কলকাতা, 12 জুন: রাইসিনা হিলসের লড়াই কি আবার কাছাকাছি নিয়ে আসবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও সোনিয়া গান্ধিকে (Sonia Gandhi)? এমনিতে মমতা ও সোনিয়া সম্পর্ক বরাবরই ভালো ৷ কিন্তু, কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক ইদানিং যেন তেমন ভাল যাচ্ছে না ৷ এই প্রেক্ষাপটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (Presidential Election 2022) আবহে দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, মমতার দিল্লি যাত্রার মূল লক্ষ্য অবশ্যই বৃহত্তর বিরোধী শক্তিকে পুঞ্জিভূত করা অর্থাৎ যতটা সম্ভব বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা ৷ কিন্তু, সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক রাজ্যে যেভাবে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল শক্তিশালী হয়েছে, তারপর কি পুরনো নৈকট্য আদৌ সম্ভব? সেটাই আসল প্রশ্ন বলে মনে করছেন রাজনীতির সমঝদাররা ৷ সবচেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে সোনিয়া গান্ধি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় হলেও তাঁদের এই সক্রিয়তা বিরোধী শক্তিকে দুই ভাগে ভাগ করে দেবে না তো?
আরও পড়ুন: Sonia Gandhi : করোনার রেশ, হাসপাতালে ভর্তি সোনিয়া গান্ধি
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৷ তিনি স্পষ্ট বলছেন, "শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নয়, দেশের যেকোনও নির্বাচনেই বিরোধী শক্তিগুলির একজোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ৷ কিন্তু এখানে এটাও বাস্তববিরোধী ৷ এই দলগুলির মধ্যে সেতুবন্ধনে প্রধান বাধা বিরোধী নেতৃত্বের আত্মাভিমান ৷ তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝগড়া করে বিজেপি-কে আরও শক্তিশালী করছে ৷ এই পরম্পরা যদি বজায় থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি-র জয় অনেক সহজ হবে ৷"
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় মনে করেন, এই মুহূর্তে গোটা দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির জন্য বিজেপি-ই হল প্রধান শত্রু ৷ আর বৃহত্তম স্বার্থের কথা ভেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত বিরোধী শক্তিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছেন ৷ তিনি ভালোভাবেই বুঝেছেন যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি-কে হারাতে না পারলে আগামীতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন হবে ৷ তিনি আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সময়ের দাবি বোঝেন ৷ একইসঙ্গে বোঝেন সাধারণ মানুষের চাহিদা ৷ আর সেই কারণেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আর পাঁচটি দলের মতো কংগ্রেসের সভানেত্রীও গুরুত্বপূর্ণ ৷"
এআইসিসি-র সদস্য শুভঙ্কর সরকার এই বিষয়ে বলছেন, "বিজেপি-র বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার প্রয়োজন, তা সনিয়া গান্ধি ইতিমধ্যেই করেছেন ৷ একইভাবে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উদ্যোগী হয়েছেন ৷ এক্ষেত্রে দুই শীর্ষ নেত্রী কাছাকাছি আসবে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি ৷ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোনিয়া গান্ধির মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই ভালো ৷ ফলে তাঁরা এই মুহূর্তে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা উপেক্ষা করার উপায় নেই।"