মেলবোর্ন, 6 জুলাই: প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে 21 বছর বয়সী ভারতীয় নার্সিং ছাত্রীকে নৃশংস খুন ৷ কেবলের তার দিয়ে বেঁধে তাঁকে জ্যান্ত কবর দেয় অভিযুক্ত ৷ খুনের নেপথ্যে কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল প্রতিশোধের স্পৃহা ৷ 2021 সালের মার্চে জসমিন কৌর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ৷ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ব়েঞ্জসের ঘটনায় বুধবার অভিযুক্ত তারিকজোত সিংকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ আদালত ৷
জানা গিয়েছে, জসমিন কৌরকে 23 বছর বয়সী তারিকজোত সিং প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন জসমিন ৷ সেই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেননি অভিযুক্ত ৷ এরপরেই তার মধ্যে প্রতিশোধের হিংসা বাড়তে থাকে ৷ 2021 সালের 5 মার্চ, জসমিনের কর্মস্থল নর্থ প্লিমটন, অ্যাডিলেড থেকে তাঁকে অপহরণ করে অভিযুক্ত ৷ এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্লিন্ডার্স ব়েঞ্জসে ৷ সেখানেই তাঁকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয় তারিকজোত ৷ নিহত তসমিনের মা অভিযোগ করে বলেছেন, একশোবার তাঁর মেয়ে প্রেমের প্রস্তাবে না-বলার পরেও পিছু ছাড়েনি তারিকজোত ৷ বারবার তাঁকে বিরক্ত করত ৷ জসমিনের প্রেমে অন্ধ ছিল অভিযুক্ত ৷ তাঁকে বিয়েও করতে চেয়েছিল ৷ কিন্তু মেয়ে না-বলায়, তাঁকে খুন করেছে তারিক ৷
এবিসি নিউজ অনুসারে, বুধবার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সুপ্রিম কোর্টে অভিযুক্তকে সাজা ঘোষণার সময়, প্রসিকিউটর কারমেন ম্যাটিও আদালতে বলেছিলেন যে, 5 মার্চ, 2021-এ অভিযুক্ত জসমিনকে তাঁর কর্মস্থল থেকে অপহরণ করে ৷ তাঁর উপর নারকীয় অত্যাচার করা হয়েছিল ৷ তিনি আরও জানান যে, নার্সিং-এর ছাত্রীকে তারিকজোত অপহরণ করার পরে, টেপ এবং কেবল তার দিয়ে বেঁধে রাখে ৷ এমনকী বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তাঁর চোখও ৷ এরপর জ্যান্ত অবস্থায় জসমিনকে কবর দেয় অভিযুক্ত ৷ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন 21 বছর বয়সী জসমিন ৷
তারিকজোতের অপরাধের বিবরণ দিতে গিয়ে আইনজীবী ম্যাটিও আদালতে জানান, অভিযুক্ত পুলিশের চোখে ফাঁকি দেওয়ার জন্য, নির্যাতিতার গলায় সুপারফিসিয়াল বা অগভীর দাগ কেটেছিল ৷ কিন্তু সেই আঘাতে মৃত্যু হয়নি জসমিনের ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, জসমিনের মৃত্যু হয়েছে 6 মার্চ, 2021 ৷ তিনি বলেন, "অভিযুক্তের খুন করার ধরণ দেখে বোঝা যায়, পুরো ঘটনাটি ঘটেছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ৷" মূলত, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজই পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে অভিযুক্ত তারিকজোতকে ৷ কারণ সেই ফুটেজে তাঁকে হার্ডওয়্যার দোকান থেকে কেবল তার, গ্লাভস ও বেলচা কিনতে দেখা গিয়েছে ৷
আদালতে খুনের কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে যে, জসমিনের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেছিলেন তারিক ৷ তারিকের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে গিয়েছিলেন ৷
আরও পড়ুন: অশ্লীল ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগ
তবে বিচারক অ্যাডাম কিম্বার বলেন, "তারিকজোত নিহত জসমিনকে খুন করেছেন ৷ প্রত্যাখানের প্রতিশোধ নিতে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন ৷ তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হল ৷ পরের মাসে নন-প্যারোলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।" প্রসঙ্গত, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলে বাধ্যতামূলক ন্যূনতম 20 বছরের নন-প্যারোল কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় ৷