দিল্লি, 9 মে : আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য অ্যামেরিকার বিশেষ দূত জালময় খলিলজাদ নয়াদিল্লিতে একটি ছোটো কিন্তু ‘জরুরি’ সফর করেন ৷ তার পর দিনই একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, অ্যামেরিকা চায় যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারত আরও বড় ভূমিকা নিক ৷ বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রী (EAM) ড. এস জয়শঙ্কর, NSA অজিত ডোভাল ও বিদেশ সচিব হর্ষ শ্রিংলার সঙ্গে খলিলজাদের দিল্লির ওই বৈঠক সম্বন্ধে কিছু জানা যায় ৷
সূত্রের খবর, “জরুরি ভিত্তিতে ওই আলোচনা হয় ৷ তিনি (খলিলজাদ) পরেও ভারতে আসতে পারতেন ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷”
তালিবান ও পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার মধ্যে ভারত এখনও পর্যন্ত প্রবেশ করতে নারাজ ৷ তারা প্রথম থেকেই সরকারিভাবে জানিয়ে এসেছে যে, ভালো ও খারাপ তালিবান- এভাবে কখনই ভাগ করা সম্ভব নয় ৷ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে, এখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল অ্যামেরিকা চাইছে, ভারত তালিবান-সহ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের উপর কড়া নজর রাখুক ৷ একজন সরকারি আধিকারিক বলেন, “EAM এবং NSA-র সঙ্গে পুরো আলোচনার মূল বিষয় ছিল আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিবর্তন, অ্যামেরিকা ও তালিবানের আলোচনার প্রভাব এবং ওই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যকরী হবে এমন বিভিন্ন পদ্ধতির প্রস্তাব ৷”
খলিলজাদের সঙ্গে ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিস ৷ যিনি দোহা থেকে এসেছিলেন ৷ সেখানে তিনি দেখা করেন মোল্লা বড়দার ও তাঁর সফরতর দলের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছিলেন ৷ দিল্লি আসার পথে তিনি ইসলামাবাদেও গিয়েছিলেন ৷
আফগানিস্তানও অন্য দেশগুলির মতো COVID-19 প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ এই পরিস্থিতির মধ্যেও সেখানে প্রতিরক্ষা ও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এই অবস্থায় তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলেও ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে আফগানদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমঝোতার সময়সীমা বৃদ্ধি করতে ৷ সূত্রের খবর, খলিলজাদ ‘সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর তালিবানদের আক্রমণ বৃদ্ধি, আফগান সরকার ও সাংবিধানিক বিষয়, নিরাপত্তা বাহিনী ও সমাজের উপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের’ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় আলোচকদের কথা জানিয়েছেন ৷
সূত্র আরও খবর, ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হিসেবে বর্ণনা করে অ্যামেরিকা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারত এর আগে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা নিয়েছে ৷ এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে যে “তারা কার্যকরী অবদান রাখতে চাইলে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারতের অংশগ্রহণ করা উচিত ৷” একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে নয়াদিল্লির ভালো সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ৷
বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের সরকারি আলোচনায় কাবুলের গুরুদ্বারে সাম্প্রতিক হামলায় 25 জনের মৃত্যু এবং আফগানিস্তানের শিখ ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷ ঘটনাচক্রে খলিলজাদের সফরের একদিনের মধ্যেই বেজিংয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশরিও আফগানিস্তানে চিনের বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক করেন ৷ মিশরি টুইট করেছেন, “কূটনীতি অবশ্যই চালু রাখতে হবে ৷ এমনকী মাস্ক পরা অবস্থাতেও ! রাষ্ট্রদূত লিউ জিয়ানের সঙ্গে আমাদের দুই দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে খুব আলোচনার পর খুবই আনন্দিত বোধ করছি ৷”
সূত্র থেকে আরও জানা গিয়েছে যে, COVID-19-এর জন্য বিশ্বব্যাপী লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যেও চাবাহার বন্দরে কাজ অব্যাহত রয়েছে ৷ ‘আফগানিস্তানকে মানবিক সাহায্যের কাজ’ ভারত চালিয়ে যাচ্ছে ৷ সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে
যে, ভারত ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে 75 হাজার টন গম আফগানিস্তানে পাঠিয়েছে ৷ এর মধ্যে গত মাসে 5 হাজার টন পাঠানো হয় এবং বৃহস্পতিবার পাঠানো হয় 10 হাজার টন ৷ সূত্রের তরফে বিশেষ জোর দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ভারত আফগানিস্তানে চা ও চিনি পাঠানোর চেষ্টা করছে ৷ তার থেকেই প্রমাণ মিলছে ‘মানবিক সাহায্যের জন্য চাবাহার বন্দর যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে’ ৷