নয়াদিল্লি, 2 জুলাই: বালুচিস্তানের নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী, নাইলা কাদরি বালুচ বর্তমানে তাঁর দেশকে পাকিস্তানি 'দখল' থেকে মুক্ত করতে এবং তাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমর্থন সংগ্রহের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করছেন ৷ গত মঙ্গলবার তিনি ইটিভি ভারত-এর দিল্লি অফিসে ছিলেন । আমাদের ন্যাশনাল ব্যুরো চিফ রাকেশ ত্রিপাঠী তাঁর একটি সাক্ষাত্কার নেন ৷ এখানে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হল ।
ইটিভি ভারত (ইটিবি): আপনি এক বছর পর ভারতে এসেছেন । ভারত থেকে আপনি কি আশা করেন ?
নায়লা কাদরি: ভারতের জনগণের কাছে আমাদের প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি । বালুচিস্তান জ্বলছে, সেখানে গণহত্যা চলছে । সেই আগুন নেভাতে আমরা ভারতের দিকে তাকিয়ে আছি । আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কথা বলছি । আমরা সবে ইউরোপের সাতটি দেশ ঘুরে ফিরেছি । আমরা অনেক ইউরোপীয় সংসদ সদস্য এবং কৌশলবিদ-সহ সেখানকার লোকেদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং রাষ্ট্রসংঘে গিয়েছিলাম ও সেখানে আমাদের কথা বলেছি । এ সব করার পর ভারতের কথা মনে পড়ে ।
ভারতে যাঁদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন । ভারতে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে আমি নতুন শক্তি পাই, তাই এখানে যে ভালোবাসা এবং সম্মান পাওয়া যায়, তা বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায় না ।
ইটিবি: কোনও আশা আছে ?
কাদরি: ভারতের জনগণের কাছ থেকে অনেক আশা রয়েছে । আমাকে বলা হয় আপনি বারবার ভারতে যান, কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার বালুচদের জন্য কিছুই করেনি । আমার উত্তর হল, একটি হল ভারত সরকার এবং একটি ভারত দেশ । আমরা ভারতে যাই । যেদিন আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে এই যুদ্ধে হেরে যাব, সেদিন ভারতে আসবে 'গাজওয়া-ই-হিন্দ'। আমাদেরকে মেরে ওরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করে, তোমাদের মেরে এখানেও তাই করবে ।
আরও পড়ুন: বালুচিস্তান ও PoK নিয়ে অখণ্ড ভারত হবে, পোস্টার ইসলামাবাদের রাস্তায়
ইটিবি: আপনি অভিযোগ করছেন যে, আপনার লড়াইয়ের জন্য আপনি ভারতের কাছ থেকে সাহায্য পান না । পাকিস্তান বলছে, ভারত বালুচদের সাহায্য করে । আপনি এটা কীভাবে দেখেন ?
কাদরি: এটা দেখে দুঃখ লাগে যে আমরা যখন কোনও সাহায্য ছাড়াই একা আমাদের যুদ্ধ লড়ছি, তখন আমরা যা করি তার কৃতিত্ব ভারত পায় । লোকে বলে, ভারত আপনার উপর ডলার বর্ষণ করছে । আমরা বলি যে আমাদের ডলারের দরকার নেই । আমরা চাই ভারত রাষ্ট্রসংঘে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের পক্ষে দাঁড়াক ।
ইটিবি: আপনার পক্ষ থেকে বালুচিস্তানের স্বাধীনতার প্রচেষ্টা চলছে, আপনি কি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন আরেকটি বাংলাদেশ দেখছেন ?
কাদরি: বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল, আমরা পাকিস্তানের অংশ ছিলাম না । বাংলাদেশ এবং আমাদের ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন । আমাদের এখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু হিন্দু বালুচরাও একই সম্মানের সঙ্গে বসবাস করে । বালুচিস্তান একটি স্বাধীন দেশ ছিল এবং আমরা আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পাব । 100 বছর বা 1000 বছর লাগবে, বালুচরা তাদের দেশ ফিরিয়ে নেবে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমরা কারও দাসত্বে থাকতে পারি না ।
ইটিবি: আপনি কি মনে করেন না যে, সিপিইসি আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের স্বাধীনতা পাওয়ার লড়াই আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে?
কাদরি: সিপিইসি বা বিআরআই কোথাও সাফল্য পাচ্ছে না । এর মূল কারণ হল এই যে, এই লোকেরা পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য নিয়ে গোয়াদর এলাকায় এসে আমাদের হত্যা করছে, মানুষের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, যাকে খুশি অপহরণ করছে, মেরে ফেলছে ৷ এই প্রকল্পটি প্রথম দিন থেকেই বালুচ জনগণের বিরুদ্ধে ছিল ।
আরও পড়ুন: ধারাবাহিক বিস্ফোরণ পাকিস্তানের বালুচিস্তানে, মৃত কমপক্ষে 5
ইটিবি: সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সাহায্য পাচ্ছেন কোথা থেকে ?
কাদরি: সাহায্য থাকলে তারা আমাদের দখল করতে পারত না । ইতিমধ্যে 74 বছর লেগেছে, কারণ আমরা একা লড়ছি ৷ আমরা সাহায্য পেলে দুই দিনের মধ্যে বালুচিস্তান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেব ।
ইটিবি: আপনার মতে, বালুচিস্তানের স্বাধীনতার ব্যাপারে ভারত কোথায় ভুল করেছে ?
কাদরি: আপনি যদি দৃষ্টান্ত গণনা করতে শুরু করেন, তাহলে অনেকগুলি আছে । 1947 সালে, যখন জিন্নাহ বার্তা পাঠাতে শুরু করেন যে, বালুচিস্তানকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে, তখন বালুচ নেতারা ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন কিন্তু নেহেরু বলেছিলেন যে, আমরা কিছুই করতে পারি না । পরের মাসেই পাকিস্তান আমাদের আক্রমণ করে । এরপর 1971 সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যখন চলছিল, তখন আমাদের নেতা নবাব আকবর খান বুগতি শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন । কিন্তু আপনার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাহায্য করতে অস্বীকার করেন ।
ইটিবি: 2016 সালে, মোদি লালকেল্লা থেকে বালুচিস্তানের কথা উল্লেখ করেছিলেন । কিন্তু এর পর আবার সেই বিষয়টি উধাও হয়ে যায় ।
কাদরি: লালকেল্লা থেকে বালুচিস্তানের উল্লেখ করার পর বালুচদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছিল । কিন্তু এরপর আর কিছুই হয়নি । তবে তার পরপরই পাকিস্তান বাহিনী কালাতে গিয়ে কালী মন্দির ধ্বংস করে এবং বালুচদের উপর অত্যাচার বাড়ায় । তারা বালুচদের হত্যা করে এবং 'বাঁচানোর জন্য মোদিকে ডাকো' বলে ঠাট্টা করে ।
ইটিবি: আপনি কি কখনও সংঘের নেতাদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন ?
কাদরি: আমরা আমাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরেছি । কিন্তু মানুষ ভাবে বাংলাদেশ তৈরি করে আমরা কী পেয়েছি । সেখানেও হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে । সুবিধা হল বিশ্বের প্রতিটি ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ।
