শাহজাহানপুর (উত্তরপ্রদেশ), 16 মে: উত্তরপ্রদেশের একটি সরকারি স্কুলে অন্তত 18 জন ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে স্কুলেরই এক শিক্ষককে ৷ এই ঘটনায় আতঙ্কের জেরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বেশিরভাগ পড়ুয়া ৷ জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি 35 শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে ।
শাহজাহানপুরের দাদরাউল ব্লকের ওই স্কুলে অভিযুক্ত কম্পিউটারের শিক্ষককে সমর্থন করার জন্য স্কুলের অধ্যক্ষ এবং একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে । তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, আইপিসি এবং পকসো ধারায় মামলা করা হয়েছে । অভিযুক্ত তিনজন হলেন কম্পিউটার শিক্ষক মহম্মদ আলি, সহকারী শিক্ষক সাজিয়া ও স্কুলের অধ্যক্ষ অনিল পাঠক । স্কুলের শৌচালয়ে বেশকিছু ব্যবহৃত কনডোমও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । 13 মে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান ৷
প্রতিবাদী অভিভাবকরা বলেছেন যে, তাঁদের মেয়েরা মুখ না খুললে যৌন নিপীড়ন চলতেই থাকত । এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিকর্তা কুমার গৌরব বলেন, "50 জন ছাত্রী-সহ 112 জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সোমবার মাত্র 35 শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল । স্কুলে নিগৃহীত ছাত্রীদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে অভিভাবক ও পড়ুয়ারা ভয় পেয়ে স্কুলে আসছে না, এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ৷
তিনি জানান যে, শিক্ষা দফতর ছাত্রী এবং অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করাবে, কারণ তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে না পারলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যার উন্নতি হবে না । স্কুলের শিক্ষকদেরও আরও সংবেদনশীল হতে হবে বলে জানান তিনি । কুমার গৌরবের কথায়, "আমরা সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করছি এবং কঠোর পদক্ষেপ করব । দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"
গ্রামপ্রধান রামপাল বলেছেন, "ঘটনাটি অভিভাবকদের আস্থা নষ্ট করেছে । আমরা সকলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান বলে মনে করি ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ের জন্য লজ্জা বয়ে এনেছে এবং তাই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে অনিচ্ছুক ।"
একজন অভিভাবক বলেছেন, "এই ভয়ংকর ঘটনার মধ্যে দিয়ে যাওয়া কিছু মেয়ে স্কুলে আসতে চায় না । শিক্ষকের অসদাচরণ তাদের মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে । সেটা কাটিয়ে উঠতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে।"
এ দিকে, উত্তরপ্রদেশ স্কুল শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিজয় কিরণ আনন্দ বলেন, "এই ধরনের ঘটনাগুলি পরীক্ষা করার জন্য উত্তরপ্রদেশের 746টি কস্তুরবা গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে শীঘ্রই একজন করে মহিলা কর্মী রাখা হবে ৷ রাজ্যের 75টি জেলায় এই স্কুলগুলিতে কর্মরত পুরুষ কর্মীদের পুনর্নবীকরণ করা হবে না ।"
রাজ্যের মন্ত্রী বলদেব সিং আউলখও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি । এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষকরা জড়িত থাকলে তাঁদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি ।
আরও পড়ুন: 12 বছরের কিশোরকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার তিন নাবালক বন্ধু