নয়াদিল্লি, 31 ডিসেম্বর: বছর শেষের উন্মাদনায় ব্যস্ত সারা ভারত৷ সেই উন্মাদনার শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ৷ দেশবাসীর সঙ্গে 2023 সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তাঁরাও ৷ কারণ, তাঁরা জানেন যে আগামী বছর দেশের রাজনীতির জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে একাধিক রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠনের শক্তি যাচাই করার সুযোগ রয়েছে তাঁদের সামনে ৷
2023 সালের শুরু থেকে শেষ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনী যুদ্ধ রয়েছে (Political Battles in 2023) ৷ উত্তর পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম ভারত, মধ্য থেকে দক্ষিণ ভারত, অন্তত 9টি রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা ভোট রয়েছে ৷ কোথাও সম্মুখ-সমরে দেখা যাবে কংগ্রেস (Congress) ও বিজেপিকে (BJP) ৷ আবার কোথাও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই হবে ভারতীয় জনতা পার্টির ৷
2024 এর লোকসভা ভোট যদি নির্বাচনী যুদ্ধের ফাইনাল হয়, তাহলে 2023-এর 9 রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সেমি ফাইনাল বলা যেতেই পারে ৷ আর সেই সেমি ফাইনাল গেরুয়া শিবিরের থেকেও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ৷ বিশেষ করে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে কংগ্রেস ৷ চব্বিশে নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) পরাস্ত করতে তেইশের সব ভোটেই ভালো করতেই হবে রাহুল গান্ধির (Rahul Gandhi) দলকে ৷
আগামী বছর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তীশগড়, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে ৷ তার সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভার ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে কুর্সির লড়াই থেকে মোরবির দুর্ঘটনা, বাইশে দেশের সেরা বারো
এই রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্থান ও ছত্তীশগড়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে ৷ দুই রাজ্যেই 2018 সালে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস ৷ রাজস্থানে 2013 সালে বিজেপি পেয়েছিল 163টি আসন ৷ সেখান থেকে 200 আসনের ওই বিধানসভায় 2018 সালে বিজেপি 73 এ নেমে আসে ৷ 100 আসনে জিতে সরকার তৈরি করে কংগ্রেস ৷
কিন্তু গত পাঁচ বছর বারবার ওই রাজ্যে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে ৷ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে উপ মুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের বিরোধ৷ শচীনের পদত্যাগ ও বিদ্রোহ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে এআইসিসি-র নেতাদের ৷ তার উপর রাজস্থানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার হস্তান্তর হয় ৷ 1990 সাল থেকে কোনও রাজনৈতিক দলই পরপর দু’বার এখানে সরকার গড়তে পারেনি ৷ তাই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে রাহুল-সোনিয়াদের কাছে অগ্নিপরীক্ষার সামিল ৷
অন্যদিকে ছত্তীশগড় বিধানসভার আসন সংখ্যা 90 ৷ 2018 সালে কংগ্রেস সেখানে 63 আসনে জিতে সরকার গড়েছিল ৷ 15 বছরের বিজেপি শাসনের অবসান ঘটে ওই রাজ্যে ৷ বিজেপি পেয়েছিল মাত্র 15টি আসন ৷ ওই রাজ্যেও এবার সরকারে টিকে থাকার লড়াই করবে কংগ্রেস ৷ আর বিজেপি লড়বে সরকারে ফেরার লড়াই ৷
2018 সালে আরও দু’টি রাজ্যে সরকার গড়তে পেরেছিল কংগ্রেস ৷ একটি মধ্যপ্রদেশে, দ্বিতীয়টি কর্ণাটকে ৷ মধ্যপ্রদেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস ৷ মুখ্যমন্ত্রী হন কমল নাথ ৷ 15 বছরের বিজেপি শাসনের অবসান ঘটে ওই রাজ্যেও ৷ কিন্তু দু’বছরের মধ্যে অন্দরের বিদ্রোহ সামাল দিতে না পেরে বিরোধী আসনে বসতে হয় কমল নাথদের ৷ সেই সময় 22 জন বিধায়ক ও হেভিওয়েট জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন ৷ মধ্যেপ্রদেশে আবার সরকার গড়ে গেরুয়া শিবির ৷ ফের মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ সিং চৌহান ৷
কর্ণাটকের অঙ্কটা অবশ্য় একটু অন্যরকম ছিল ৷ সেখানে 2018-তে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা তৈরি হয় ৷ একক বৃহত্তম দল হিসেবে সরকার গড়ে বিজেপি৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিএস ইয়েদুরাপ্পা ৷ কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন ৷ সেই সময় কংগ্রেস ও জেডিএসের জোট সরকার তৈরি হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী হন দেবেগৌড়ার পুত্র কুমারস্বামী ৷
যদিও সেই সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ৷ 14 মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকজন বিধায়কের পদত্যাগে কুমারস্বামীর সরকারের পতন হয় ৷ ফের বিজেপি ক্ষমতায় আসে দক্ষিণের ওই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হন বিএস ইয়েদুরাপ্পা ৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি ৷
2018 সালে কর্ণাটকে বিজেপি, জেডিএস ও কংগ্রেসের ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল ৷ এখন দেখার এবার সেই রকম লড়াই হয় ! নাকি বিজেপিকে হারাতে ভোটের আগেই জোট গড়ে কংগ্রেস ও কুমারস্বামীর দল ৷
আরও পড়ুন: 5 জানুয়ারি ত্রিপুরায় বিজেপির রথযাত্রার সূচনা করবেন অমিত শাহ
দক্ষিণের আরও একটি রাজ্য তেলঙ্গানাতেও এবার ভোট রয়েছে ৷ ওই রাজ্য গঠনের পর থেকে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ৷ তিনি এবার জাতীয়স্তরে মোদি বিরোধিতাকে উচ্চগ্রামে তুলতে চান ৷ তাই দলের নাম তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি থেকে বদলে ভারত রাষ্ট্র সমিতিতে পরিণত করেছেন তিনি ৷ সেখানে কেসিআর-কে হারাতে মরিয়া বিজেপি ৷ ফলে ওই রাজ্যেও নির্বাচনী যুদ্ধ জমজমাট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷
উত্তর পূর্ব ভারতেরও চার রাজ্যে ভোট রয়েছে ৷ সেই চার রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরায় ৷ ওই রাজ্যে 2018 সালে দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি ৷ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিপ্লব দেব ৷ চলতি বছরের মাঝামাঝি বিপ্লবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি ৷ গতবার সিপিএম ও বিজেপির মুখোমুখি লড়াই হয়েছিল ৷ এবার তৃণমূল কংগ্রেসও (Trinamool Congress) রয়েছে আসরে ৷ ফলে 60 আসনের এই বিধানসভার লড়াই যে জমজমাট হবে, তা বলাই বাহুল্য ৷
ত্রিপুরার মতো মেঘালয়ের রাজনৈতিক ময়দানেও তৃণমূল কংগ্রেস রয়েছে ৷ ওই রাজ্যে আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দলই প্রধান বিরোধী ৷ যদিও 2018 সালে তৃণমূলের উপস্থিতি ছিল না ৷ পাঁচ বছর আগে সেখানে একক বৃহত্তম দল হয়েছিল কংগ্রেস ৷ কিন্তু তারা সরকার গড়তে পারেনি ৷ মাত্র দু’টি আসনে জিতেও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা এনপিপি-র সঙ্গে জোট গড়ে বিজেপিই সেখানে সরকারে সামিল হয় ৷
যদিও 2023-এর নির্বাচনী ময়দানে একাই লড়তে হবে বিজেপিকে ৷ কারণ, ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি-র প্রধান আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর দল এবার একা ভোটে লড়বে ৷ ফলে ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল, বিজেপি ও এনপিপি-র ত্রিমুখী লড়াই নিশ্চিত ৷
অন্যদিকে উত্তর পূর্বের আরও দু’টি রাজ্য নাগাল্যান্ড ও মিজোরামেও জোট সরকারে রয়েছে বিজেপি ৷ সেখানে আগে কংগ্রেসের শক্তি থাকলেও, এখন তা নেই বললেই চলে ৷ তাই এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস আবার শক্তি ফেরাতে সমর্থ হবে কি না, সেই উত্তর দেবে নির্বাচনী ফলাফল ৷
আর 2023-এর নির্বাচনী সেমি ফাইনাল 2024 এর লোকসভা ভোটে প্রভাব ফেলে, সেটাই দেখার !
আরও পড়ুন: ফিরছেন না কংগ্রেসে,'আজাদ'ই থাকছেন গুলাম নবি, দাবি একান্ত সাক্ষাৎকারে