস্থানে আলাদাভাবে থাকতেন ৷ কিন্তু শীঘ্রই তাঁর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে । দুজনেই সম্প্রতি একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিয়ে করার নিয়ম কানুন জানার জন্য ৷ কিন্তু সেই তথ্য পুলিশের কাছে পৌঁছে যায় ৷ পুলিশ তাঁদের খুঁজছে জানতে পেরে, বাচ্চাদের নিয়ে গ্রেটার নয়ডা ছেড়ে চলে যায় এই যুগল ৷ কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার সময় হরিয়ানার বল্লভগড়ে তাঁদের সন্ধান পেয়ে যায় পুলিশ ৷
সীমা হায়দার পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা এবং 2014 সালে গুলাম হায়দারকে বিয়ে করেন তিনি । তাঁরা 2019 সাল পর্যন্ত করাচিতে একসঙ্গে থাকতেন ৷ এরপর গোলাম কাজের জন্য সৌদি আরবে চলে যান । এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে এবং তাঁর সঙ্গে আসা চার সন্তানের সবাই প্রথম স্বামীর ৷ এই দম্পতির সুখী দাম্পত্য জীবন ছিল না এবং 2019 সালে সীমা হায়দার পাবজি খেলার সময় মীনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলেন ৷