কাদাপা (অন্ধ্রপ্রদেশ), 6 অক্টোবর: প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের গুলি করে খুনের পর আত্মঘাতী হেড কনস্টেবল ৷ ঘটনাটি ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের কাদাপা জেলায় ৷ পুলিশের সন্দেহ দ্বিতীয় স্ত্রীর চাপে ওই কনস্টেবল এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন ৷ এই ঘটনায় ভেঙ্কটেশ্বরলুর দ্বিতীয় স্ত্রী রামাদেবীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷
ওয়াইএসআর জেলার পুলিভেন্দুলা এলাকার কাদাপা টু টাউন থানায় কাজ করতেন ভেঙ্কটেশ্বরলু নামে ওই হেড কনস্টেবল ৷ তিনি স্ত্রী মাধবী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কাদাপা কো-অপারেটিভ কলোনিতে থাকতেন ৷ তাঁর এক মেয়ে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। অন্যজন পড়ত দশম শ্রেণিতে ৷ জানা গিয়েছে, কাদাপা এলাকারই রাজা রেড্ডি স্ট্রিটের বাসিন্দা রামাদেবীর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন ভেঙ্কটেশ্বরলু ৷
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে দশটায় থানার কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন ৷ তারপর ফের রাত 12টার সময় স্থানীয় থানায় ফিরে এসে একটি সার্ভিস রিভলবার নিয়ে বাড়িতে আসেন ৷ থানায় রাইটার হিসেবে কাজ করা ভেঙ্কটেশ্বরলু থানার সমস্ত বন্দুক ও অন্যান্য অস্ত্রের রক্ষক ছিলেন ৷ তাই তাঁর কাছেই সেই ঘরের চাবিগুলি থাকত ৷ ফলে সহজেই বন্দুক নিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছিলেন ৷
তারপর ঘুমন্ত স্ত্রী ও দুই মেয়ের কপালে তিনবার গুলি করেন ৷ এরপর নিজেকেও গুলি করেন ৷ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে চারজনের দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন এক শ্রমিক ৷ কাদাপার ডিএসপি শরিফ ও জেলা পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ কৌশল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৷ সেখান থেকে একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক ও দুটি গুলি-সহ কিছু কাগজপত্রও বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা ৷ ডিএসপি শরিফ জানান, চার রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে ৷
ঘটনাস্থলে পাওয়া নথি এবং স্ট্যাম্প পেপারগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ভেঙ্কটেশ্বরলুর দ্বিতীয় স্ত্রী রামাদেবীর রাজা রেড্ডি স্ট্রিটের সম্পত্তির বিবরণ রয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, চলতি বছরের 26 জুন 10 টাকার একটি স্ট্য়াম্প পেপার কেনা হয়েছিল ৷ সেই স্ট্যাম্প পেপারে ভেঙ্কটেশ্বরলু জেলা এসপিকে চিঠি লিখেছিলেন । সেই নথিতে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের মৃত্যুর পর একজন কর্মচারী হিসাবে তাঁর সমস্ত সুবিধা, ভাতা এবং অন্যান্য অর্থ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রামাদেবীকে দিতে হবে । অন্য একটি নথিতে এসবিআই ম্যানেজারের নামে একটি চিঠি লেখা হয়েছে ৷ সেখানেও লেখা রয়েছে যে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পুরো টাকা পাবেন দ্বিতীয় স্ত্রী রামাদেবী ৷
2023 সালের 26 জুন হেড কনস্টেবল ভেঙ্কটেশ্বরলু একটি সরকারি নথিতে জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী রামা দেবীর কাছে 20 লক্ষ টাকার জমি বিক্রি করেছেন। দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তিনি এও লিখেছিলেন যে পুলিভেন্দুলা মণ্ডলের উলিমেল্লা গ্রামে তাঁর নিজের খামারও রামাদেবীকে উৎসর্গ করছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর পর একইদিনে 2টি স্ট্যাম্প পেপার পাওয়ার পর এসব চুক্তি লেখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
দ্বিতীয় স্ত্রীর চাপে ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ ৷ এদিকে কনস্টেবলের আত্মীয়রা বলছেন যে তাঁরা ভেঙ্কটেশ্বরলুর দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা জানতেন না ৷ কাদাপায় কনস্টেবলের পরিবার নিহত হওয়ার পর উপ-মুখ্যমন্ত্রী আনজাদ ভাষা এবং কাদাপার মেয়র সুরেশবাবু ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ পরিদর্শন করেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : রাস্তায় কোপানোর পর পাথর দিয়ে যুবকের মুখ থেঁতলে দিল দুষ্কৃতীরা, প্রকাশ্যে সিসিটিভি ফুটেজ