কিবিতু (অরুণাচল প্রদেশ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন অঞ্চল), 17 সেপ্টেম্বর : খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ ষষ্ঠ শতাব্দীতে সান জু-এর সামরিক কৌশলকে প্রতারণার শিল্প বলা হত ৷ চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (People’s Liberation Army) সেই কৌশলকেই সম্ভবত নিপুণ ভাবে রপ্ত করেছে ৷ যা তারা অরুণাচল (Arunachal Pradesh) সীমান্তে কৌশলগত লাভের চেষ্টায় প্রয়োগ করছে ৷
অরুণাচল প্রদেশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (Line of Actual Control) ওপারে চিনের (China) দিকে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে ৷ সেখানে বেশ কিছু তিনতলা ভবনও চোখে পড়বে ৷ কিন্তু সেখানে কোনও মানুষকে দেখা যায় না ৷ কিবিতু থেকে দূরবীনে চোখ রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় ৷ আরও একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় হল, সেখানে থাকা ভবনগুলির রং খুবই উজ্জ্বল ৷ যাতে দূর থেকেই তা দেখা যায় ৷ এর থেকেই মনে হচ্ছে যে ভারতকে বিভ্রান্ত করতেই ওই পরিকাঠামো তৈরি করেছে চিন ৷
অরুণাচল প্রদেশের অনজু জেলায় অবস্থিত কিবিতু ৷ এটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার আগে শেষ গ্রাম ৷ এই গ্রামে কর্মরত এক সরকারি আধিকারিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইটিভি ভারতকে জানালেন, শুধু ওই এলাকা নয়, অরুণাচল প্রদেশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে চিনের যত পরিকাঠামো আছে, কোথাও কোনও লোক নেই ৷ দেখে মনে হয়, শুধু সদর দরজা তৈরি হয়েছে ৷ ওপারে কিছুই নেই ৷ নিরাপত্তাবাহিনীর একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেও এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে ৷
অরুণাচল প্রদেশে ভারতের দিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর অনেক সেনা মোতায়েন রয়েছে ৷ কিন্তু চিনের দিকে পরিস্থিতি তেমন নয় ৷ সেখানে অনেক কম সেনা উপস্থিত রয়েছেন ৷ তার কারণ, ওদিকে রাস্তার পরিকাঠামো খুব ভালো ৷ প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবে চিন ৷ কিন্তু ভারতের দিকে যেহেতু তরাই অঞ্চল, সেই কারণে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে সেনা (Indian Army) পাঠাতে অনেকটা সময় লেগে যায় ৷ তাই একলপ্তে অনেক বেশি সেনা সেখানে মোতায়েন করে রাখতে হয় ৷
অরুণাচল প্রদেশে পাঁচটি নদী রয়েছে ৷ সেগুলি হল - কেমাং, সুবানসিরি, সিয়াং, লোহিত ও টিরাপ ৷ এই নদীগুলির উপত্যকা উত্তর থেকে দক্ষিণে অবস্থিত ৷ এই নদীগুলি খরস্রোতা ৷ অনেকে জায়গাতেই খাদ রয়েছে ৷ যা ওই অঞ্চল দিয়ে সেনার চলাচলকে খুবই কঠিন করে দেয় ৷
অন্যদিকে চিনের জি219 ও জি695 সড়ক দু’টি পূর্ব থেকে পশ্চিমে একেবারে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর রয়েছে ৷ জি695 সড়কটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে 20 কিলোমিটার দূরে ৷ যা এখনও তৈরি হচ্ছে ৷ আর জি219 সড়কটি 50 বছর আগে তৈরি হয়েছে ৷ এই রাস্তা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে 200 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৷
পূর্ব লাদাখ এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পিএলএ (PLA) অনেক সহজে ভারতকে বাধা দিতে পারে ৷ সেখানে তারা সেই পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছে ৷ সেই কারণেই এই অংশে চিনা সেনার সঙ্গে ভারতীয় সেনার বারবার সঙ্ঘাত তৈরি হয় ৷ কিন্তু পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি একদম আলাদা ৷ সেই কারণেই এখানে চিনা লালফৌজের কাজ অনেক শক্ত ৷
আরও পড়ুন : অরুণাচলে আস্ত গ্রাম চিনের, পেন্টাগনের রিপোর্ট তুলে সরব কংগ্রেস