নয়াদিল্লি, 7 অগস্ট: হিংসা-দীর্ণ মণিপুরে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখার জন্য হাইকোর্টের তিনজন প্রাক্তন মহিলা বিচারপতির একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিল সুপ্রিম কোর্ট । এর পাশাপাশি শীর্ষ আদালত সোমবার সিবিআই দলগুলিকে মণিপুরের বাইরের অফিসারদের ওই রাজ্যে কাজে লাগানোর জন্যও প্রস্তাব করেছে এবং সিবিআই তদন্তের তত্ত্বাবধানের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছে ৷ বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মণিপুরের বাইরের ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসারদের নিয়োগের প্রস্তাব করেছে সুপ্রিম কোর্ট । রাজ্য সরকার মামলাগুলির তদন্তের জন্য জেলা এসপিদের নেতৃত্বে সিট গঠনের প্রস্তাব করে ।
ত্রাণ পুনর্বাসনে কমিটি: সোমবার উত্তর-পূর্বের রাজ্যের ভয়ংকর জাতিগত হিংসা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি পিটিশনের শুনানি শুরু করে শীর্ষ আদালত ৷ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ বলেছে যে, বিচারপতিদের প্রস্তাবিত কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তাল ৷ এছাড়াও কমিটিতে থাকবেন বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শালিনী পি জোশি এবং দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আশা মেনন । বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে যে, এই কমিটি ত্রাণ, প্রতিকার এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা দেখবে ।
প্রধান বিচারপতি এ দিন বলেন, কমিটি মানবিক বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখবে । মণিপুরের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিং রাজ্যে হিংসা ও তার কার্যকর তদন্তের উদ্দেশ্যে মামলাগুলিকে বিভক্ত করার পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন । তদন্তের দিক সম্পর্কে, প্রধান বিচারপতি বলেন যে, আদালত সিবিআইকে সরাবে না ৷ কারণ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রাজ্য সরকার কর্তৃক স্থানান্তরিত এফআইআরগুলির তদন্ত করছে ।
শীর্ষ আদালত বলে যে, আইনের শাসনে বিশ্বাস নিশ্চিত করার জন্য, তারা প্রস্তাব করছে যে কমপক্ষে ডেপুটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পাঁচ বা ছয়জন অফিসার থাকতে হবে, যাঁদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সিবিআইতে আনা হবে ৷ এফআইআরগুলির তদন্তের তদারকি করার জন্য সিবিআই-এ ডেপুটেশনের ভিত্তিতে এই অফিসারদের আনা হবে ।
আরও পড়ুন: মণিপুরের ভিডিয়ো কাণ্ডে সাসপেন্ড 5 পুলিশকর্মী, অস্ত্রাগার লুটের তদন্তে আইজি পদমর্যাদার অফিসার
শীর্ষ আদালত বলেছে যে, এই আধিকারিকরা সিবিআইয়ের প্রশাসনিক সেট-আপের চারটি আধিকারিকদের মধ্যেও কাজ করবেন এবং সিবিআইয়ের যুগ্ম পরিচালকের তত্ত্বাবধানে থাকবেন ৷ আদালত অফিসারদের চিহ্নিত করেছে বলেও জানান বিচারপতি। বর্তমানে, সিবিআই 11টি ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের মামলার তদন্ত করছে, যার মধ্যে দুই মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনাও রয়েছে ৷
তদন্তে 42 সিট: শীর্ষ আদালত বলেছে যে, মণিপুর সরকার কর্তৃক 42টি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হবে ৷ প্রতিটি সিটের নেতৃত্বে পরিদর্শক-স্তরের পুলিশ অফিসাররা থাকবেন, যাঁকে রাজ্যের বাইরে থেকে আনা হবে ও প্রতিটি সিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে । পরে আনুষ্ঠানিক আদেশ দেবে সুপ্রিম কোর্ট । পুলিশের তদন্তের তত্ত্বাবধানের জন্য মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন ডিজিপি দত্তাত্রেয় পদসালগিকারকে নিয়োগেরও প্রস্তাব করেছে আদালত ।
জেলাভিত্তিক সিট: মণিপুর সরকার সুপ্রিম কোর্টকে বলেছে যে, রাজ্যের সংঘর্ষে হিংসা সংক্রান্ত মামলাগুলির তদন্তের জন্য জেলাভিত্তিক এসআইটি গঠন করা হবে । উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে হিংসার তদন্তের জন্য আদালতের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটি চেয়ে আবেদনের বিষয়ে নির্দেশ রিসার্ভ রেখেছে শীর্ষ আদালত ৷
1 অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে, মে মাসের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত মণিপুরে আইন-শৃঙ্খলা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটেছে এবং আইন যদি জনগণকে রক্ষা করতে না পারে, তবে তাদের কী অবশিষ্ট থাকে !
আরও পড়ুন: হিংসা অব্যাহত মণিপুরে, জ্বালানো হল 15 বাড়ি; গুলিবিদ্ধ এক
সরকারের রিপোর্ট: রাজ্য সরকারের স্টেটাস রিপোর্ট অনুসারে, হিংসায় আক্রান্ত রাজ্যে 150 জন মারা গিয়েছে, যার মধ্যে 3 মে থেকে 5 মে পর্যন্ত 59 জন মারা গিয়েছে এবং 27 মে থেকে 29 মে পর্যন্ত 28 জন মারা গিয়েছে । 5000টিরও বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, হিংসার জেরে 502 জন আহত হয়েছেন ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, 6500টি মামলার মধ্যে 11টি এফআইআর নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত, যা আরও যাচাইয়ের প্রয়োজন এবং এই 11টি মামলায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।