নয়াদিল্লি, 3 জুলাই : করোনা আবহে ব্ল্য়াক ফাংগাসের মতো ছত্রাকের হানায় অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে নয়া দিশা দেখালেন আইআইটি দিল্লির (IIT Delhi) একদল মহিলা গবেষক ৷ শাক-সবজি থেকে যে ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন বা ছত্রাক সংক্রমণ চোখে ছড়ায়, তা রুখতেই একটি প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন এই মহিলা গবেষকরা ৷
গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন অর্চনা চুঘ ৷ তিনি কুসুম স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে অধ্যাপনা করেন ৷ সূত্রে খবর, অর্চনার নেতৃত্বেই এই দলের সদস্যারা নভেল পেপটাইড-ভিত্তিক (novel peptide-based) একটি অ্য়ান্টিফাঙ্গাল (antifungal strategy) পরিকল্পনা তৈরি করেছেন ৷ যা চোখে ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনাকে কমাবে ৷
আরও পড়ুন : উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দু‘দিনে ব্ল্যাক ফাংগাসে তিনজনের মৃত্যু
প্রসঙ্গত, ভারতীয়দের একটা বড় অংশই কৃষিজীবী ৷ এঁদের অনেকের মধ্যেই ‘ভেজিটেটিভ ট্রমা’র (vegetative trauma) প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ৷ কী এই ভেজিটেটিভ ট্রমা ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাকপাতা, সবজি থেকে অনেকেরই চোখে ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়ায় ৷ তাকেই ভেজিটেটিভ ট্রমা বলে ৷ উল্লেখ্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয় বাড়িয়েছে ব্ল্য়াক, হোয়াইট, ইয়েলো ফাংগাসের সংক্রমণ ৷ তথ্য বলছে, পচা শাক, সবজি, আনাজ, ফল থেকে এই ধরনের সংক্রমণ ঘটে ৷ তাতে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ফাংগাল কেরাটিটিস’ (fungal keratitis) ৷ অর্চনা এবং তাঁর সহকর্মীরা যে antifungal strategy তৈরি করেছেন, তা এই ফাংগাল কেরাটিটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ৷ ইতিমধ্যেই গবেষণাগারে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে ৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হাতে আসা তথ্য বলছে, উন্নয়নশীল দেশের বহু মানুষ এক চোখে দেখতে পান না ৷ ফাংগাল কেরাটাইটিসই তাঁদের এই দুবস্থার জন্য দায়ী ৷ ল্য়ানসেট পত্রিকায় (Lancet) সম্প্রতি একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে ৷ তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রতি এক লাখ মানুষ, যাঁরা ফাংগাল কেরাটিটিসের জন্য তাঁদের এক চোখের দৃষ্টি হারান, তাঁদের মধ্যে 50 শতাংশেরও বেশি হয় দক্ষিণ এশিয়া, আর না হয় ভারতের বাসিন্দা ৷
সম্প্রতি আইআইটি দিল্লির তরফেই জানানো হয়েছিল, ফাংগাল কেরাটাইটিসকে রোখার জন্য ওষুধ যে একেবারে নেই, তা নয় ৷ কিন্তু সেই ওষুধের কার্যকারিতা যথেষ্ট নয় ৷ ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না ৷ বিশেষ করে রোগ যদি অতিরিক্ত ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আর চিকিৎসকদের বিশেষ কিছুই করার থাকে না ৷ কিন্তু অর্চনাদের তৈরি antifungal strategy এক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকর হবে ৷ ফলে তা চোখে এই ধরনের ফাংগাসের হানাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে ৷
আরও পড়ুন : কালোবাজারি রুখতে সিদ্ধান্ত, সরকার অনুমোদিত সংস্থাতেই মিলবে ব্ল্যাক ফাংগাসের ইঞ্জেকশন
অর্চনা নিজে তাঁদের আবিষ্কার নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী ৷ তিনি বলেন, তাঁদের গবেষণার সাফল্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানের আদর্শ নিদর্শন ৷ তবে এই ব্যবস্থাকে সাধারণের জন্য ব্যবহার করতে গেলে আরও কিছু ধাপ পেরোতে হবে অর্চনাদের ৷ ইতিমধ্যেই অন্য প্রাণির দেহে নয়া এই ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হয়েছে ৷ তার ফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক ৷ তাই মানবশরীরেও এর সুফল মিলবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা ৷ আশার আলো দেখছেন চক্ষু বিশারদরাও ৷