প্রতি বছর 10 সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয় । আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতেই মূলত এই দিন পালন করা হয় । 2003 সাল থেকে দিনটি পালন করা হচ্ছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুগ্মভাবে দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন এবং ওয়ার্লড ফেডারেশন অফ মেন্টাল হেল্থ এই দিনটি হোস্ট করে ।
আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিশ্বের সব দেশের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ । প্রতি বছর বিশ্বে যত সংখ্যক মৃত্যু হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ আত্মহত্যা । মৃত্যুর 20টি শীর্ষ কারণের মধ্যে একটি । প্রতিবছর অন্তত আট লাখের মৃত্যু হয় । অর্থাৎ প্রতি 40 সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করেন ।
আসলে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আমরা বেশির ভাগ সময়েই গুরুত্ব দিই না । কিন্তু অবসাদ আমাদের এইরকম এক চূড়ান্ত পদক্ষেপের দিকেই ঠেলে দেয় । নিজেকে আঘাত করা থেকে শুরু করে আত্মহনন , যে ব্যক্তি এই সময় রেখার মধ্যে দিয়ে যান তিনি জানেন যন্ত্রণার পরিমাণ কতটা । কিশোর বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, আত্মহত্যার শিকার অনেকেই । অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা তো করেনই, যা তাঁদের এক ভযঙ্কর ট্রমার মধ্যে ঠেলে দেয় । মনস্তত্ত্বের এক ব্যাখ্যা বলে, যাঁরা প্রায়ই আত্মহত্যা করতে চান তাঁরা আসলে মৃত্যু চান না । তাঁরা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান । কিন্তু এই যন্ত্রণার শেষ কোথায় ?
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস 2020-র ভাবনা- একসঙ্গে মিলে আত্মহত্যা রুখে দিই ।
শেষ 45 বছরে আত্মহত্যার হার বিশ্বে 60 শতাংশ বেড়েছে । 15 থেকে 45 বছরের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা মৃত্যুর অন্যতম কারণ ।
বিশ্বে সার্বিক মৃত্যুর হারে 1.4 শতাংশ আত্মহত্যা । অর্থাৎ প্রতি এক লাখে 11.4 শতাংশ আত্মহত্যা হার ।
পুরুষের ক্ষেত্রে 15.0/100 000
মহিলাদের ক্ষেত্রে 8.0/100 000
ইউরোপের দেশগুলিতে 15 থেকে 24 বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা অন্যতম মৃত্যুর কারণ । এই বয়সের মধ্যে বিশ্বে নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি । এমনকী নিজেকে আঘাত করার ক্ষেত্রেও বিষয়টি এক ।
আত্মহত্যার অনুভূতি বা সুইসাইডাল ফিলিং কী ?
মানসিক অবসাদ আত্মহত্যার অন্যতম কারণ । কোনও পারিবারিক কারণে, কোনও মানসিক আঘাত হয়ত মস্তিষ্ককে মানসিক অবসাদের দিকে ঠেলে দেয় । দীর্ঘদিন অবসাদ আত্ম-আঘাতের অন্যতম কারণ । এবং শেষ পরিণতি আত্মহত্যার চেষ্টা ।
যাঁর আত্মীয় বা কাছের বন্ধু আত্মহত্যা করেছেন, তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন, কারণ -
কারণ তিনি কাছের মানুষকে হারিয়েছেন ।
তিনি একটা ট্রমার মধ্যে রয়েছেন, যা তাঁর মস্তিষ্ক মানিয়ে নিতে পারছে না ।
মৃত্যুর দায়ভার ।
পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক ঝুঁকি বেড়ে যায় ।
এই বিষয়গুলো আপনার মধ্যে থাকলে সতর্ক হোন-
- প্রচণ্ড দুঃখভাব । দ্রুত মানসিক স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ।
- আশাহত হওয়া । ভবিষ্যতের আশার আলো খুঁজতে ব্যর্থ ।
- ঠিকঠাক ঘুম না হওয়া বা ক্রনিক ইনসোমনিয়া ।
- অসাড় বোধ করা ।
- একাকিত্ব । কাছের মানুষের থেকে স্বেচ্ছায় দূরে চলে যাওয়া ।
- বারবার আত্ম আঘাতের চেষ্টা ।
তবে বিভিন্ন কারণে সচেতনতা গড়ে তুলতে বাধা আসছে ।
পরিমাণ মতো তথ্য ও সাহায্য না থাকায় সব থেকে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে । তবু অনেক দেশ চেষ্টা করছে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার । কিন্তু সেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রথমে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মন দেওয়া প্রয়োজন । অন্তত ভারতের মতো দেশে তো বটেই, যেখানে মানসিক অসুস্থতা একটা স্টিগমা বা স্টিরিটোটাইপের মতো । মানুষ মানসিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলতে চান না, নতুবা এড়িয়ে যান অবসাদের মতো ভয়ঙ্কর অসুখকে । যা একজন মানুষকে ভিতর থেকে একটু একটু করে ক্ষয় করে, ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে...
কীভাবে আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারি ? বন্ধুত্বের হাত !
হ্যাঁ, সঙ্গ বা বার্তালাপ অনেক সময় অনেক মানুষকে মৃত্যুর খাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে । আমরা এক অপরিচিত ব্যক্তিকেও প্ল্যাটফর্মের ধারে দাঁড়িয়ে খাকলে প্রশ্ন করতে পারি, “আপনি ঠিক আছেন ?” বা “কোনও সমস্যা থাকলে আমায় বলুন ।” আমাদের যোগাযোগের সামান্য চেষ্টা, সামান্য সময় মানুষকে মৃত্যু থেকে ফেরাতে পারে । হ্যাঁ, অনেক সময় আমরা এতটাই আশাহত হই, কারও সঙ্গে সংযোগ করতে পারি না । মৃত্যুর কথা মাথায় আসে । সেই সময়ই আমাদের অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে । পরিবার, বন্ধু বা অন্য যে কারও সঙ্গে । অর্থাৎ পাশে থাকতে হবে, পাশে রাখতে হবে ।
ভারতের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ কী কী ?
মূলত পারিবারিক অশান্তি । সম্পর্কের টানাপোড়েন, অভাব, বেকারত্ব, আর্থিক ক্ষতি আত্মহত্যার অন্যতম কারণ ।
2019 সালের NCRB ভারতে আত্মহত্যার রিপোর্ট অনুযায়ী - আত্মহত্যার সংখ্যা এবং আত্মহত্যার হার - 2015 - 2019
সাল | আত্মহত্যার মোট সংখ্যা | আত্মহত্যার হার |
2015
|
1,33,623 |
10.6
|
2016
|
1,31,008
|
10.3
|
2017
|
1,29,887
|
9.9
|
2018
|
1,34,516
|
10.2
|
2019
|
1,39,123
|
10.4
|
2019 সালে প্রতিদিন 381 জন আত্মহত্যা করেছেন । গত বছরে আত্মহত্যার কারণে মোট মৃত্যু 1 লাখ 39 হাজার 123 । দেশে আত্মহত্যার হার 10.4 শতাংশের বেশি । যার মধ্যে 70.2% - পুরুষ । 29.8% - মহিলা । মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং কর্নাটকে আত্মহত্যার হার বেশি । গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অধিকাংশই -
গলায় ফাঁস - 53.6%
বিষক্রিয়ায় - 25.8%
জলে ডুবে - 5.2%
আত্মহনন - 3.8%