বেঙ্গালুরু, 26 নভেম্বর: শর্তসাপেক্ষে ধর্ষণ অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করল কর্নাটক হাইকোর্ট (Karnataka High Court) । বিবাহিত মহিলাকে ধর্ষণ এবং মোবাইলে তাঁর নগ্ন ছবির লেনদেনে অভিযুক্ত ছিলেন অভিযুক্ত যুবক । কিন্তু আদালত জানিয়েছে, নিজের ইচ্ছেতেই অভিযুক্তের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ওই মহিলা (Consensual Sex Case) । ফোনের ক্যামেরায় নগ্ন হয়ে অভিযুক্তের সামনে হাজির হন ৷ তাই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ (Allegation of Rape) খাটে না । বরং সম্মতিক্রমেই তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে (Consensual Physical Relationship) জড়িয়েছিলেন ওই মহিলা । কিন্তু মহিলার সম্মতি ছাড়া তাঁর নগ্ন ছবির লেনদেন করাকে কেন ধর্তব্যের মধ্যে আনল না আদালত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
নিজেকে ধর্ষণের শিকার বলে দাবি করে সম্প্রতি থানায় অভিযোগ জানান ওই মহিলা । ধর্ষণ, নগ্ন ছবির লেনদেন-সহ একাধিক ধারায় কোপ্পালের বাসিন্দা অভিযুক্ত বসনগৌড়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি । তার ভিত্তিতে পরের দিনই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ । নিম্ন আদালতে মামলা জমা পড়ে ৷ কিন্তু জামিনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত বসনগৌড়া ৷ বৃহস্পতিবার সেটির শুনানি চলাকালীন, শর্তসাপেক্ষে অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি শিবশঙ্কর অমরান্নানাবর । অভিযোগকারিণীর প্রাণ সংশয় রয়েছে, এমন অভিযোগও খারিজ করে দেয় আদালত ।
এদিন বিচারপতি শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘এটা সম্মতিক্রমে যৌনতার ঘটনা ৷ বিয়ের আগে এবং পরে, নিজের ইচ্ছাতেই অভিযুক্তের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিযোগকারিণী ৷ যৌনাঙ্গ দেখাতে, ভোর 4টে-5টা নাগাদ স্বামীর ফোন থেকে নগ্ন হয়ে অভিযুক্তের সামনে হাজির হন ৷ অভিযুক্তের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরই এমন সিদ্ধান্ত নেন অভিযোগকারিণী ৷ এতেই বোঝা যায়, নিজের ইচ্ছাতেই অভিযুক্তের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি ৷’’
অভিযুক্তের জামিন পেয়ে বেরিয়ে এলে তাঁর প্রাণ সংশয় রয়েছে বলে আদালতে জানান অভিযোগকারিণী মহিলা ৷ কিন্তু তাঁর দাবি খারিজ করে দেয় আদালত ৷ আদালত জানায়, অভিযুক্তের নামে অপরাধের কোনও পূর্ব রেকর্ড নেই ৷ তথ্যপ্রযুক্তি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বটে ৷ সে ক্ষেত্রে 3 বছরের জেল হতে পারে অভিযুক্তের ৷ জরিমানা করা হতে পারে 5 লক্ষ টাকা ৷ কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এমন কোনও অভিযোগ নেই , যাতে যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে তাঁর ৷ সে ক্ষেত্রে জামিন না দেওয়ার কোনও কারণ নেই ৷ আর অভিযোগকারিণী স্বেচ্ছায় যখন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এবং তা নিয়ে মামলা করেছিলেন, সে ক্ষেত্রে প্রাণ সংশয়ের বিষয়টি নিম্ন আদালতই দেখবে ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগকারিণী মহিলা এবং অভিযুক্ত বসনগৌড়া দূর সম্পর্কের আত্মীয় এবং একই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৷ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন বসনগৌড়া ৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় অভিযোগকারিণীর ৷ কিন্তু বিয়ের পরেও বসনগৌড়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক (Extra Marital Affair) চালিয়ে যান তিনি ৷ গত এপ্রিল মাসে তাঁর কাছে নগ্ন ছবির আবদার করেন বসনগৌড়া ৷ তাতে নগ্ন হয়ে স্বামীর ফোন থেকে ভিডিয়ো কল করেন ওই মহিলা ৷
সেই সময় বসনগৌড়া অভিযোগকারিণীর নগ্ন দেহের স্ক্রিনশট নিয়ে নেন বলে অভিযোগ ৷ এরপর অভিযোগকারিণীর সঙ্গে দিন পনেরো কোনও যোগাযোগ ছিল না বসনগৌড়ার ৷ ফোন না আসায়, গত 5 এপ্রিল ফোনে মজুত রাখা স্ক্রিনশটগুলি মহিলার স্বামীকে বসনগৌড়া পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ ৷ এর পর ওই মহিলাকে তাঁর স্বামী বাপের বাড়ি ফেরত পাঠান সেখান থেকেই বসনগৌড়ার বিরুদ্ধে থানায় যান অভিযোগকারিণী ৷ কিন্তু সম্মতিক্রমে সম্পর্কে লিপ্ত হলেও, মহিলাকে না জানিয়েই বসনগৌড়া তাঁর নগ্ন শরীরের স্ক্রিনশট নেনে এবং সেগুলি মহিলার স্বামীকে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ ৷ তাই অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷