নয়াদিল্লি, 12 মার্চ : জেলে বসেই ছকা হয়েছিল সন্ত্রাসের ছক ? মুকেশ আম্বানির বাড়ির বাইরে দাঁড় করানো বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ির রহস্যভেদে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল পুলিশ ৷ যে টেলিগ্রাম চ্য়ানেলের মাধ্যমে এই ঘটনার দায় স্বীকার করা হয়, সেটি তৈরি করা হয়েছিল তিহার জেলের অন্দর মহলে ! যেখানে বন্দি রয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (আইএম) এক জঙ্গি !
পুলিশ সূত্রে খবর, দিল্লি পুলিশের একটি বিশেষ দল তিহার জেলে বন্দি আবাসিকদের ডেরায় তল্লাশি চালায় ৷ তাতেই উদ্ধার হয় একটি মোবাইল ৷ পরে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্য়ানেলটি সেই মোবাইল ফোন থেকেই তৈরি করা হয়েছিল ! উদ্বেগের বিষয় হল, কারাগারের যেখান থেকে ফোনটি উদ্ধার হয়, সেখানেই বন্দি রয়েছে তেহসিন আখতার ৷ 2014 সালে নরেন্দ্র মোদির জনসভাকে টার্গেট করে পটনায় যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, সেই হামলায় যুক্ত থাকাতেই গ্রেফতার করা হয় আইএম জঙ্গি তেহসিনকে ৷ এছাড়া, হায়দ্রাবাদ ও বুদ্ধ গয়ার ধারাবাহিক বিস্ফোরণেও জড়িত ছিল তেহসিন ৷
সংবাদমাধ্যমকে পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, টোর ব্রাউজার ব্যবহার করে প্রথমে একটি ভার্চুয়াল নম্বর তৈরি করা হয় ৷ পরে সেই নম্বর ব্য়বহার করেই টেলিগ্রাম অ্য়াপের সাহায্যে তৈরি করা হয় একটি চ্যানেল ৷ পরে এই চ্য়ানেলে মুকেশ আম্বানির বাড়ির কাছে বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি রাখার দায় স্বীকার করে একটি ‘মেসেজ’ ছড়িয়ে দেওয়া হয় ৷
ইতিমধ্যেই জেলের মধ্যে উদ্ধার হওয়া ওই মোবাইলটি ‘সিজ’ করেছে পুলিশ ৷ এটিকে প্রমাণ হিসাবে নথিভুক্ত করার পাশাপাশি তেহসিন আখতারকেও হেফাজতে নেওয়ার কথা ভাবছে তারা ৷ এছাড়াও অন্য একটি মোবাইল নম্বরও ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তকারীদের ৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চালু থাকলেও পরে বন্ধ হয়ে যায় এই দ্বিতীয় নম্বরটি ৷ আপাতত সেটির ময়নাতদন্তে চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ ৷ সংশ্লিষ্ট দু’টি নম্বর চালু করতেই ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্য়বহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা ৷
আরও পড়ুন : হেনস্থার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন হিরেন
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে মুম্বই পুলিশ ৷ তিহার জেলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তাতে জড়িয়ে গেল দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলও ৷ সূত্রের খবর, তিহার জেলে উদ্ধার হওয়া মোবাইলটির লোকেশন ট্র্য়াক করতে আগেই একটি বেসরকারি সাইবার সংস্থার সাহায্য নেয় মুম্বই পুলিশ ৷ প্রাথমিকভাবে জানা যায়, সেটি দিল্লির তিহার জেলের আশপাশেই কোথাও রয়েছে ৷ পরে অবশ্য ফোনের হদিশ পেতে জেলের অন্দরে ঢুকতে হয় পুলিশকে ৷
উল্লেখ্য, গত 25 ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ মুম্বইয়ে মুকেশ আম্বানির বাসভবন অ্য়ান্টিলিয়ার কাছেই একটি এসইউভি-কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৷ পরে সেটির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় 20টি জিলেটিন স্টিক ৷ ঘটনায় নাম জড়ায় হিরেন মনসুখ নামে এক ব্য়বসায়ীর ৷ প্রথমে তাঁকেই কালপ্রিট ভেবে বসে পুলিশ ৷ পরে জানা যায়, বিস্ফোরকবোঝাই গাড়িটির মালিক নন তিনি ৷ তবে সেটির অন্দরসজ্জা বদলানোর বরাত পেয়েছিলেন হিরেন ৷ সেই কাজের পারিশ্রমিক না মেলায় গাড়িটি নিজের কাছেই রেখে দেন তিনি ৷ পরে গাড়িটি চুরি হয়ে যায় ৷ এদিকে, বিস্ফোরক উদ্ধারের কয়েক দিন পরই উদ্ধার হয় হিরেনের দেহ ৷ আর এখন এই ঘটনায় নাম জড়াল এক আইএম জঙ্গির ৷ সব মিলিয়ে গোটা ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছেন তদন্তকারীরা ৷