প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সময় দিল্লির হিংসা ভারতের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে?
কপিল সিবল : দেশের ইতিহাসে প্রথমবার, এই ইশুগুলো আন্তর্জাতিক ইশুতে পরিণত হয়েছে । ব্রিটেনের সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকেরা প্রতিবাদ করছেন । যে ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ, তারাও প্রতিবাদ করছে । টার্কির প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রতিবাদ করছেন, রাষ্ট্রসংঘের মানবিকার বিষয়ক হাই কমিশনারও প্রতিবাদ করছেন । মধ্য-প্রাচ্য এবং আমেরিকার সমস্ত রাজনৈতিক ভাবনার মানুষরাও প্রতিবাদ করছেন ।
প্রশ্ন : তার মানে কি এই, যেভাবে কেন্দ্র হিংসার মোকাবিলা করেছে, তাতে এই দেশগুলো ভারতের বিরুদ্ধে বলার সুযোগ পেয়েছে?
কপিল সিবল : দেখে মনে হচ্ছে যে ভারত সরকার বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রয়েছে । দেখুন, আমরা আজ বিশ্বায়নের পৃথিবীতে বাস করছি । যোগাযোগ বিপ্লবের জেরে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি অভ্যন্তরীণ বিষয় আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে । আমার মনে হয়, সরকার সেটা বুঝতে পারছে না । কাউকে জবাব দিতে গিয়ে, যে বলছে "এই ধরনের ঘটনা তোমাদের দেশে ঘটতে দিও না", তাকে বলা যে এটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়... এতে কোনও লাভ হবে না ৷ বা এটা গ্রহণযোগ্য হবে না । দুর্ভাগ্যজনক যে দিল্লির মতো একটা জায়গা হিংসার জন্য বিশ্বজুড়ে শিরোনামে এসেছে । দিল্লিতে যাঁরা রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী আর পুলিশ কমিশনার -কাউকে দেখা যায়নি । এতেই বোঝা যাচ্ছে যে দেশের রাজনীতি কোন পথে চলেছে ।
প্রশ্ন : কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা দিল্লি হিংসা নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছে ৷ কিন্তু সেটা নিয়েও একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে । কী বলবেন?
কপিল সিবল : দেখে অবাক হচ্ছি যে অধ্যক্ষ বলছেন হোলির পরে আলোচনা হবে । হোলির পরের আলোচনায় কী বিশেষত্ব রয়েছে? হোলির আগেই বা হবে না কেন? যখন আমরা শুধু আলোচনাই চাইছি, তখন আলোচনা হবে না-ই বা কেন?
প্রশ্ন : সরকার কি এই ইশুতে বিতর্ক থেকে পালাতে চাইছে?
কপিল সিবল : মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও বিষয়েই সরকার সংবেদনশীল নয় । এটা শুধু দিল্লি হিংসা নয়, বেহাল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । ওরা বলে চলেছে যে অর্থনীতির ভিত মজবুত আছে । যদি তাই হয়, তাহলে বৃদ্ধি 5 শতাংশের নিচে কেন? আর চাহিদাই বা নেই কেন?
প্রশ্ন : সরকারকে কী জবাব দেবেন?
কপিল সিবল : আমার মনে হয় দেশ বদলাচ্ছে । যখন ক্ষমতায় ছিলাম, আমরা কখনও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করার চেষ্টা করিনি । যখন আর ক্ষমতায় নেই, আমরা দেখছি যে সরকার প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের উপর সাঁড়াশি-আক্রমণ করছে তাদের দখল নেওয়ার জন্য ৷ আর নিশ্চিত করছে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অঙ্গুলিহেলনে চলে । আমার মনে হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা দেশকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে । আমি মনে করি, বিচারবিভাগ, তদন্তকারী সংস্থা, পুলিশ, শিক্ষাজগত এবং সংবাদমাধ্যমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ।
এই সংক্রান্ত খবর : দিল্লি হিংসায় পুলিশ বহু ক্ষেত্রে মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে : কপিল সিবল
প্রশ্ন : কংগ্রেস এই লড়াইয়ের কী অভিমুখ দেখছে?
কপিল সিবল : মানুষ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছেন । জনতার এই ক্রোধ উপলব্ধি করুক সরকার । যখনই এর মধ্যে অনেকটা রাজনীতি ঢুকে যায়, সরকার বলে বিরোধীরা হিংসায় ইন্ধন দিচ্ছে । বিক্ষোভ সর্বভারতীয় রূপ না পেলে, এই আন্দোলন স্থায়ী হবে না । আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের আগুনে ইন্ধন দেওয়ার বদলে রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত । গোটা দেশে তাহলে এই বার্তাটা যাবে, আমাদের সামাজিক বুনোটকে রক্ষা করতেই হবে ।
প্রশ্ন : আপনি কি রাজধানীতে এমন হিংসা কখনও দেখেছেন? এই ধ্বংসলীলা কি পরিকল্পিত ছিল?
কপিল সিবল : এই হিংসা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংগঠিত ছিল । হয়ত হামলাকারীরা বাইরে থেকে এসেছিল । সবথেকে অসাধারণ বিষয়টা হল, হিন্দু ও মুসলমান প্রতিবেশীরা একে অপরকে রক্ষা করেছেন । যারা হিংসায় উসকানি দিয়েছিল, তারা আমাদের সামাজিক মৈত্রীকে ধ্বংস করতে চায় । দিল্লির যে চাঁদনি চক অঞ্চল থেকে আমি লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করেছি, সেখানে হিন্দু এবং মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবেই একসঙ্গে থেকেছেন । কিন্তু হিংসা ছড়িয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে, যেখানে BJP সম্প্রতি কয়েকটা বিধানসভা আসন জিতেছে । এতেই স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে হিংসার পিছনে কারা আছে ।