নয়া দিল্লি, 25 এপ্রিল : দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার বেশ কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় সরকারকে অক্সিজেনের সরবরাহ আর হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছিল সংসদীয় একটি কমিটি ৷ এমনকি তারও আগে করোনা সংক্রমণের ফলে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পরে 1 এপ্রিল "সেন্টার ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ইমপ্লিমেনটিং অ্যান এফেকটিভ কোভিড রেসপন্স" 11 জন আধিকারিককে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে ৷ সেই আধিকারিকরাও একটি বৈঠকে অক্সিজেনের অভাবকে "রেড ফ্ল্যাগড" বলে চিহ্নিত করেছিল ৷
আধিকারিকদের একটি বৈঠকে বলা হয়েছিল, "আগামী দিনগুলিতে ভারত অক্সিজেনের অভাবের মুখোমুখি হবে ৷ এই বিষয়ে সিআইআই ইন্ডিয়ান গ্যাস অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলবে আর অক্সিজেনের সরবরাহ স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ করবে ৷" এই বৈঠকটির নেতৃত্বে ছিলেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত ৷
এর পর ওই বছর নভেম্বর মাসে সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদবের নেতৃত্বে তৈরি হয় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি ৷ এই কমিটি জানিয়েছিল ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথোরিটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ন্যায্য মূল্য ঠিক করে দিক, যাতে তা পাওয়া যায় আর তার সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয় ৷
সংসদীয় কমিটি-র "দ্য আউটব্রেক অফ প্যানডেমিক কোভিড-19 অ্যান্ড ইটস ম্যানেজমেন্ট" রিপোর্ট-
নভেম্বর মাসে প্রকাশিত এই সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, "চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালে অক্সিজেনের জোগান ঠিক রাখতে সরকারকে অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে হবে ৷ এ বিষয়ে কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারকে উৎসাহ দিয়েছিল ৷"
দেশে কোভিড-19 সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখে তারা জানিয়েছিল যে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেডের সংখ্যা "একেবারেই যথেষ্ট নয়" ৷
সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তন্নতন্ন করে হাসপাতালে খালি বেড খুঁজ পাওয়ার ঘটনা হৃদয়বিদারক ৷ সংক্রামিত রোগীর ভিড় উপচে পড়েছে হাসপাতালে ৷ খালি বেড নেই, তাই কোভিড রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়াটা এখন নিউ নর্মাল হয়ে গেছে ৷ পটনার এইমস-এ বেডের খোঁজে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে রোগী, এই দৃশ্য মানবিকতাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার প্রমাণ ৷
আরও পড়ুন: ভারতে অক্সিজেনের অভাব "হৃদয়বিদারক", পাশে দাঁড়াতে আহ্বান থুনবার্গের
দেশের অত্যন্ত খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এই কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারকে জনসাধারণের স্বাস্থ্যখাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছিল ৷ এমনকি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করার কথাও বলেছিল ৷
গত বছর 16 অক্টোবর সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রামগোপাল যাদবের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণের একটি বৈঠক হয় ৷ সেখানে রাজেশ কোভিড-19-এর চিকিৎসায় "বাইরে থেকে অক্সিজেনের সাপোর্ট"-এর উপর জোর দেন আর তার "ভালো ফলের" কথা বিশ্লেষণ করেন ৷
ওই বছরেই 21 নভেম্বর কমিটি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে ওই রিপোর্টে পেশ করে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, "স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে যে, মন্ত্রক ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথোরিটি (এনপিপিএ)-এর কাছে অক্সিজেনের দাম বেঁধে দেওয়ার অনুরোধ করেছে ৷ কারণ বাইরে থেকে অক্সিজেনের সাহায্যে খুব ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে..."
সেখানে তিনি এও জানান যে "কোভিড-এর আগে প্রতিদিন 1000 মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন প্রয়োজন হত ৷ আর বাকি 6000 মেট্রিক টন শিল্পে ব্যবহৃত হত ৷ তাই অক্সিজেনের উৎপাদন নিশ্চিত করা দরকার আর তার দাম বেঁধে দেওয়া হোক ৷"
মোটের উপর দেশে প্রতিদিন 6900 মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদিত হয় ৷ এর মধ্যে সেপ্টেম্বেরের মাঝামাঝি 24, 25 সেপ্টেম্বর নাগাদ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মেডিক্যাল অক্সিজেনের দরকার হয়েছিল দেশে ৷ প্রত্যেক দিন প্রায় 3000 মেট্রিক টন অক্সিজেন লাগত সেই সময় ৷
কমিটি ওই দফতরের সঙ্গে একমত যে, প্যানডেমিকের ফলে দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েছে নজিরবিহীন ভাবে ৷ আর হাসপাতালে অক্সিজেনের সিলিন্ডারের অভাবের উদাহরণও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে ৷
বর্তমানে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি-
প্রতিদিন প্রায় 3,00,000 নতুন সংক্রমণের খবর আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৷ বিগত বেশ কিছু দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে ৷ হাসাপাতালগুলিতে মেডিক্যাল অক্সিজেন আর বেডের খোঁজে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষ ৷
এই অবস্থার পূর্বাভাস ছিল সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে ৷ অভিযোগ, রিপোর্টকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার ৷