নয়াদিল্লি, 28 নভেম্বর: আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা পুনরায় চালুর ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল আগেই । কিন্তু তাতে বাদ সাধছে করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন (COVID Omicron Variant) । এমন পরিস্থিতিতে উড়ান চালুর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র । একদিন আগেই জরুরি বৈঠকে বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi on Omicron) । রবিবার সেই নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা । সেখানেই সব দিক নতুন করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
এদিন কেন্দ্রের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয় যে, ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে যাঁরা ভারতে আসছেন, তাঁদের করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে । তাঁরা কার কার সংস্পর্শে আসছেন, নজর রাখা হচ্ছে তাঁর উপরও । যে দেশগুলিতে করোনার নয়া রূপের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে । তার ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভিকে পাল, বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা বিজয় রাঘবন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং বিমাণ পরিবহণ মন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা । সেখানেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে বলে ঠিক হয় । আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে কী কী বাড়তি বিধিনিষেধ চালু করা যায়, সুষ্ঠভাবে উড়ান পরিষেবা কীভাবে চালু রাখা যায় এবং যাত্রীদের উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র ।
দিন তিনেক আগেই কেন্দ্র জানায়, 15 ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা আগের অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে । 50 শতাংশ যাত্রী নিয়ে, কোভিড বিধি মেনে পরিষেবা চালু হবে বলে জানানো হয় । কিন্তু করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন একাধিক দেশে থাবা বসানোয়, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় । শনিবার জরুরি বৈঠকে মোদিও (Narendra Modi COVID Meeting) সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখার কথা বলেন ।
অতিমারির প্রকোপে না কাটতেই, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন, বিজ্ঞানসম্মত নাম বি.1.1.529 (COVID Variant B.1.1.529) -এর প্রকোপ দেখা দেয় । বৎসোয়ানা এবং হংকংয়েও বেশ কয়েক জন তাতে আক্রান্ত হন । গত তিন-চার দিনে শতাধিক মানুষের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে । তাতেই ফের সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা । তাঁদের দাবি, করোনার এই নয়া রূপ 32 বার বিবর্তিত হয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে । সরাসরি মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর আঘাত হানে সেটি । সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে যাঁদের, তাঁদেরও নিস্তার নেই ।
বিষয়টি সামনে আসতে ভারতেও উদ্বেগ ছড়ায় । যে তিন দেশে ওমিক্রণ সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে, সেগুলিকে তো বটেই, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, চিন, মরিসাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবোয়ে, সিঙ্গাপুর এবং ইজরায়েল— মোট 16টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্র । সেখান থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় । আরও পড়ুন: Narendra Modi in COVID Meeting: ওমিক্রন নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ, মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় জোর মোদির
অন্য দিকে, যে সমস্ত দেশে ওমিক্রনের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, বন্দে ভারত মিশনের আওতায় সেখান থেকে ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র । এ ছাড়াও, উড়ান বুদ্বুদের মাধ্যমে বিশেষ নীতি ঠিক করা হয়েছে, যার আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নেই এমন দেশের সঙ্গে আগের মতোই উড়ান সংযোগ চালু থাকবে । ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে অথচ আগে থেকে উড়ান সংযোগ নিয়ে সমঝোতা হয়ে রয়েছে, তাদের সঙ্গে উড়ান সংযোগ থাকবে 75 শতাংশ । তবে তালিকায় থাকা যে দেশগুলির সঙ্গে এমন কোন সমঝোতা নেই, তাদের সঙ্গে 50 শতাংশ উড়ান সংযোগ থাকবে ভারতের ।