দেরাদুন, 24 জুলাই: প্রেমিক সচিনের টানে পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা সীমা হায়দারকে নিয়ে দুই দেশেই চর্চা তুঙ্গে ৷ সীমা হায়দারকে গুপ্তচর বা জঙ্গি বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে । পাশাপাশি তাঁকে তাঁর দেশ পাকিস্তানে পাঠানোর কথাও চলছে । এ দিকে, সীমা হায়দারের পলিগ্রাফ টেস্টের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবী এপি সিং । যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়, সীমা হায়দার প্রকৃতপক্ষে তাঁর ভালোবাসার টানেই ভারতে এসেছিলেন, নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ৷
এ ব্যাপারে কী বললেন সীমা হায়দারের আইনজীবী এপি সিং ? ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন যে, সীমা পাকিস্তানে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং নেপাল হয়ে ভারতে এসেছিলেন । বুলন্দশহরে বিয়ের রেজিস্ট্রি করার আবেদন করেছিলেন সীমা । একই সময়ে সীমান্তে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয় । এতে সীমা হায়দারের কোনও আপত্তি নেই । কারণ সীমা তাঁর জন্ম থেকে এখনও পর্যন্ত যাবতীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছেন । সেই সব নথি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে । সেই নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । আর কী কী বললেন এপি সিং ?
সীমা হায়দার ও সচিনকে একসঙ্গে থাকতে দেওয়া উচিত: সীমা হায়দারের আইনজীবী বলেন, ঊর্ধ্বতন সংস্থা তদন্ত করছে । তা সত্ত্বেও সীমা হায়দারের পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করছেন, সিবিআই, এনআইএ, র ও আইবি-র মতো সব বড় সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা উচিত, এতে কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু বর্তমানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে । কারণ সচিন ও সীমা হায়দারকে আলাদা করে রাখা হলেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না । এই কারণে শিশুরা খাবার খাচ্ছে না । এই অবস্থায় তদন্ত চললেও উভয়কে একসঙ্গে রাখতে হবে । জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন কক্ষে রাখা হলেও একসঙ্গে রাখাটা জরুরি ।
পুলিশের তদন্তেই আসল তথ্য উঠে আসা উচিত: সীমা হায়দারকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা প্রশ্ন উঠছে । এ বিষয়ে আইনজীবী বলেন, পাঁচটি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে চারটি পাসপোর্ট শিশুদের এবং একটি পাসপোর্ট সীমার । পাশাপাশি সীমার কাছে যে সমস্ত নথি ও ফোন ছিল, তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । শুধু তাই নয়, পাঁচ পৃষ্ঠার একটি তালিকা রয়েছে যেটি সীমা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে । এমন পরিস্থিতিতে সীমা গুপ্তচর নাকি জঙ্গি তা খতিয়ে দেখা উচিত পুলিশের । সব ধরনের তদন্ত হওয়া উচিত কিন্তু তাঁদের আলাদা রাখা উচিত নয় । তবে সীমা হায়দার বলেছেন, তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানো হলে তিনি পাকিস্তানে যাবেন না, তাঁর মৃতদেহ যাবে পাকিস্তানে ।
আরও পড়ুন: প্রেমের টানে অবৈধভাবে ভারতে আসা পাক মহিলার জেল হেফাজত, সঙ্গেই থাকবে 4 সন্তানও
আদনান সামির মতো সীমাকেও দেওয়া হোক নাগরিকত্ব: এপি সিং আরও বলেন, ভারতের ঐতিহ্য অতিথি দেবো ভব । তাহলে এখন দেশে একজন এসেছেন, তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ কেন ? পাকিস্তান থেকে আসা আদনান সামিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও অক্ষয় কুমার, দীপিকা পাড়ুকোন-সহ এমন অনেকেই আছেন যাঁরা ভারতীয় নাগরিক নন । তবে এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন । এর পাশাপাশি দেশে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে । সরকার যদি নাগরিকত্ব না দেয়, তাহলে সীমা হায়দারও লায়লা হয়ে যাবেন, যেভাবে লায়লা মজনুর গল্প বইতে পড়েছেন ।
কিছু বাধ্যবাধকতা নিশ্চয়ই ছিল: সীমা হায়দারের মামলাকে এত বড় করার প্রশ্নে আইনজীবী এপি সিং বলেন, সিস্টেমও যখন বিশ্বাস করার মতো নয়, মানুষকে যখন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, তখন নিশ্চয়ই কোনও না কোনও বাধ্যবাধকতা আছে । ধর্ম, ধর্মীয় মানসিকতা ও চিন্তার বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে বলেও জানান তিনি । কিন্তু সীমা হায়দার যদি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে সচিনের নামে সিঁদুর পরেন, তাহলে তাঁকে কিছুটা সম্মান দিন । আইনজীবী আরও বলেন, তদন্তে যদি সীমাকে জঙ্গি বা গুপ্তচর বলে ঘোষণা করা হয়, তাহলে সীমাকে যে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া যেতে পারে তা দেওয়া হোক ।