দিল্লি, 25 অগাস্ট : কোরোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় রেলও । এই মারাত্মক রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জারি হয় যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা । তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় রেল । সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে কুলি, ছোট ভেন্ডর এবং শ্রমিকদের উপর । যাঁরা রেলের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন ।
যখন প্যানডেমিক আঘাত হানে, তখন তাঁদের দিকে কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি । আর যেটা সবচেয়ে বেশি করে তাঁদের বিপক্ষে চলে গিয়েছে, তা হল তাঁরা রেলের হয়ে কাজ করলেও, সরাসরি তাঁরা রেলের কর্মী নন । তাই প্যানডেমিকের বোঝা তাঁদেরই নিজেদেরই বহন করতে হয়েছে ।
পরিবারের জন্য খাবারের মতো জরুরি জিনিসও তাঁদের কাছে ছিল না । এঁরা সমাজের এমন একটা স্তরে থাকেন, যেখানে তাঁদের সমস্যার কথা আড়ালেই থেকে যায় । কোভিড 19 ও রাজনীতির মতো পরিস্থিতিতে কেউ শুনতেই পায় না ।
ETV ভারত ভেন্ডরস ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলেছে । তারা জানিয়েছে যে পরিস্থিতি খুবই খারাপ । আর যাঁরা এই সঙ্কটের সময় আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকারের তাঁদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটাই সঠিক সময় । এক্ষেত্রে পরিযায়ীদের কথা বলা হচ্ছে না ।
অখিল ভারতীয় রেলওয়ে খান-পান লাইসেন্সেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রবিন্দর গুপ্তা বলেন, ‘‘সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য দেয়নি । লকডাউনের সময় মন্ত্রকের তরফ থেকে জোর করে দোকান খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । আমরা দাবি করেছিলাম যে যতদিন না ট্রেন চালু হচ্ছে, ততদিন লাইসেন্স ফি মকুব করা হোক ।’’
তিনি ETV ভারতকে বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম যে রেলওয়ে স্টেশনের স্টল ভেন্ডরদের রেশন ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়ার জন্য । এছাড়া বিদ্যুৎ ও জলের বিল মুকুব করারও আবেদন করা হয় । কিন্তু 100 শতাংশ লাইসেন্স ফি, বিদ্যুৎ ও জলের বিল মকুব করার কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি ।’’
গুপ্তা এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘যদিও সরকার 1 জুন থেকে দোকান খোলার জন্য চাপ দিয়েছিল । ফলে ভেন্ডরদের এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে । ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় তাঁরা রোজগারের অভাবে খিদের জ্বালায় মারা যাচ্ছে । ভেন্ডরদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে এবং তাঁদের উপর ঋণের বোঝাও বাড়ছে ।’’
যেহেতু কয়েকটি মাত্র ট্রেন চলাচল করছে, তাই এখনই দোকান খোলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে তিনি জানিয়েছেন । তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন পুরোপুরি না চলার জন্য এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আমরা লাইসেন্স ফি মকুব করার দাবি জানিয়েছি । পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জলের বিল পুরোপুরি মকুব করতে হবে ।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন যে যে বড় সংস্থাগুলিকে দোকান খোলার অনুমতি রেলওয়ে বোর্ড দিয়েছে, তাদের থেকেও অনেক বেশি চাপে রয়েছেন গরিব ভেন্ডর, ট্রলি অপারেটররা । একটি আর্থিক যোজনার মধ্যে সরকারকে অবশ্যই এই ছোট ভেন্ডরদের আনার কথা ভাবতে হবে, যাতে তাঁরা তাঁদের পরিবারের জন্য কিছু করতে পারে । এই ভেন্ডরদের পরিস্থিতি একেবারে ভালো নয় ।
এটা উল্লেখযোগ্য যে ভারতের নয় হাজার রেল স্টেশনে স্টল বা স্থায়ী ইউনিটে দুই লাখেরও বেশি ভেন্ডর কাজ করেন ।
অন্যদিকে যে কুলিরা রেল স্টেশনে যাতায়াতকারী মানুষদের সহায়তা করে তাদের কিছু জোটেনি, কারণ শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকরা বিশেষ ট্রেনে যাতায়াত করছেন । সারা দেশে প্রায় 30 হাজার কুলি রয়েছেন ।
পরে অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেন’স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোপাল মিশ্র বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ । কারণ, তাঁরা দুই বেলা খাবার জোগাড় করতে পারছেন না । প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলছে না, তাই কুলিদের অবস্থা আরও খারাপ । যাঁদের জনধন অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁরা কেন্দ্রের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ও রাজ্যের কাছ থেকে 500 টাকা করে পাচ্ছেন । এছাড়া যতটা সম্ভব ইউনিয়নের তরফে তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে । কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় ।’’
তিনি বলেন, ‘‘দৈনিক মজুরিতে যাঁরা রেলে কাজ করেন, তাঁরা আমাদের দায়িত্ব এবং তাঁদের ক্ষতির মুখে পড়া উচিত নয় । সরকারের এঁদের জন্য কোনও নীতি নেওয়া উচিত । এখনই রেলের কর্মী ও তাঁদের পরিবারের জন্য অন্তত 10 হাজার টাকার আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের । তাঁদের জন্য এখনও সাহায্য করা হয়নি ।’’ একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ ভারতের রেলের উচিত পুরোপুরি ভাবে আবার ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা ৷