লখনউ, 21 অগস্ট : স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বাবরি মসজিদ ধ্বংস কাণ্ড (Demolition of the Babri Masjid) ৷ তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিং (Kalyan Singh) ৷ এই ঘটনার পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইস্তফা দিলেও এই ঘটনায় কখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি ৷ বরং এই সাম্প্রদায়িক ঘটনা নিয়ে গর্ব বোধ করতেন ৷ যথারীতি রামচন্দ্রের 'বিরাট ভক্ত' হিসেবেও পরিচিতি পান তিনি ৷ আর রামমন্দির নিয়ে আন্দোলনের 'হিরো' হয়ে গিয়েছিলেন ভক্ত কল্যাণ ৷ রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে বিক্ষোভের জেরে জাতীয় রাজনীতিতে উত্থান ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির (Bharatiya Janata Party- BJP) ৷ আর স্বভাবত এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতারা রাজনৈতিক সুবিধে পেয়েছিলেন ৷ হিন্দুত্বের এই ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে এই গেরুয়া দল শুধুমাত্র কেন্দ্রেই নয়, হিন্দু জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতেও ক্ষমতায় আসে ৷
কল্যাণ সিংয়ের কঠোর সিদ্ধান্ত
1992, 6 ডিসেম্বর ৷ সকালে অযোধ্যার বিতর্কিত জায়গা ঘিরে তাণ্ডব চালাচ্ছে বহু করসেবক ৷ সেদিন ফৈজাবাদ (Faizabad) জেলার (এখন অযোধ্যা) জেলাশাসক ( District Magistrate) রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত রিপোর্ট পাঠিয়ে গুলি চালানোর অনুমতি চান ৷ প্রবীণ সাংবাদিক পিএন দ্বিবেদী জানিয়েছেন, তৎকালীন মুখ্য সচিব (Chief Secretary) ফৈজাবাদের জেলাশাসকের রিপোর্টটি কল্যাণ সিংয়ের সামনে রাখেন ৷ রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ করা ছিল যে, 3-4 লক্ষ করসেবক সাকেত মহাবিদ্যালয়ের (Saket Mahavidyalaya) কাছে জড়ো হয়েছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে গুলি চালানো হবে কি না, জানতে চেয়েছিল জেলা প্রশাসন ৷ এমনকি ওই রিপোর্টে এটাও বলা ছিল যে, গুলি চালালে প্রচুর রক্ত ঝরবে ৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কল্যাণ গুলি চালানোর অনুমতি দেননি ৷ তিনি জেলা প্রশাসনকে অন্যভাবে এই জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করার উপায় খোঁজার কথা জানান ৷ তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন শান্তিপূর্ণ ভাবে এই বিপুল সংখ্যক করসেবকদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বাবরি মসজিদকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি ৷ ফলস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ৷
বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন মীর বাকি
মনে করা হয় যে, মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন 1528 খ্রিস্টাব্দে ৷ তবে ওই জায়গায় তার আগে রামের মন্দির ছিল ৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে সেই মন্দির ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ বানিয়েছিলেন বাবরের সেনাপ্রধান ৷ সেই বিশেষ দিন প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেছিলেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংস, তাঁর সরকারের পতন আর রামমন্দির নির্মাণের সম্ভাবনা আরও শক্তিশালী হয়েছিল ৷ এতেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তিনি অন্য কাউকে নয়, বরং নিজেকেই দায়ী করেছিলেন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য ৷
অযোধ্যায় মন্দিরের ভূমিপুজোর সময় উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ
দ্বিবেদীর কথা অনুযায়ী, কল্যাণ সিং নিজে তখন জানিয়েছিলেন, রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের সময়টা তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল ৷ 5 অগস্ট, 2020, অযোধ্যায় ভূমিপুজোতে ছিলেন তিনি ৷ এই দিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার জীবনে অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিন এটা ৷ অযোধ্যায় ভগবান রামকে দেখব, আমি সারা জীবন ধরে এই স্বপ্ন দেখে এসেছি ৷ আজ তা পূর্ণ হল ৷" এমনকি তিনি এটাও জানিয়েছিলেন যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণে তাঁর সরকার পড়ে গিয়েছিল, এ নিয়ে কখনও কোনও অনুতাপ করেননি তিনি ৷
লিবারহান কমিশনের রিপোর্ট কল্যাণ সিংকে অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছিল
অযোধ্যায় বিতর্কিত স্থাপত্য ভেঙে ফেলার তদন্তে লিবারহান কমিশন (Liberhan Commission) গঠন করা হয় ৷ তারা তাদের রিপোর্টে কল্যাণ সিংকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল ৷ যাই হোক, একবার সংবাদমাধ্যমে সিং কমিশনের রিপোর্টকে আবর্জনা বলে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে দেওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন ৷ এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি (John F. Kennedy), ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি (Indira Gandhi) এবং রাজীব গান্ধি (Rajiv Gandhi) হত্যার উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন ৷ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও এঁদের সবাইকে হত্যা করা হয় ৷ তারপর অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন, ওই ধ্বংসের তাণ্ডব বন্ধ করতে তিনি সব দিক দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়টি সামলানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে ৷ খোলাখুলি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি, কারণ তাতে বহু রাম-ভক্ত কর সেবকের প্রাণ যেত ৷ আর তিনি এই পাপের ভার বইতে চাননি ৷ এটাকে একটা স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ৷ বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে কোনও ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অস্বীকার করেছিলেন কল্যাণ সিং ৷
আরও পড়ুন : Kalyan Singh: প্রয়াত কল্যাণ সিং