শ্রীনগর, 26 ডিসেম্বর: পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার পক্ষে সওয়াল করলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ ফারুক আবদুল্লার ৷ তাঁর মতে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে গাজার মতো হতে পারে ৷ মঙ্গলবার তিনি এই কথা জানিয়েছেন ৷
এ দিন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ভারতের কি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত ? উত্তরে শুরুতেই তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রসঙ্গ টানেন ৷ বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তান প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘আমরা বন্ধু পরিবর্তন করতে পারি ৷ কিন্তু প্রতিবেশী বদল করতে পারি না ৷’’ সেই কথাই এ দিন মনে করিয়ে দেন ফারুক আবদুল্লা ৷
এর পর তিনি বলেন, "আমরা যদি প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বে থাকি, আমরা উভয়ই সমৃদ্ধ হব ৷ কিন্তু যদি আমরা শত্রুতার মধ্যে থাকি, তবে আমরা দ্রুত অগ্রগতি করতে পারব না । মোদিজিও বলেছেন যে যুদ্ধ এখন বিকল্প নয় এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে । সেই আলোচনা হচ্ছে কোথায় ?"
ফারুক আবদুল্লার দাবি, "ইমরান খানকে (পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) বাদ দিন । এখন নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন এবং তিনি উচ্চস্বরে বলছেন যে তাঁরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত । আমরা কেন কথা বলছি না ?’’ এর পরই গাজার প্রসঙ্গ টানেন কাশ্মীরের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক ৷ তাঁর কথায়, ‘‘যদি আমরা আলোচনার মাধ্যমে এটা সমাধান না করি, আমি দুঃখিত যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের যে পরিস্থিতি, প্রতিদিন বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে, আমরাও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হব । যেকোনও কিছু ঘটতে পারে ।’’
অন্যদিকে পুঞ্চে গত বৃহস্পতিবার সেনার গাড়িতে যে জঙ্গি হামলা হয়, তা নিয়ে তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয় ৷ তাঁদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয় ৷ এই নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ফারুক আবদুল্লা ৷ তিনি এই ঘটনায় তদন্তের দাবি তুলেছেন ৷
মঙ্গলবার তিনি বলেন, "শান্তিপ্রিয় আটজন নাগরিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনজনকে নির্দয়ভাবে মারধর করা হয় এবং তাঁদের ক্ষতস্থানে লঙ্কার গুঁড়ো মাখিয়ে দেওয়া হয় । তাঁদের মধ্যে তিনজন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন । অন্য পাঁচজন হাসপাতালে রয়েছেন । নিহতদের একজনের ভাই বিএসএফ-এ আছেন এবং গত 24 বছর ধরে চাকরি করছেন ৷ এখন তিনি বলেছেন যে দেশের জন্য তাঁর সেবার বিনিময়ে তিনি ভাইকে হারালেন ।"
ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতা আরও বলেন, "সেনাপ্রধান নর্দান কমান্ডারকেও এখান থেকে দেরাদুনের অ্য়াকাডেমিতে নিয়ে গিয়েছেন ৷ কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে না । কেন এমন হল তার তদন্ত হওয়া উচিত ?" তাঁর দাবি, মহাত্মা গান্ধির ভারতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না ৷
তাছাড়া সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সমালোচনা করেছেন ৷ ফারুক আবদুল্লা বলেন, "চার বছর আগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চেন্নাইতে একটি বক্তৃতা করেছিলেন ৷ যেখানে তিনি বলেছিলেন যে 370 ধারা জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী । এখন জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ শেষ হবে এবং উন্নয়ন হবে । চার বছর পর তিনি সংসদে বক্তৃতা দিয়ে বলছেন, তিনি এমন কিছু বলেননি । এঁরা কত মিথ্যা বলছেন । সন্ত্রাস শেষ হয়নি, বাড়ছে । প্রশিক্ষিত (সন্ত্রাসী) লোকজন আসছে এবং তারা ধরা পড়ছে না । নিরীহ মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে ।’’
সংবাদসংস্থা - পিটিআই
আরও পড়ুন: