অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে সাধারণত যে সমস্যাগুলো আমরা দেখি, তা হল বেছে বেছে খাওয়া বা খাওয়ায় অনীহা। অনেক সময়েই তাদের খাওয়া-দাওয়া আদপেই স্বাস্থ্যকর হয় না। এমনও হয় যে তারা দিনের সঠিক খাওয়া-দাওয়ার বদলে জাঙ্ক ফুড খাচ্ছে। এর ফলে কী হল? নিশ্চিতভাবেই পেটের নানা সমস্যা, যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট খারাপ, অ্যালার্জি, ডায়রিয়া – যেগুলোর জেরে খিটখিটে মেজাজ এবং নিদ্রাহীনতা তৈরি হয়।
আমরা জানি যে পাকস্থলীর ওপর মস্তিষ্কের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। উদাহরণ, খাওয়াদাওয়ার কথা শুধু ভাবলেই আমাদের শরীরে পাচক রস নিঃসরণ হতে থাকে এবং খিদে পেয়ে যায়। কিন্তু পেটও কি মস্তিষ্ক বা কগনিটিভ অ্যাকটিভিটিতে প্রভাব ফেলতে পারে? প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্র বলছে, হজমযন্ত্র একাধারে শক্তি এবং পাশাপাশি রোগেরও উৎস। পাস্তুর ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেটের মধ্যে থাকা জীবাণুরা আমাদের মস্তিষ্কের কাজে এবং মুডের ওপরেও প্রভাব ফেলত পারে। এবার গবেষকরা অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে থাকা উপসর্গের সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়েও খতিয়ে দেখছেন।
ছোটদের পেটের উপকারী জীবাণুদের উপর কোন কোন বিষয় প্রভাব ফেলে?
ভিয়ান ভ্যান্ডেনপ্লাস ও তাঁর দলের গবেষকরা মাইক্রোবায়োটা তৈরি হওয়া এবং তার ওপর কী কী বিষয় প্রভাব ফেলে, খতিয়ে দেখছেন
১. জিনগত কারণ।
২. জন্মের আগের কারণ: মায়ের খাওয়া-দাওয়া, ওবেসিটি, ধূমপান, গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া।
৩. জন্মানোর পদ্ধতি: সরাসরি ডেলিভারি শিশুকে মায়ের বৈচিত্রপূর্ণ মাইক্রোবায়োটার সংস্পর্শে আনে। সি-সেকশনের মাধ্যমে জন্মানোর শিশুদের সেই এক্সপোজারের সুযোগ নেই।
৪. স্তন্যপান করানোর মাধ্যমে শিশুর মধ্যে উপকারী অনুজীবদের জন্মানোর পথ প্রশস্ত হয়।
কীভাবে সুস্থ মাইক্রোবায়োম গড়ে তোলা যায়?
বাবা-মা হিসেবে আমাদের দেখতে হবে, যাতে শিশুরা
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খায়
২. ভালভাবে ঘুমোতে পারে
৩. প্রত্যেকদিন শরীরচর্চা করে
কিন্তু বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। পেশাদারদের সাহায্য ছাড়া খাওয়া নিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করতে হিমসিম খেতে পারেন অভিভাবকরা।
অকুপেশনাল থেরাপি
খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে প্রবল ইন্দ্রিয়ানুভূতি জড়িয়ে থাকে। আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয়ই কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু স্পেকট্রামে থাকা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এতে সমস্যা হতে পারে। তারা খাবারের টেক্সচার এবং গন্ধ পছন্দ নাও করতে পারে, আবার রান্নাঘরের শব্দ শুনেও বিরক্ত হতে পারে। অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা পথ বলে দিতে পারেন যাতে বাবা-মা ও বাচ্চা সবার পক্ষেই খাবার সময়টা সুখকর হয়। এই পদ্ধতিগুলি বাচ্চার প্রতিদিনকার রুটিনের অংশ হয়ে উঠতে পারে।
ধাপে-ধাপে প্রিয় খাবারটার সঙ্গে একটু একটু করে অপ্রিয় খাবারটাও দেওয়া হয়। গবেষণা বলছে, যে 11 থেকে 15 বারের চেষ্টার পর নতুন খাবারটাকেও গ্রহণ করে নেয় বাচ্চারা। খাবার সময় সঠিকভাবে বসাটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি চেয়ারে বসে, তাহলে পায়ে সঠিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া দরকার।
বাওয়েল ইন্টারভেনশন
নিয়মিতভাবে পেট পরিষ্কার রাখতে হবে। জামাকাপড় নোংরা হওয়া এড়াতে প্রতিদিন নিয়ম করে মলত্যাগের ওপর উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে স্টিকার ইত্যাদি ব্যবহার করে বাচ্চাদের বোঝাতে হবে।
নিজে খেতে উৎসাহ দেওয়া:
বিভিন্ন ধরণের বাসনপত্র ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিজে খেতে উৎসাহ দিতে হবে। বিভিন্ন ধরণের চামচ, সিপার এবং স্ট্র-যুক্ত বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফুড ডায়েরি:
বাচ্চার উপর খাবারের প্রভাবটা বুঝতে সাহায্য করে ফুড ডায়েরি। এছাড়াও খাওয়া-দাওয়ার সময় বেঁধে দিতে হবে, যার মাঝখানে স্ন্যাক্স বা জুস ঢুকে পড়বে না।
খেলার মধ্যে দিয়ে নতুন খাবার, তার টেক্সচার এবং গন্ধের সঙ্গে শিশুর পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
আচরণগত পরিবর্তন:
খাওয়ার সময় গ্যাজেট নয়, বেশি করে জল এবং দুধ ও জুসের পরিমাণ কমাতে হবে। ঠিক সময়ে ঘুমোতে হবে।