ETV Bharat / bharat

শুধু খরা নয়, 1943 -এ বাংলার দুর্ভিক্ষের পিছনে ছিল অন্য কারণও

author img

By

Published : Aug 25, 2020, 6:30 AM IST

1943 সালে বাংলার দুর্ভিক্ষে যে 30 লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার কারণ কেবল খরা নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সম্পূর্ণ ব্যর্থ নীতির কারণেও এটি হয়েছিল ।

WORLD WAR 2
ছবি

1943 সাল । চারিদিকে তখন বোমারু বিমানের আনাগোনা । সাইরেনের শব্দ । চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । একদিকে মিত্রশক্তি । অন্যদিকে অক্ষশক্তি । আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই বাংলায় দেখা দেয় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ । প্রাণ হারায় 30 লাখ মানুষ । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সময়ে ব্রিটিশ সরকারের একাধিক নীতির কারণেই এই দুর্ভিক্ষ ঘটে ।

2019 সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ি ব্রিটিশ সরকারের নীতি

  • 2019 সালে জিওফিজ়িকাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, 1943 সালে বাংলার দুর্ভিক্ষে যে 30 লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার কারণ কেবল খরা নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সম্পূর্ণ ব্যর্থ নীতিও এর জন্য দায়ি ।
  • ঠিক কী হয়েছিল তা খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা 1870 থেকে 2016 এর মধ্যে মাটির আর্দ্রতার স্তরটি বিশ্লেষণ করেছেন । তাঁদের মতে, এই সময়সীমার মধ্যে ছয়টি উল্লেখযোগ্য দুর্ভিক্ষ হয়েছিল । এর মধ্যে শুধুমাত্র এই দুর্ভিক্ষেই শস্য না হওয়া বা মাটির আর্দ্রতার কোনও সমস্যা ছিল না ।
  • দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে যেগুলি বলা হয়, তা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর কাছে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর প্রচুর বিতরণ ও চাল আমদানি বন্ধ । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কোনওদিনই ভারতে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা করেনি ।
  • সমীক্ষা অনুসারে, 1943 সালের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুসংখ্যা আরও বাড়ার অপর একটি কারণ হল জাপানদের বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) দখল, যা ভারতে চাল আমদানির প্রধান উৎস ছিল । সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে অতীতে আরও ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হলেও মায়ানমার থেকে চাল ও ব্রিটিশ সরকারের ত্রাণ সহায়তার কারণে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি আগে ।
  • সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যে, যুদ্ধকালীন শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে দুর্ভিক্ষ আরও প্রকট হয়েছিল । এটিই একমাত্র দুর্ভিক্ষ যা মাটির আর্দ্রতা, খরা এবং ফসলের ব্যর্থতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে মনে হয় না । বলেছেন বিশিষ্ট গবেষক বিমল মিশ্র ।

মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়ের লেখা 2011 সালে প্রকাশিত "চার্চিল সিক্রেট ওয়ার" বই অনুযায়ী,

  • 2011 সালে প্রকাশিত "চার্চিল সিক্রেট ওয়ার : দা ব্রিটিশ এম্পায়ার অ্যান্ড দ্য ব়্যাভেজিং অফ ইন্ডিয়া ডিউরিং ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু" অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রচুর খাদ্য রপ্তানির ফলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ।
  • চার্চিলের মন্ত্রিসভা তৎকালীন বাংলার দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরও তারা ভারতের এই সমস্যা সমাধানের জন্য নারাজ ছিল । পরিবর্তে, তাঁর সামরিক অভিযান জোরদার করতে খাদ্য মজুত করতে শুরু করেছিলেন ।
  • 1943 সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে ভারত থেকে দুর্ভিক্ষের মধ্যেই 70 হাজার টন চাল রপ্তানি হয়েছিল । যা প্রায় চার লাখ মানুষ এক বছর ধরে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারত । চার্চিল জাহাজের ঘাটতির উল্লেখ করে ভারতে খাদ্য রপ্তানির বিষয়ে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
  • চার্চিল উপকূলীয় বাংলায় এই জ্বলন্ত পরিস্থিতিকে অস্বীকার করেছিলেন । ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল যে জাপানিরা ঢুকে যাবে এখানে । সুতরাং তারা নৌকা (অঞ্চলটির লাইফলাইন) সরিয়ে দেয় এবং পুলিশ ধানের মজুত ধ্বংস করে দেয় ।
  • 1942-43 সালে লন্ডন এক মিলিয়ন টনেরও বেশি জরুরি গমের সরবরাহের জন্য ভারতের ভাইসরয়ের কাছ থেকে জরুরি আবেদন প্রত্যাখ্যান করার কারণে চাল স্টকগুলি ভারত ছাড়তে থাকে ।
  • 1943 সালে ব্রিটিশরা খাদ্য ও কাঁচামাল মজুত করে রাখে তার 47 মিলিয়ন লোকের জন্য যা বাংলার চেয়ে 14 মিলিয়ন কম ।

শশী থারুর

শশী থারুর তাঁর "ইনলোরিয়াস এম্পায়ার : হোয়াট ব্রিটিশ ডিড টু ইন্ডিয়া" বইতে লিখেছেন, "চার্চিল ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারী ভারতীয় নাগরিকদের থেকে ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । "

উইনস্টন চার্চিলের কিছু কুখ্যাত উক্তি

  • দুর্ভিক্ষ হোক বা না হোক, ভারতীয়রা খরগোশের মতো জন্ম নেবে ।
  • যদি এতটাই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হত তবে মহাত্মা গান্ধি কীভাবে তখনও বেঁচে ছিলেন।

1943 সালে ব্রিটিশ ওয়ার ক্যাবিনেটে ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট ও ফিল্ড মার্শালের উক্তি

  • ফিল্ড মার্শাল স্যর আর্কিবাল্ড ওয়াভেল তাঁর বিবরণীতে লিখেছিলেন, "স্পষ্টতই ভারতীয়দের চেয়ে গ্রিক ও মুক্ত দেশগুলিকে বাঁচানো আরও গুরুত্বপূর্ণ । এ দেশে শিপিং সরবরাহ করতে বা স্টক কমাতে অনীহা রয়েছে । "
  • ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট লেপার্ড আমেরি লিখেছিলেন, "উইনস্টনের এই কথাটি সঠিক হতে পারে যে কোনওভাবেই বাঙালির অনাহার শক্তিশালী গ্রিকদের চেয়ে কম মারাত্মক নয়, তবে তিনি এ দেশে সাম্রাজ্যের দায়বদ্ধতার বোধের জন্য যথেষ্ট ভাতা দেন না ।"

1943 সাল । চারিদিকে তখন বোমারু বিমানের আনাগোনা । সাইরেনের শব্দ । চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । একদিকে মিত্রশক্তি । অন্যদিকে অক্ষশক্তি । আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই বাংলায় দেখা দেয় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ । প্রাণ হারায় 30 লাখ মানুষ । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সময়ে ব্রিটিশ সরকারের একাধিক নীতির কারণেই এই দুর্ভিক্ষ ঘটে ।

2019 সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ি ব্রিটিশ সরকারের নীতি

  • 2019 সালে জিওফিজ়িকাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, 1943 সালে বাংলার দুর্ভিক্ষে যে 30 লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তার কারণ কেবল খরা নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সম্পূর্ণ ব্যর্থ নীতিও এর জন্য দায়ি ।
  • ঠিক কী হয়েছিল তা খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা 1870 থেকে 2016 এর মধ্যে মাটির আর্দ্রতার স্তরটি বিশ্লেষণ করেছেন । তাঁদের মতে, এই সময়সীমার মধ্যে ছয়টি উল্লেখযোগ্য দুর্ভিক্ষ হয়েছিল । এর মধ্যে শুধুমাত্র এই দুর্ভিক্ষেই শস্য না হওয়া বা মাটির আর্দ্রতার কোনও সমস্যা ছিল না ।
  • দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে যেগুলি বলা হয়, তা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর কাছে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর প্রচুর বিতরণ ও চাল আমদানি বন্ধ । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কোনওদিনই ভারতে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা করেনি ।
  • সমীক্ষা অনুসারে, 1943 সালের দুর্ভিক্ষে মৃত্যুসংখ্যা আরও বাড়ার অপর একটি কারণ হল জাপানদের বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) দখল, যা ভারতে চাল আমদানির প্রধান উৎস ছিল । সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে অতীতে আরও ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হলেও মায়ানমার থেকে চাল ও ব্রিটিশ সরকারের ত্রাণ সহায়তার কারণে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি আগে ।
  • সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যে, যুদ্ধকালীন শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে দুর্ভিক্ষ আরও প্রকট হয়েছিল । এটিই একমাত্র দুর্ভিক্ষ যা মাটির আর্দ্রতা, খরা এবং ফসলের ব্যর্থতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে মনে হয় না । বলেছেন বিশিষ্ট গবেষক বিমল মিশ্র ।

মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়ের লেখা 2011 সালে প্রকাশিত "চার্চিল সিক্রেট ওয়ার" বই অনুযায়ী,

  • 2011 সালে প্রকাশিত "চার্চিল সিক্রেট ওয়ার : দা ব্রিটিশ এম্পায়ার অ্যান্ড দ্য ব়্যাভেজিং অফ ইন্ডিয়া ডিউরিং ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু" অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রচুর খাদ্য রপ্তানির ফলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ।
  • চার্চিলের মন্ত্রিসভা তৎকালীন বাংলার দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরও তারা ভারতের এই সমস্যা সমাধানের জন্য নারাজ ছিল । পরিবর্তে, তাঁর সামরিক অভিযান জোরদার করতে খাদ্য মজুত করতে শুরু করেছিলেন ।
  • 1943 সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে ভারত থেকে দুর্ভিক্ষের মধ্যেই 70 হাজার টন চাল রপ্তানি হয়েছিল । যা প্রায় চার লাখ মানুষ এক বছর ধরে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারত । চার্চিল জাহাজের ঘাটতির উল্লেখ করে ভারতে খাদ্য রপ্তানির বিষয়ে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
  • চার্চিল উপকূলীয় বাংলায় এই জ্বলন্ত পরিস্থিতিকে অস্বীকার করেছিলেন । ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল যে জাপানিরা ঢুকে যাবে এখানে । সুতরাং তারা নৌকা (অঞ্চলটির লাইফলাইন) সরিয়ে দেয় এবং পুলিশ ধানের মজুত ধ্বংস করে দেয় ।
  • 1942-43 সালে লন্ডন এক মিলিয়ন টনেরও বেশি জরুরি গমের সরবরাহের জন্য ভারতের ভাইসরয়ের কাছ থেকে জরুরি আবেদন প্রত্যাখ্যান করার কারণে চাল স্টকগুলি ভারত ছাড়তে থাকে ।
  • 1943 সালে ব্রিটিশরা খাদ্য ও কাঁচামাল মজুত করে রাখে তার 47 মিলিয়ন লোকের জন্য যা বাংলার চেয়ে 14 মিলিয়ন কম ।

শশী থারুর

শশী থারুর তাঁর "ইনলোরিয়াস এম্পায়ার : হোয়াট ব্রিটিশ ডিড টু ইন্ডিয়া" বইতে লিখেছেন, "চার্চিল ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারী ভারতীয় নাগরিকদের থেকে ব্রিটিশ সৈন্যদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । "

উইনস্টন চার্চিলের কিছু কুখ্যাত উক্তি

  • দুর্ভিক্ষ হোক বা না হোক, ভারতীয়রা খরগোশের মতো জন্ম নেবে ।
  • যদি এতটাই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হত তবে মহাত্মা গান্ধি কীভাবে তখনও বেঁচে ছিলেন।

1943 সালে ব্রিটিশ ওয়ার ক্যাবিনেটে ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট ও ফিল্ড মার্শালের উক্তি

  • ফিল্ড মার্শাল স্যর আর্কিবাল্ড ওয়াভেল তাঁর বিবরণীতে লিখেছিলেন, "স্পষ্টতই ভারতীয়দের চেয়ে গ্রিক ও মুক্ত দেশগুলিকে বাঁচানো আরও গুরুত্বপূর্ণ । এ দেশে শিপিং সরবরাহ করতে বা স্টক কমাতে অনীহা রয়েছে । "
  • ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট লেপার্ড আমেরি লিখেছিলেন, "উইনস্টনের এই কথাটি সঠিক হতে পারে যে কোনওভাবেই বাঙালির অনাহার শক্তিশালী গ্রিকদের চেয়ে কম মারাত্মক নয়, তবে তিনি এ দেশে সাম্রাজ্যের দায়বদ্ধতার বোধের জন্য যথেষ্ট ভাতা দেন না ।"
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.