দিল্লি, 31 অগাস্ট : আজ অসমে NRC-র চূড়ান্ত তালিকা বের হবে ৷ শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে NRC ৷ শুধু রাজনীতি নয়, পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাড়ির অন্দরমহল, সবজায়গায় আলোচনায় বিষয়বস্তু এই NRC ৷
অসম সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁদের নাম তালিকায় থাকবে না তাঁদের বিদেশি বলে ঘোষণা করা হবে না ৷ নিখরচায় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে ৷ NRC-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া প্রত্যেকে নিজেদের নাম নথিভূক্ত করার জন্য ফরেনারস ট্রাইবুনালে আবেদন করতে পারবেন ৷ আবেদনের দিনও 60 থেকে 120 দিন বাড়ানো হবে ৷ DLS ( ডিসট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটিস )-এর মাধ্যমে তাঁদের সবরকম সাহায্য করা হবে ৷
গতকাল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সমগ্র অসম জুড়ে 51 কোম্পানি CAPF বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । BSF সূ্ত্রে খবর, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ ভারত-বাংলাদেশ 4096 কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে কঠোর নজরদারির বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
কী এই NRC ? NRC নিয়ে কেন এত বিতর্ক ? NRC তালিকায় নাম না এলে কী হবে ? যাদের নাম আসবে তাঁরা কী আলাদা কোনও সুবিধা পাবেন ? এই প্রশ্নগুলিই মূল আলোচ্য বিষয় ৷
- চূড়ান্ত NRC তালিকায় নাম না থাকলে কী হবে?
সেক্ষেত্রে ফরেনারস ট্রাইবুনাল ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো যাবে ৷ তারপরও যদি তালিকায় নাম না ওঠে? কোনও দেশই যদি তাঁদের আশ্রয় না দেয়, তখন তাদের ঠিকানা কোথায় হবে? তাদের কীভাবে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে ? না কি দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হবে? এসব বিষয় নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে ।
NRC তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাঁরা নাম নথিভুক্ত করার জন্য ফরেনারস ট্রাইবুনালে আবেদন করতে পারবেন ৷ আবেদনের দিন 60 থেকে 120 দিন বাড়ানো হবে ৷
- ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স অর্থাৎ NRC মানে এটি রাজ্যের বৈধ নাগরিকদের তালিকা ৷ এই জাতীয় নাগরিকদের নথিভুক্তকরণের ইতিহাস শুরু হয় 1948 সালের 19 জুলাই থেকে৷
- 1948 সালে প্রথম কার্যকর হয় পশ্চিম পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ৷ এরপর 1950 সালের 8 এপ্রিল নেহরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ 1950 সালের 1 মার্চ সংবিধানে নথিভুক্ত হয় ইমিগ্র্যান্টস অ্যাক্ট (অনুপ্রবেশকারীদের অসম থেকে বহিষ্কার) ৷
- প্রথমবার এই তালিকা তৈরি হয় 1951 সালে ৷ স্বাধীন ভারতের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের পাশাপাশি অসমের প্রথম NRC তালিকা প্রকাশিত হয় ৷ 1957 সালে অনুপ্রবেশকারীদের অসম থেকে বহিষ্কারের আইন বাতিল করা হয় ৷
- 1960 -এর 24 অক্টোবর অহমিয়াকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অসম বিধানসভায় বিল পাশ হয় ৷
- 19 মে 1961 সালে অসমের ব্যারাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ৷ এর ফলে সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় কয়েক হাজার শরণার্থীদের ভারতে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় অসম থেকে চলে যেতে বাধ্য হতে হয় ৷
- 23 সেপ্টেম্বর ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে ভারতে শরণার্থীদের প্রবেশের ফলে দাঙ্গার সূত্রপাত হয় ৷
- 1967 সালে অসম ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠিত হয় ৷
- এরপর 1971 -এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের উদ্বাস্তুদের নতুন দিশা দেখায় ৷
- 1978 সালে ভোটার তালিকায় অভিবাসীদের প্রবেশ করানো হয় ৷
- 1979 সালে অসমের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয় ৷ এরপর 1979 থেকে পরবর্তী তিন বছর অসম রাষ্ট্রপতি শাসনে ছিল ৷ এরপর প্রায় 6 বছর আন্দোলন চলে ৷
- 1983 তে অসমের 14 টি গ্রামে প্রায় 3000 হাজার জনকে গণহত্যা করা হয় ৷ সেই বছরই অসমে বিধানসভা নির্বাচন করা হয় ৷
- 1983 সালের ডিসেম্বরে অবৈধ শরণার্থী আইন পাশ হয়, যাতে ছিল 1971 এর 24 মার্চের আগে যারা ভারতে এসেছিল তারাই NRC-র অন্তর্ভুক্ত হবে ৷
- 1985 এর 15 অগাস্ট অসম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অসমের উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত হয় ৷
- এরপর ও 1997 সালে নির্বাচন কমিশন শরণার্থীদের নামের যে ভোটারের তালিকা প্রকাশ করে সেই নামগুলির পাশে "সন্দেহজনক" শব্দটি লেখা ছিল ৷
- 2003 সালে চালু হয় নাগরিকত্ব আইন ৷
- 2009 সালে অসমভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অসম পাবলিক ওয়ার্কস অবৈধ নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যায় ৷
- এরপর 2011 থেকে 2013 সালের মধ্যে NRC ইশুতে মন্ত্রীপরিষদের উপ-কমিটি গঠন করে ও নতুন পদ্ধতি জমা পড়ে ৷
- 2013- র অগাস্টে সুপ্রিম কোর্ট পিটিশন গ্রহণ করে ও NRC তালিকা নবীকরণ ও গণনা প্রক্রিয়া শুরু করে ৷
- 2014 সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই তালিকা নবীকরণের কাজ শুরু হয় ৷ 1971 সালের 24 মার্চের আগে অসমে আসা ব্যক্তি ও তাঁদের বংশধরদের নামই NRC-তে উঠবে বলে জানানো হয় ৷
- 2015 সালে NRC নবীকরণের পাশাপাশি তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের কাজই শুরু হয় ৷
- কয়েক দফায় তারিখ পিছোনোর পর 2017 সালের 31 ডিসেম্বর প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয় ৷
- প্রায় 3.29 কোটি আবেদনকারীর মধ্যে 1.9 কোটি মানুষ এই তালিকার আওতায় পড়েনি ৷
- এর জেরে 2018 সালে অসম নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় ৷
- 30 জুলাই, 2018 সালে দ্বিতীয় খসড়ায় তালিকা প্রকাশিত হয় ৷ সেই তালিকায় 2.89 কোটি আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র 40 লাখ মানুষ ছাড়া প্রত্যেকেই এই তালিকার আওতায় চলে আসে ৷
- চলতি বছরের 8 জানুয়ারি লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হয় ৷
- এরপর চলতি বছরের 21 জুন APW NRC- র চূড়ান্ত খসড়া যাচাইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবদন করে ৷ জানানো হয় সেই খসড়ায় প্রায় 1,02, 462 জনকে বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়েছিল যা 2018 সালের তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৷
- 2019-এর 22 জুলাই সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন বাতিল করলেও চূড়ান্ত NRC তালিকা পেশের সময়সীমা আরও এক মাস বাড়ানোর নির্দেশ দেয় ৷
- 2019 সালের গুয়াহাটি হাইকোর্ট NRC তালিকা পেশের জন্য 221 জন সদস্যের একটি ফরেনারস ট্রাইবুনাল তৈরি করে ৷