ETV Bharat / bharat

ভারতে জ্বালানির দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ

author img

By

Published : Dec 19, 2020, 3:56 PM IST

প্রতিবেদনটি লিখেছেন ড. মহেন্দ্রবাবু কুরুভা ৷ তিনি উত্তরাখণ্ডের এইচএনবি গারওয়াল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ।

Costs of Rising Fuel Prices in India
Costs of Rising Fuel Prices in India

হায়দরাবাদ, 19 ডিসেম্বর : ভারতে খুচরো জ্বালানির দাম বাড়তে বাড়তে, 2018 সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছিল 2020 সালের নয় ডিসেম্বর । পেট্রল যেখানে লিটারপিছু বিক্রি হয়েছিল 83.71 টাকায়, সেখানেই রাজধানীতে ডিজ়েলের মূল্য ছিল 73.87 টাকা প্রতি লিটার । তার পর থেকে টানা ছ’দিন দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি এবং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে বদলের নিরিখে মনে করা হচ্ছে, দাম আরও বাড়তে পারে । খুচরো জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই পদক্ষেপ সেই পটভূমিকায় নেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতের খনিজ তেল মার্কেটিং সংস্থাগুলি পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম যথাক্রমে লিটার পিছু দুই টাকা এবং 3.50 টাকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ানোর পিছনে মূলত দু’টি মৌলিক কারণ রয়েছে ।

প্রথম কারণ হল, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া । ব্রেন্ট ক্রুড ভারতের অপরিশোধিত তেলের বাজারের সিংহভাগ দখল করে রয়েছে এবং ব্রেন্ট ক্রুডের তেলের দাম বেড়ে ব্যারেল প্রতি 49 ডলারের সীমা স্পর্শ করেছে, যা 2020 সালের এপ্রিল মাসে ছিল মাত্র 19 ডলার প্রতি ব্যারেল । এই প্রসঙ্গে এটাও লক্ষ্যণীয় যে ভারত সরকার 2010 সালে দেশীয় ক্ষেত্রে পেট্রলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ করেছিল যাতে তা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে । প্রথাগতভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্যাপী যখন অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে তখনই দেশীয় স্তরে জ্বালানির দাম বাড়ে এবং এর উলটোটাও সত্যি । ওপেক প্লাস-এর সাম্প্রতিক চুক্তির জেরে বিশ্বব্যাপী স্তরেও অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে আর তার ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশীয় ক্ষেত্রে জ্বালানির দামও । দাম বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হল, কোভিড-19 নিয়মকানুন শিথিল হওয়া এবং কোরোনা ভাইরাসের টিকা দ্রুত বাজারে আসার সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার ফলে পেট্রল এবং ডিজ়েলের চাহিদা বৃদ্ধি ।

কর প্রহেলিকা:

দেশীয় স্তরে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণের নেপথে্য সংগত যুক্তি আছে । উল্লেখ করা যেতে পারে, পেট্রলের দামে লিটার পিছু আরও 29 পয়সা দাম বাড়লে তা রাজধানী শহরে পেট্রলের দামে সর্বোচ্চ স্তরের বৃদ্ধি হিসাবে পরিগণিত হবে । শেষ বার 2018 সালের চার অক্টোবর পেট্রলের দাম 84 টাকা প্রতি লিটার বেড়েছিল, সেই সময় বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি 40 ডলার। এখন প্রতি ব্যারেল তেলের দাম 49 ডলার থাকলে পেট্রলের দামও অবশ্যই আগের থেকে কম হওয়ার কথা যেহেতু ভারতে মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ পরিকাঠামো কার্যকর রয়েছে । কিন্তু তা হয়নি কারণ চড়া হারে কর ধার্য হয়েছে, শুল্ক যোগ হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও বিবিধ রাজ্য সরকারগুলির তরফে সেস আরোপিত হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে অন্তঃশুল্ক এবং ভ্যাট পেট্রলের মূলে্যর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে অন্তত 63 শতাংশ আর ডিজ়েলের ক্ষেত্রে অন্তত 63 শতাংশ । কোভিড-19 প্যানডেমিক যত কেন্দ্র এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে, এর ফলে করহারও বেড়েছে যার জেরে অতিরিক্ত শুল্ক দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে প্যানডেমিকে বর্ধিত ব্যয়বহর সামাল দিতে। পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেলের (পিপিএসি) মতে, দিল্লিতে 2020 সালের এপ্রিল মাস থেকে এখনও পর্যন্ত পেট্রলের মূল্য 56 বার বদলানো হয়েছে আর ডিজ়েলের মূল্য 67 বার বদলানো হয়েছে । 2020 সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সময়টুকু ছাড়া এই মূল্য ঊর্ধ্বমুখীই থেকেছে বরাবর । এমনকী, অপরিশোধিত তেলের দাম যখন হ্রাস পেয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট সরকার দেশীয় ক্ষেত্রে জ্বালানির মূলে্যর উপর কর চাপিয়ে দিয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী তেলের সহায়ক মূল্য থেকে লাভ তুলে নিয়েছিল । যদিও তখন গ্রাহকরা ততটা চাপ অনুভব করেননি কারণ তখন বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামও ছিল কম । কিন্ত এখন যখন ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলীর প্রভাবে সেটিও বাড়তে শুরু করে দিয়েছে । তাই এখন চড়া করহারের আঁচ সকলে অনুভব করতে পারছেন । জ্বালানির উচ্চ মূল্য বহনের ব্যয় জ্বালানির উপর কর চাপিয়ে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় সরকারের পক্ষে সহজ পদক্ষেপ ঠিকই, কিন্তু ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকলে তার জেরে উলটো প্রভাব পড়বে। প্রথমত, জ্বালানির উচ্চমূলে্যর ফলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে । বর্তমানে, ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতি 7.6 শতাংশ, যা সাত বছরের সর্বোচ্চ স্তরের প্রায় কাছাকাছি । বার্কলে’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অপরিশোধিত তেলের মূল্যে ব্যারেল পিছু 10 ডলার দাম বাড়লে পেট্রল পাম্পগুলিতে জ্বালানির মূল্য লিটার পিছু 5.8 টাকা বাড়বে । তাছাড়াও 34 বেসিস পয়েন্ট (বিপি) যোগ করে তিন থেকে ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে খবরের শিরোনামে থাকতে সাহায্য করবে মুদ্রাস্ফীতিকে ।

আরও পড়ুন :কাটল সঙ্কট, স্বস্তিতে অ্যামেরিকা

এই পরিসংখ্যান তৈরি করার ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়ামের উপর চাপানো করে কোনও বদল আসেনি বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে । কারণ যদি কর চাপানো হত, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির স্তর আরও বাড়ত । অন্যদিকে নতুন করে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী স্তরে অপরিশোধিত তেলের দামে যে বৃদ্ধির অনুমান করা হয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে । জ্বালানির দামের এই বৃদ্ধি অবশ্যই মুদ্রাস্ফীতির উপর প্রভাব ফেলবে এবং এই প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে যে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাই বাঞ্ছনীয় । জ্বালানির উচ্চ মূলে্যর ফলে দ্বিতীয় যে বিপদ দেখা দেবে তা হল দামের চাপের জন্য চাহিদারও সম্ভাব্য পতন যার জেরে ‘ম্যাক্রো-ইকোনমিক’ অস্থিতাবস্থা তৈরি হতে পারে । এর কারণ জ্বালানি কিনতে হওয়া অতিরিক্ত ব্যয়, গ্রাহকদের উপার্জন হ্রাস করবে ফলে চাহিদায় পতন হবে । এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে গুরুতর আর্থিক দুর্দশা দেখা দেবে । তৃতীয়ত, এটা মনে রাখতে হবে যে ডিজ়েল মূলত সড়কপথে চলা মালবাহী যানবাহন পরিবহণের জন্য জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় । ফলে ডিজ়েলের মূল্য বাড়লে পরিবহন ক্ষেত্র এবং এর উপর নির্ভরশীল মানুষজনও বড়সড় ধাক্কা খাবেন ।

আরও পড়ুন :দক্ষ শ্রমিকরাই পারে দেশের উন্নয়নকে মজবুত করতে

আর অন্তিম বিষয়টি হল, যে প্যানডেমিকের মধে্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তার জেরে দেশজুড়ে গণ পরিবহনের মাধ্যমগুলি এখনও সেভাবে শুরু হয়নি এবং অধিকাংশ মানুষকেই বর্তমানে নিজস্ব যানবাহনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে । কাজেই জ্বালানির উচ্চমূল্যের ফলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে যা কোভিড-19 এর জেরে হওয়া আর্থিক শ্লথগতির ফলে ইতিমধে্যই দুর্বল হয়ে পড়েছে । এই সমস্ত সম্ভাব্য ফলাফল সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগত শিক্ষা যাতে তারা এই ধরনের পণে্যর উপর আরও কর না চাপান যার ফলে সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি তার প্রভাব পড়ে । করহার হ্রাস করা কিংবা কিছু সময়ের জন্য তা না চাপানো হয়তো জ্বালানির উচ্চ মূলে্যর জেরে তৈরি হওয়া সমস্যা সমাধানের রুপোলি বুলেটের ভূমিকা পালন করবে না, তবে নিশ্চিতভাবেই কর্মসূচি-প্রণেতাদের কাছে এমন রাস্তার হদিশ দেবে, যা অনুসরণ করে তাঁরা দেশের ‘ম্যাক্রো-ইকোনোমিক’ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন । অন্যদিকে আবার কর্মসূচি প্রণেতাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনাগুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য তথা দূষণহীন বিদু্যৎশক্তি তৈরি করতে হবে যাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব হয় ।

হায়দরাবাদ, 19 ডিসেম্বর : ভারতে খুচরো জ্বালানির দাম বাড়তে বাড়তে, 2018 সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছিল 2020 সালের নয় ডিসেম্বর । পেট্রল যেখানে লিটারপিছু বিক্রি হয়েছিল 83.71 টাকায়, সেখানেই রাজধানীতে ডিজ়েলের মূল্য ছিল 73.87 টাকা প্রতি লিটার । তার পর থেকে টানা ছ’দিন দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি এবং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে বদলের নিরিখে মনে করা হচ্ছে, দাম আরও বাড়তে পারে । খুচরো জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই পদক্ষেপ সেই পটভূমিকায় নেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতের খনিজ তেল মার্কেটিং সংস্থাগুলি পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম যথাক্রমে লিটার পিছু দুই টাকা এবং 3.50 টাকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ানোর পিছনে মূলত দু’টি মৌলিক কারণ রয়েছে ।

প্রথম কারণ হল, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া । ব্রেন্ট ক্রুড ভারতের অপরিশোধিত তেলের বাজারের সিংহভাগ দখল করে রয়েছে এবং ব্রেন্ট ক্রুডের তেলের দাম বেড়ে ব্যারেল প্রতি 49 ডলারের সীমা স্পর্শ করেছে, যা 2020 সালের এপ্রিল মাসে ছিল মাত্র 19 ডলার প্রতি ব্যারেল । এই প্রসঙ্গে এটাও লক্ষ্যণীয় যে ভারত সরকার 2010 সালে দেশীয় ক্ষেত্রে পেট্রলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ করেছিল যাতে তা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে । প্রথাগতভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্যাপী যখন অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে তখনই দেশীয় স্তরে জ্বালানির দাম বাড়ে এবং এর উলটোটাও সত্যি । ওপেক প্লাস-এর সাম্প্রতিক চুক্তির জেরে বিশ্বব্যাপী স্তরেও অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে আর তার ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশীয় ক্ষেত্রে জ্বালানির দামও । দাম বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হল, কোভিড-19 নিয়মকানুন শিথিল হওয়া এবং কোরোনা ভাইরাসের টিকা দ্রুত বাজারে আসার সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার ফলে পেট্রল এবং ডিজ়েলের চাহিদা বৃদ্ধি ।

কর প্রহেলিকা:

দেশীয় স্তরে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণের নেপথে্য সংগত যুক্তি আছে । উল্লেখ করা যেতে পারে, পেট্রলের দামে লিটার পিছু আরও 29 পয়সা দাম বাড়লে তা রাজধানী শহরে পেট্রলের দামে সর্বোচ্চ স্তরের বৃদ্ধি হিসাবে পরিগণিত হবে । শেষ বার 2018 সালের চার অক্টোবর পেট্রলের দাম 84 টাকা প্রতি লিটার বেড়েছিল, সেই সময় বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি 40 ডলার। এখন প্রতি ব্যারেল তেলের দাম 49 ডলার থাকলে পেট্রলের দামও অবশ্যই আগের থেকে কম হওয়ার কথা যেহেতু ভারতে মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ পরিকাঠামো কার্যকর রয়েছে । কিন্তু তা হয়নি কারণ চড়া হারে কর ধার্য হয়েছে, শুল্ক যোগ হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও বিবিধ রাজ্য সরকারগুলির তরফে সেস আরোপিত হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে অন্তঃশুল্ক এবং ভ্যাট পেট্রলের মূলে্যর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে অন্তত 63 শতাংশ আর ডিজ়েলের ক্ষেত্রে অন্তত 63 শতাংশ । কোভিড-19 প্যানডেমিক যত কেন্দ্র এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে, এর ফলে করহারও বেড়েছে যার জেরে অতিরিক্ত শুল্ক দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে প্যানডেমিকে বর্ধিত ব্যয়বহর সামাল দিতে। পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেলের (পিপিএসি) মতে, দিল্লিতে 2020 সালের এপ্রিল মাস থেকে এখনও পর্যন্ত পেট্রলের মূল্য 56 বার বদলানো হয়েছে আর ডিজ়েলের মূল্য 67 বার বদলানো হয়েছে । 2020 সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সময়টুকু ছাড়া এই মূল্য ঊর্ধ্বমুখীই থেকেছে বরাবর । এমনকী, অপরিশোধিত তেলের দাম যখন হ্রাস পেয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট সরকার দেশীয় ক্ষেত্রে জ্বালানির মূলে্যর উপর কর চাপিয়ে দিয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী তেলের সহায়ক মূল্য থেকে লাভ তুলে নিয়েছিল । যদিও তখন গ্রাহকরা ততটা চাপ অনুভব করেননি কারণ তখন বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামও ছিল কম । কিন্ত এখন যখন ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলীর প্রভাবে সেটিও বাড়তে শুরু করে দিয়েছে । তাই এখন চড়া করহারের আঁচ সকলে অনুভব করতে পারছেন । জ্বালানির উচ্চ মূল্য বহনের ব্যয় জ্বালানির উপর কর চাপিয়ে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় সরকারের পক্ষে সহজ পদক্ষেপ ঠিকই, কিন্তু ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকলে তার জেরে উলটো প্রভাব পড়বে। প্রথমত, জ্বালানির উচ্চমূলে্যর ফলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে । বর্তমানে, ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতি 7.6 শতাংশ, যা সাত বছরের সর্বোচ্চ স্তরের প্রায় কাছাকাছি । বার্কলে’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অপরিশোধিত তেলের মূল্যে ব্যারেল পিছু 10 ডলার দাম বাড়লে পেট্রল পাম্পগুলিতে জ্বালানির মূল্য লিটার পিছু 5.8 টাকা বাড়বে । তাছাড়াও 34 বেসিস পয়েন্ট (বিপি) যোগ করে তিন থেকে ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে খবরের শিরোনামে থাকতে সাহায্য করবে মুদ্রাস্ফীতিকে ।

আরও পড়ুন :কাটল সঙ্কট, স্বস্তিতে অ্যামেরিকা

এই পরিসংখ্যান তৈরি করার ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়ামের উপর চাপানো করে কোনও বদল আসেনি বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে । কারণ যদি কর চাপানো হত, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির স্তর আরও বাড়ত । অন্যদিকে নতুন করে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী স্তরে অপরিশোধিত তেলের দামে যে বৃদ্ধির অনুমান করা হয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে । জ্বালানির দামের এই বৃদ্ধি অবশ্যই মুদ্রাস্ফীতির উপর প্রভাব ফেলবে এবং এই প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে যে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাই বাঞ্ছনীয় । জ্বালানির উচ্চ মূলে্যর ফলে দ্বিতীয় যে বিপদ দেখা দেবে তা হল দামের চাপের জন্য চাহিদারও সম্ভাব্য পতন যার জেরে ‘ম্যাক্রো-ইকোনমিক’ অস্থিতাবস্থা তৈরি হতে পারে । এর কারণ জ্বালানি কিনতে হওয়া অতিরিক্ত ব্যয়, গ্রাহকদের উপার্জন হ্রাস করবে ফলে চাহিদায় পতন হবে । এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে গুরুতর আর্থিক দুর্দশা দেখা দেবে । তৃতীয়ত, এটা মনে রাখতে হবে যে ডিজ়েল মূলত সড়কপথে চলা মালবাহী যানবাহন পরিবহণের জন্য জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় । ফলে ডিজ়েলের মূল্য বাড়লে পরিবহন ক্ষেত্র এবং এর উপর নির্ভরশীল মানুষজনও বড়সড় ধাক্কা খাবেন ।

আরও পড়ুন :দক্ষ শ্রমিকরাই পারে দেশের উন্নয়নকে মজবুত করতে

আর অন্তিম বিষয়টি হল, যে প্যানডেমিকের মধে্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তার জেরে দেশজুড়ে গণ পরিবহনের মাধ্যমগুলি এখনও সেভাবে শুরু হয়নি এবং অধিকাংশ মানুষকেই বর্তমানে নিজস্ব যানবাহনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে । কাজেই জ্বালানির উচ্চমূল্যের ফলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে যা কোভিড-19 এর জেরে হওয়া আর্থিক শ্লথগতির ফলে ইতিমধে্যই দুর্বল হয়ে পড়েছে । এই সমস্ত সম্ভাব্য ফলাফল সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগত শিক্ষা যাতে তারা এই ধরনের পণে্যর উপর আরও কর না চাপান যার ফলে সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি তার প্রভাব পড়ে । করহার হ্রাস করা কিংবা কিছু সময়ের জন্য তা না চাপানো হয়তো জ্বালানির উচ্চ মূলে্যর জেরে তৈরি হওয়া সমস্যা সমাধানের রুপোলি বুলেটের ভূমিকা পালন করবে না, তবে নিশ্চিতভাবেই কর্মসূচি-প্রণেতাদের কাছে এমন রাস্তার হদিশ দেবে, যা অনুসরণ করে তাঁরা দেশের ‘ম্যাক্রো-ইকোনোমিক’ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আরও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন । অন্যদিকে আবার কর্মসূচি প্রণেতাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনাগুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য তথা দূষণহীন বিদু্যৎশক্তি তৈরি করতে হবে যাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব হয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.