ETV Bharat / bharat

ব্রহ্মপুত্রের তীরে সার্বভৌমত্বের লড়াই শেষে কী ফিরবে শান্তি ? - amit shah

জানুয়ারিতে সাক্ষরিত হয়েছে বোড়ো চুক্তি । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক বলেছেন । তবে কয়েকটি উপজাতি তাদের অধিকারের দাবিতে আলাদা স্বশাসিত কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে ৷ কয়েকটি গোষ্ঠী আবার বোড়োদের নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট । শান্তি প্রতিষ্ঠায় কী পদক্ষেপ নেবে সরকার এখন সেটাই দেখার ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Feb 17, 2020, 12:59 PM IST

অসম, 17 ফেব্রুয়ারি : ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীর । 15 লাখ বোড়োর যুদ্ধক্ষেত্র । বছরের পর বছর ধরে সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই চলছে সেখানে । একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে লড়াইয়ে বহু নাগরিকের প্রাণ গেছে ৷ ইতিমধ্যে, কেন্দ্র ও অসম সরকার ন্যাশনাল ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড (NDFB)-র চারটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বোড়ো শান্তি চুক্তি সাক্ষর করে কয়েক দশকের সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইয়ে ইতি টেনেছে ৷ NDFB-সহ অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ABSU) এবং ইউনাইটেড বোড়ো পিপলস অরগানাইজেশন (UBPO)-ও নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তিতে সই করেছে৷ শাহ জানিয়েছেন, যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবিগুলি পুরোনো হয়ে গেছে এবং অসমের অখণ্ডতা সুরক্ষিত করা হয়েছে ৷

এখন বোড়োল্যান্ড টেরটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (BTAD)-এর নতুন নাম হবে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (BTC)। জনগণনার ভিত্তিতে BTAD সংলগ্ন ৩০০০ গ্রামবাসীকে সংযুক্ত করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে । ওই এলাকায় তৈরি করা হবে জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, রেল কোচ কারখানা, মেডিক্যাল কলেজ ও ক্যান্সার হাসপাতাল । শান্তি চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির অন্যতম হল পাহাড়ি জেলায় বসবাসকারী বোড়োদের তপশিলি উপজাতি তালিকায় যুক্ত করা, বোড়ো ভাষাকে অসমের সংযুক্ত সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া । BTAD এবং অসমের অন্যান্য জেলাকে নিয়ে ইউনিয়ন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিরোধিতা করে কয়েকটি সংগঠন অসম বনধ ডাকে । বিশেষ মর্যাদার দাবিতে অনড় থাকে ABSU৷ এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকরা এই শান্তি চুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৷

যখন উত্তর-পূর্ব ভারতে CAA বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন এই চুক্তি BJP-কে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে । বিশেষ করে অসমে ৷ গত 27 বছরে বোড়োল্যান্ড সমস্যা নিয়ে তিনটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হয় ৷ এর থেকেই বোঝা যায় ভৌগোলিক জটিলতা এবং ওই গোষ্ঠীর দাবির গুরুত্ব ৷ 1981 সালে রঞ্জন দইমারি দ্বারা বোড়ো সিকিওরিটি ফোর্স তৈরি এবং উপজাতিদের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে ABSU-র আক্রমণ অসমকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল বোড়ো অঞ্চলের উপজাতিদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া এবং উন্নয়নের দাবিতে, অসমিয়াকে ওই রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার পর সেই আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে মোড় নেয় ৷ 1993 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বোড়োল্যান্ড অটোনমাস কাউন্সিল (BAC) তৈরির জন্য একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ এই চুক্তি সাক্ষর হওয়ার পরপরই NDFB এর থেকে সরে আসে এবং উপজাতি নির্মূল অভিযান শুরু করে ৷ চারটি জেলা নিয়ে BTC তৈরির জন্য 2003 সালে দ্বিতীয় চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ NDFB আবারও সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় এবং হিংসাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যায় ৷ যদিও সর্বশেষ চুক্তি নতুন আশার আলো জাগিয়েছে, তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ৷

স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অসম এবং নাগাল্যান্ড, মেঘালয় ও মিজোরাম প্রিন্সলে স্টেট, মণিপুর ও ত্রিপুরা 1956 সাল থেকে 1972 সাল পর্যন্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল ৷ উত্তর পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলি উত্তর পূর্ব কাউন্সিলের অধীনে ছিল । এই কাউন্সিল ওই অঞ্চলে উন্নয়নের কাজ করত ৷ 238 টি উপজাতি গোষ্ঠীর ধাত্রীভূমি হিসেবে এই অঞ্চল বরাবর সাংস্কৃতিক দমন ও আক্রমণের ভয়ে জর্জরিত ছিল ৷ দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনুন্নত থেকে যাওয়ার আশঙ্কাও সামাজিক ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের আরও একটা কারণ ৷ কেন্দ্রীয় সরকার অসমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আশাবাদী, যদিও নাথ-যোগী সম্প্রদায় নতুন করে তপশিলি উপজাতি ভুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে ৷ অন্যদিকে আরও একটি উপজাতি গোষ্ঠী গারো তাদের অধিকারের দাবিতে আলাদা স্বশাসিত কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে ৷ আরও কয়েকটি গোষ্ঠী বোড়োদের নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট ৷ ফলে কেন্দ্রকে অবশ্যই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সূত্রে পৌঁছতে হবে, যাতে চিরশান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়৷

অসম, 17 ফেব্রুয়ারি : ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীর । 15 লাখ বোড়োর যুদ্ধক্ষেত্র । বছরের পর বছর ধরে সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই চলছে সেখানে । একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে লড়াইয়ে বহু নাগরিকের প্রাণ গেছে ৷ ইতিমধ্যে, কেন্দ্র ও অসম সরকার ন্যাশনাল ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড (NDFB)-র চারটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বোড়ো শান্তি চুক্তি সাক্ষর করে কয়েক দশকের সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইয়ে ইতি টেনেছে ৷ NDFB-সহ অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ABSU) এবং ইউনাইটেড বোড়ো পিপলস অরগানাইজেশন (UBPO)-ও নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপস্থিতিতে শান্তি চুক্তিতে সই করেছে৷ শাহ জানিয়েছেন, যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবিগুলি পুরোনো হয়ে গেছে এবং অসমের অখণ্ডতা সুরক্ষিত করা হয়েছে ৷

এখন বোড়োল্যান্ড টেরটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (BTAD)-এর নতুন নাম হবে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (BTC)। জনগণনার ভিত্তিতে BTAD সংলগ্ন ৩০০০ গ্রামবাসীকে সংযুক্ত করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে । ওই এলাকায় তৈরি করা হবে জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, রেল কোচ কারখানা, মেডিক্যাল কলেজ ও ক্যান্সার হাসপাতাল । শান্তি চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির অন্যতম হল পাহাড়ি জেলায় বসবাসকারী বোড়োদের তপশিলি উপজাতি তালিকায় যুক্ত করা, বোড়ো ভাষাকে অসমের সংযুক্ত সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া । BTAD এবং অসমের অন্যান্য জেলাকে নিয়ে ইউনিয়ন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিরোধিতা করে কয়েকটি সংগঠন অসম বনধ ডাকে । বিশেষ মর্যাদার দাবিতে অনড় থাকে ABSU৷ এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকরা এই শান্তি চুক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৷

যখন উত্তর-পূর্ব ভারতে CAA বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন এই চুক্তি BJP-কে অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে । বিশেষ করে অসমে ৷ গত 27 বছরে বোড়োল্যান্ড সমস্যা নিয়ে তিনটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হয় ৷ এর থেকেই বোঝা যায় ভৌগোলিক জটিলতা এবং ওই গোষ্ঠীর দাবির গুরুত্ব ৷ 1981 সালে রঞ্জন দইমারি দ্বারা বোড়ো সিকিওরিটি ফোর্স তৈরি এবং উপজাতিদের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে ABSU-র আক্রমণ অসমকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল বোড়ো অঞ্চলের উপজাতিদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া এবং উন্নয়নের দাবিতে, অসমিয়াকে ওই রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার পর সেই আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে মোড় নেয় ৷ 1993 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বোড়োল্যান্ড অটোনমাস কাউন্সিল (BAC) তৈরির জন্য একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ এই চুক্তি সাক্ষর হওয়ার পরপরই NDFB এর থেকে সরে আসে এবং উপজাতি নির্মূল অভিযান শুরু করে ৷ চারটি জেলা নিয়ে BTC তৈরির জন্য 2003 সালে দ্বিতীয় চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ NDFB আবারও সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় এবং হিংসাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যায় ৷ যদিও সর্বশেষ চুক্তি নতুন আশার আলো জাগিয়েছে, তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ৷

স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অসম এবং নাগাল্যান্ড, মেঘালয় ও মিজোরাম প্রিন্সলে স্টেট, মণিপুর ও ত্রিপুরা 1956 সাল থেকে 1972 সাল পর্যন্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল ৷ উত্তর পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলি উত্তর পূর্ব কাউন্সিলের অধীনে ছিল । এই কাউন্সিল ওই অঞ্চলে উন্নয়নের কাজ করত ৷ 238 টি উপজাতি গোষ্ঠীর ধাত্রীভূমি হিসেবে এই অঞ্চল বরাবর সাংস্কৃতিক দমন ও আক্রমণের ভয়ে জর্জরিত ছিল ৷ দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনুন্নত থেকে যাওয়ার আশঙ্কাও সামাজিক ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের আরও একটা কারণ ৷ কেন্দ্রীয় সরকার অসমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আশাবাদী, যদিও নাথ-যোগী সম্প্রদায় নতুন করে তপশিলি উপজাতি ভুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে ৷ অন্যদিকে আরও একটি উপজাতি গোষ্ঠী গারো তাদের অধিকারের দাবিতে আলাদা স্বশাসিত কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে ৷ আরও কয়েকটি গোষ্ঠী বোড়োদের নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট ৷ ফলে কেন্দ্রকে অবশ্যই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সূত্রে পৌঁছতে হবে, যাতে চিরশান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.