ETV Bharat / bharat

লকডাউনে বিশ্বজুড়ে কমছে দূষণ - Corona

কেন্দ্র পরিচালিত এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং সিস্টেম (SAFAR) অনুযায়ী, কোরোনা প্যানডেমিক রুখতে পদক্ষেপের ফলে দিল্লিতে PM-2.5-এর(দূষণসৃষ্টিকারী সূক্ষ্ম কণা) পরিমাণ 30 শতাংশ এবং পুনে ও আমেদাবাদে 15 শতাংশ কমে গিয়েছে ।

World records low pollution amid lockdown
বিশ্বজুড়ে লকডাউনে তলানিতে দূষণ
author img

By

Published : Apr 12, 2020, 4:57 PM IST

হায়দরাবাদ, 12এপ্রিল : যদিও নভেল কোরোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানোর উদ্দেশ্যেই দেশব্যাপী 21 দিনের লকডাউন করা হয়েছিল, পাশাপাশি এর ফলে দেশের ক্রমশ বাড়তে থাকা দূষণের মাত্রা, যা মূলত নির্মাণকাজ ও যানচলাচলের ফলে তৈরি হয়, তাও নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছে ।

130 কোটির দেশকে হঠাৎ করে থমকে দেওয়ার ফলে, দেশের 23টি শহরে বাতাসের মান ‘ভাল’ ও 65টি শহরে ‘সন্তোষজনক’ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে । এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (CPCB)কাছ থেকে । 0 থেকে 50-এর মধ্যে বায়ুর গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) থাকলে তাকে ভালো বলে ধরা হয়, এবং 51 থেকে 100-র মধ্যে থাকলে তা সন্তোষজনক ।

বাতাসের বিভিন্ন মান বিচার করে যে মূল্যায়ন করা হয়, সেটাই বায়ুর গুণমান সূচক (AQI)। এটা যত কম হবে, বাতাস ততটাই শুদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয় ।

কেন্দ্র পরিচালিত এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং সিস্টেম (SAFAR) অনুযায়ী, কোরোনা প্যানডেমিক রুখতে পদক্ষেপের ফলে দিল্লিতে PM-2.5-এর(দূষণসৃষ্টিকারী সূক্ষ্ম কণা) পরিমাণ 30 শতাংশ এবং পুনে ও আমেদাবাদে 15 শতাংশ কমে গিয়েছে ।

নাইট্রোজেন অক্সাইড(NOx) দূষণ, যার জেরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ঝুঁকি থেকে যায়, তাও কমে গেছে । NOx দূষণ মূলত প্রচূর যানবাহন চলাচল থেকে তৈরি হয় ।

পুণেতে NOx দূষণ 43 শতাংশ, মুম্বইয়ে 38 শতাংশ ও আমেদাবাদে 50 শতাংশ SAFAR-এর বিজ্ঞানী গুরফান বেগ বলেন, সাধারণভাবে মার্চে মাঝামাঝি অবস্থায় (AQI মাত্রা 100-200) থাকে । এখন সেটা হয় ‘সন্তোষজনক’ (একিউআই 50- 100), নাহলে ‘ভালো’ (AQI 0-50) ৷

এই সংখ্যাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ‘আইকিউএয়ার এয়ার ভিসুয়ালস’-এর 2019 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবথেকে দূষিত 30টি শহরের মধ্যে 21টিই ভারতে ৷

এই ঘটনা অবশ্য শুধু ভারতে নয় । বিশ্বজুড়ে একই রকমভাবে নেমেছে দূষণের মাত্রা ।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রকাশ করা উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের তিনটি শহরে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডজনিত বায়ুদূষণ 40 শতাংশ কমেছে কারণ গোটা মহাদেশজুড়ে দূষণসৃষ্টিকারী গতিবিধি হ্রাস পেয়েছে । এই প্রেক্ষিতেই বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন সঙ্কটের মোকাবিলা করতে পাঁচটি পরামর্শ সামনে রেখেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। ‘কী করে কোভিড-১৯ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারে’—এই শিরোনামে একটি বিবৃতিতে WEF নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো দিয়েছে –

ঝুঁকি পুনর্বিবেচনা:

একটা বিপর্যয়ের জেরে (কোরোনা প্যানডেমিক) সরকার, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবিশেষকে এই স্তরে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে । WEF-র যুক্তি, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবনকে একইভাবে বিপন্নতার মুখে ফেলছে, এবং এক্ষেত্রেও দ্রুত সার্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।’

মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত, 2050 সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাঁচ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হতে পারে ।

যদি প্যানডেমিক আমাদের এই শিক্ষা দেয়, যে প্যানডেমিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কার সামনে আমরা কতটা বিপন্ন, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে সেগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারব ।

বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি শোনা:

কোভিড-19 সংকটের চেহারা আমাদের বুঝতে বাধ্য করেছে, যে এর মধ্যে আমরা প্রত্যেকে রয়েছি । উদাহরণস্বরূপ, ইতালিতে চিনের সাহায্য পাঠানো শুধু ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে বদলই বোঝাচ্ছে না; এটা একই সঙ্গে ‘অপর’-এর ধারণা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত । পৃথিবীর একটি অংশের ঘটনা যে আমাদের প্রত্যেককে প্রভাবিত করতে পারে, সেটাও মেনে নিচ্ছেন সবাই ।

কোভিড-19 পৃথিবীকে দেশভিত্তিক বিচ্ছিন্নতা, নাকি আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বেছে নিতে পথ দেখাবে, সেই বিচার চলছে, কিন্তু একটা বোধ ক্রমশ গড়ে উঠছে, যে আমরা বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে থাকা মানুষের সঙ্গে যুক্ত, এবং বর্তমান পরিস্থিতি পরিবেশ নিয়ে জোরালো পদক্ষেপে ত্বরান্বিত করতে পারে ।

মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া:

কোভিড-19-এর প্রতিক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তি, বাণিজ্য ও সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে রোগী, মেডিক্যাল কর্মী ও বিপন্ন মানুষের দুর্দশা । সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বহু মানুষ তাঁদের জীবনের খোল-নলচে বদলে ফেলেছেন, বয়স্ক প্রতিবেশীদের সাহায্য করছেন, এবং স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান বা খাদ্যভাণ্ডারে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন । তাঁরা সেই শক্তি দেখাচ্ছেন, যা তখনই ফুটে উঠতে পারে, যখন আমরা কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে একজোট হই ।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসম্পর্কিত জিনিসপত্র সরবরাহের দিকে, তারা তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফ্রি অ্যাক্সেস দিচ্ছে, এবং পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ভাবে তাদের কর্মীদের সাহায্য করছে । তারা দেখাচ্ছে, কতখানি কর্মতৎপর হওয়া সম্ভব । আর সরকার কোরোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে । সব মিলিয়ে যেন নাগরিকদের সবথেকে ভালো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে । এসমস্ত কিছু থেকেই বোঝা যাচ্ছে, যে বিশ্বজুড়ে একটা বড় সংকটের মোকাবিলা বৃহত্তরভাবে করা সম্ভব । আমাদের সহানুভূতি এবং সক্রিয়তা তৈরি করতে হবে সমস্ত ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে সেইসব মানুষ, যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবথেকে বেশি বিপন্ন ।

বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা:

এই প্যানডেমিকের গুরুত্ব যখন সামনে এসেছে, তার সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়েছে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তাও । প্যানডেমিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ভাইরাল হয়েছে (কার্ভ সমান করার মিমটি আমরা সবাই দেখেছি), এবং চিকিৎসকরা নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন । এর ফলে বিশেষজ্ঞদের কথা শোনার একটা প্রবণতাও তৈরি হতে পারে । জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে জিততে গেলে, আমাদের পরিবেশবিজ্ঞানী ও পরামর্শদাতাদের কথাও শুনতে হবে । সমস্ত বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা আমাদের সঠিক দিশায় নিয়ে যাবে ।

সাংস্কৃতিক বদল ঘটানো

কোভিড-19-এর যে প্রতিক্রিয়ায় যে পরিবর্তন দেখা গেছে, তা অনেকটা তেমনই, যা আমাদের প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে । চিত্তাকর্ষকভাবে, অনেক প্রয়োজনীয় বদল আনতে শুধু একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন লাগে ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বোগোটায় সাইকেল চালানো বেড়ে যাওয়া এবং সাইকেল লেন চওড়া হওয়া, বা কোরোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় বাড়ি থেকে কাজ করা – এর কোনওটার জন্যই নতুন কোনও প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়নি, প্রয়োজন হয়েছে নতুন ভাবনার ওপর ভরসা রাখার । এটা স্পষ্ট হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার মতো অনেক উপকরণ আমাদের হাতে রয়েছে; প্রয়োজন শুধু সেগুলো প্রয়োগের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ।

আমরা কোভিড-19 প্যানডেমিক থেকে যখন বেরিয়ে আসব, তখন পৃথিবীটা কেমন দেখাবে, তার অনেকটা অজানা । কিন্তু যে মূল সামাজিক পরিবর্তনগুলো আমরা দেখছি, তা আমাদের শেষ সুযোগ দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয় এড়ানোর ।

যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে আসন্ন জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের পরামর্শ সুদূরপ্রসারী হবে ।

হায়দরাবাদ, 12এপ্রিল : যদিও নভেল কোরোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানোর উদ্দেশ্যেই দেশব্যাপী 21 দিনের লকডাউন করা হয়েছিল, পাশাপাশি এর ফলে দেশের ক্রমশ বাড়তে থাকা দূষণের মাত্রা, যা মূলত নির্মাণকাজ ও যানচলাচলের ফলে তৈরি হয়, তাও নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছে ।

130 কোটির দেশকে হঠাৎ করে থমকে দেওয়ার ফলে, দেশের 23টি শহরে বাতাসের মান ‘ভাল’ ও 65টি শহরে ‘সন্তোষজনক’ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে । এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (CPCB)কাছ থেকে । 0 থেকে 50-এর মধ্যে বায়ুর গুণমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) থাকলে তাকে ভালো বলে ধরা হয়, এবং 51 থেকে 100-র মধ্যে থাকলে তা সন্তোষজনক ।

বাতাসের বিভিন্ন মান বিচার করে যে মূল্যায়ন করা হয়, সেটাই বায়ুর গুণমান সূচক (AQI)। এটা যত কম হবে, বাতাস ততটাই শুদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয় ।

কেন্দ্র পরিচালিত এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং সিস্টেম (SAFAR) অনুযায়ী, কোরোনা প্যানডেমিক রুখতে পদক্ষেপের ফলে দিল্লিতে PM-2.5-এর(দূষণসৃষ্টিকারী সূক্ষ্ম কণা) পরিমাণ 30 শতাংশ এবং পুনে ও আমেদাবাদে 15 শতাংশ কমে গিয়েছে ।

নাইট্রোজেন অক্সাইড(NOx) দূষণ, যার জেরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ঝুঁকি থেকে যায়, তাও কমে গেছে । NOx দূষণ মূলত প্রচূর যানবাহন চলাচল থেকে তৈরি হয় ।

পুণেতে NOx দূষণ 43 শতাংশ, মুম্বইয়ে 38 শতাংশ ও আমেদাবাদে 50 শতাংশ SAFAR-এর বিজ্ঞানী গুরফান বেগ বলেন, সাধারণভাবে মার্চে মাঝামাঝি অবস্থায় (AQI মাত্রা 100-200) থাকে । এখন সেটা হয় ‘সন্তোষজনক’ (একিউআই 50- 100), নাহলে ‘ভালো’ (AQI 0-50) ৷

এই সংখ্যাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ‘আইকিউএয়ার এয়ার ভিসুয়ালস’-এর 2019 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবথেকে দূষিত 30টি শহরের মধ্যে 21টিই ভারতে ৷

এই ঘটনা অবশ্য শুধু ভারতে নয় । বিশ্বজুড়ে একই রকমভাবে নেমেছে দূষণের মাত্রা ।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রকাশ করা উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের তিনটি শহরে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডজনিত বায়ুদূষণ 40 শতাংশ কমেছে কারণ গোটা মহাদেশজুড়ে দূষণসৃষ্টিকারী গতিবিধি হ্রাস পেয়েছে । এই প্রেক্ষিতেই বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন সঙ্কটের মোকাবিলা করতে পাঁচটি পরামর্শ সামনে রেখেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। ‘কী করে কোভিড-১৯ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারে’—এই শিরোনামে একটি বিবৃতিতে WEF নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো দিয়েছে –

ঝুঁকি পুনর্বিবেচনা:

একটা বিপর্যয়ের জেরে (কোরোনা প্যানডেমিক) সরকার, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবিশেষকে এই স্তরে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে । WEF-র যুক্তি, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবনকে একইভাবে বিপন্নতার মুখে ফেলছে, এবং এক্ষেত্রেও দ্রুত সার্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।’

মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত, 2050 সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাঁচ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হতে পারে ।

যদি প্যানডেমিক আমাদের এই শিক্ষা দেয়, যে প্যানডেমিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কার সামনে আমরা কতটা বিপন্ন, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে সেগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারব ।

বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি শোনা:

কোভিড-19 সংকটের চেহারা আমাদের বুঝতে বাধ্য করেছে, যে এর মধ্যে আমরা প্রত্যেকে রয়েছি । উদাহরণস্বরূপ, ইতালিতে চিনের সাহায্য পাঠানো শুধু ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে বদলই বোঝাচ্ছে না; এটা একই সঙ্গে ‘অপর’-এর ধারণা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত । পৃথিবীর একটি অংশের ঘটনা যে আমাদের প্রত্যেককে প্রভাবিত করতে পারে, সেটাও মেনে নিচ্ছেন সবাই ।

কোভিড-19 পৃথিবীকে দেশভিত্তিক বিচ্ছিন্নতা, নাকি আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বেছে নিতে পথ দেখাবে, সেই বিচার চলছে, কিন্তু একটা বোধ ক্রমশ গড়ে উঠছে, যে আমরা বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে থাকা মানুষের সঙ্গে যুক্ত, এবং বর্তমান পরিস্থিতি পরিবেশ নিয়ে জোরালো পদক্ষেপে ত্বরান্বিত করতে পারে ।

মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া:

কোভিড-19-এর প্রতিক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তি, বাণিজ্য ও সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে রোগী, মেডিক্যাল কর্মী ও বিপন্ন মানুষের দুর্দশা । সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বহু মানুষ তাঁদের জীবনের খোল-নলচে বদলে ফেলেছেন, বয়স্ক প্রতিবেশীদের সাহায্য করছেন, এবং স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান বা খাদ্যভাণ্ডারে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন । তাঁরা সেই শক্তি দেখাচ্ছেন, যা তখনই ফুটে উঠতে পারে, যখন আমরা কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে একজোট হই ।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসম্পর্কিত জিনিসপত্র সরবরাহের দিকে, তারা তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফ্রি অ্যাক্সেস দিচ্ছে, এবং পারিশ্রমিক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ভাবে তাদের কর্মীদের সাহায্য করছে । তারা দেখাচ্ছে, কতখানি কর্মতৎপর হওয়া সম্ভব । আর সরকার কোরোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে । সব মিলিয়ে যেন নাগরিকদের সবথেকে ভালো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে । এসমস্ত কিছু থেকেই বোঝা যাচ্ছে, যে বিশ্বজুড়ে একটা বড় সংকটের মোকাবিলা বৃহত্তরভাবে করা সম্ভব । আমাদের সহানুভূতি এবং সক্রিয়তা তৈরি করতে হবে সমস্ত ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে সেইসব মানুষ, যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবথেকে বেশি বিপন্ন ।

বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা:

এই প্যানডেমিকের গুরুত্ব যখন সামনে এসেছে, তার সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়েছে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তাও । প্যানডেমিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ভাইরাল হয়েছে (কার্ভ সমান করার মিমটি আমরা সবাই দেখেছি), এবং চিকিৎসকরা নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন । এর ফলে বিশেষজ্ঞদের কথা শোনার একটা প্রবণতাও তৈরি হতে পারে । জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে জিততে গেলে, আমাদের পরিবেশবিজ্ঞানী ও পরামর্শদাতাদের কথাও শুনতে হবে । সমস্ত বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা আমাদের সঠিক দিশায় নিয়ে যাবে ।

সাংস্কৃতিক বদল ঘটানো

কোভিড-19-এর যে প্রতিক্রিয়ায় যে পরিবর্তন দেখা গেছে, তা অনেকটা তেমনই, যা আমাদের প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে । চিত্তাকর্ষকভাবে, অনেক প্রয়োজনীয় বদল আনতে শুধু একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন লাগে ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বোগোটায় সাইকেল চালানো বেড়ে যাওয়া এবং সাইকেল লেন চওড়া হওয়া, বা কোরোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় বাড়ি থেকে কাজ করা – এর কোনওটার জন্যই নতুন কোনও প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়নি, প্রয়োজন হয়েছে নতুন ভাবনার ওপর ভরসা রাখার । এটা স্পষ্ট হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার মতো অনেক উপকরণ আমাদের হাতে রয়েছে; প্রয়োজন শুধু সেগুলো প্রয়োগের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ।

আমরা কোভিড-19 প্যানডেমিক থেকে যখন বেরিয়ে আসব, তখন পৃথিবীটা কেমন দেখাবে, তার অনেকটা অজানা । কিন্তু যে মূল সামাজিক পরিবর্তনগুলো আমরা দেখছি, তা আমাদের শেষ সুযোগ দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয় এড়ানোর ।

যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে আসন্ন জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের পরামর্শ সুদূরপ্রসারী হবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.