ETV Bharat / bharat

উন্নাও : রাজনৈতিক পরিচয় অপরাধীকে রেহাই দেয় না - ধর্ষণ

ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতিটি ভালো অনুষ্ঠানকে পালন করতে শেখায় । ভালো ভাবে বাঁচতে শেখায় । কিন্তু, বাস্তবের সঙ্গে এর অনেকটাই পার্থক্য দেখা যায় । যেখানে আইনের সমতার কথা বলা হয়, ক্ষেত্র বিশেষে সেখানেই পার্থক্যটা বেশ চোখে পড়ে । আবার ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, হয়রানির মতো ঘটনার সঠিক-ন্যায্য বিচার করতে ব্যর্থতা চোখে পড়ছে বার বার । অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিতা সঠিক ন্যায়বিচার পারছেন না ।

Political identity does not save the criminal
রাজনৈতিক পরিচয় অপরাধীকে রেহাই দেয় না
author img

By

Published : Jan 6, 2020, 7:47 AM IST

Updated : Jan 6, 2020, 9:03 AM IST

যদি এমন একটি সমাজ দেখতে পেতাম, যেখানে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, লুটপাট, জুলুমবাজির মতো কোনও ঘটনা না ঘটত। সত্যিই, স্বপ্ন কতটা সুন্দর হতে পারে ?

মানুষের প্রতিনিধিরা যখন ধর্ষণের মত অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েন, তখন কেবল রাজনীতিই নয়, কলুষিত হয়ে পড়ে গোটা সমাজ । যখন প্রতিটি পাতায় ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে তখন ভারতীয় সমাজের চিত্রটা এক ধাক্কায় অনেকটা নিচে নেমে যায় ।

ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য কিন্তু তেমন নয় । এই সংস্কৃতি প্রতিটি ভালো অনুষ্ঠানকে পালন করতে শেখায় । ভালো ভাবে বাঁচতে শেখায় । কিন্তু, বাস্তবের সঙ্গে এর অনেকটাই পার্থক্য দেখা যায় । যেখানে আইনের সমতার কথা বলা হয়, ক্ষেত্র বিশেষে সেখানেই পার্থক্যটা বেশ চোখে পড়ে । আবার ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, হয়রানির মতো ঘটনার সঠিক-ন্যায্য বিচার করতে ব্যর্থতা চোখে পড়ছে বার বার । অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিতা সঠিক ন্যায়বিচার পারছেন না ।

যখন একটি মেয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তখন সঠিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শুরু করে । ন্যায় বিচারের দাবিতে যখন এক জন নির্যাতিতা বার বার আবেদন করেও ব্যর্থ হন, তখন বিচার ব্যবস্থার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে । যখন বার বার অনুরোধ করার পর পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে না, তখন তাদের সদিচ্ছা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তথাকথিত পুলিশকর্তারা তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হন । এবং মাত্র দেড় মাসের মধ্যে সামনে আসে আসল তথ্য । শেষ পর্যন্ত মূল অভিযুক্তের শাস্তি ঘোষণা করে আদালত ।

উন্নাওয়ের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কী কী করতে পারে । বিচার প্রার্থনা করে মেয়েটি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে । একাধিকবার অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে । একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে । অবশেষে সুবিচার পেয়েছে ।

নিচের বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া যাক---

যে কোনও অপরাধ কঠোরভাবে দমন করার জন্য যোগী আদিত্যনাথের সরকার সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ করছে । এই পদক্ষেপের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে 100 জনের বেশি দুষ্কৃতী এবং অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । দেওয়া হয়েছে শাস্তিও ।

যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে একটি ঘটনার কথা বলা যাক । মানখি গ্রাম থেকে 17 বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় । অভিযোগ ওঠে, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার এবং তার ভাই অথুপ সিং ওই মেয়েটিকে অপহরণ করে এবং ধর্ষণ করে । মেয়েটির বাবা পুলিশে অভিযোগ করার পর অভিযুক্তদের হাত থেকে মুক্তি মেলে মেয়েটির । যদিও পরে পুলিশ কুলদীপের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নিতে চায়নি । উলটে সেঙ্গারকে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য মেয়েটির উপর চাপ সৃষ্টি করা হতে থাকে ।

অত্যাচার এখানেই শেষ হয় না । বেআইনি অস্ত্র মামলায় মেয়েটির বাবাকে ফাঁসিয়ে দেয় বিধায়ক । মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মেয়েটির বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয় । এর পর মেয়েটিকে প্রাণে মেরে দেওয়ারও চেষ্টা শুরু হয় । সে সময় সুবিচার পেতে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মেয়েটি । ঠিক তার পর দিনই পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় মেয়েটির বাবার । এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার দেওয়া হয় CBI-এর হাতে । তারা বিধায়ক এবং তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে । ধর্ষণের ঘটনার নতুন কর তদন্ত শুরু হয় । কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে CBI কোনও দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারেনি । তদন্ত চলত থেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে । আর এর মধ্যে বিধায়ক এবং তার ভাই দলবল নিয়ে নিগৃহীতা এবং তার পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয় দেখাতে শুরু করে । শুরু হয় হুমকি । টাকার লোভ দেখানো থেকে শুরু করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি-- সব কিছুই চলতে থাকে । ইতিমধ্যেই মিথ্যা মামলায় মেয়েটির কাকার দশ বছরের জেল হয় ।

গোটা পরিবারকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয় । লরির ধাক্কায়ে মেয়েটির পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় । ভয়ঙ্কর সেই দুর্ঘটনায় মেয়েটি এবং তাঁর আইনজীবী মারাত্মক জখম হন । দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মেয়েটির দুই জন আত্মীয় ।

এই ভয়ঙ্কর ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে গোটা দেশ । বিধায়কের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে BJP । দল থেকে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। পরবর্তী সময় আদালত সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করে । যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয় ।

গত জুলাই মাসে মেয়েটিকে যখন প্রাণ মেরে ফেলার চেষ্টা হয় তখনই বিষয়টির দিকে সবার নজর পরে । মামলাটি দিল্লির একটি আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত হয় । শুরু হয় জরুরিভিত্তিতে শুনানি । দৈনিক শুনানি চলতে থাকে । দীর্ঘ শুনানির পর বিধায়ককে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । তার যাবজ্জীবন সাজা হয় ।

যাই হোক, পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছিল বিধায়ককে, শেষ পর্যন্ত মেয়েটি ন্যায়বিচার পেয়েছিল । উন্নাওয়ের মতো ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় । সামান্যতম শিথিলতা না দেখিয়ে দোষীর বিরুদ্ধে আইনত সর্বোচ্চ শাস্তিবিধান দিয়েছে শীর্ষ আদালত । আইন এবং নিয়ম মেনে যে কোনও রকম পদক্ষেপ করতে যে শীর্ষ আদালত বদ্ধপরিকর তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় । এই মামলার শুনানি চলার সময় সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করে । এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের

মন্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয় গোটা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ । বুঝিয়ে দেয় গোটা দেশে কী চলছে এই মুহূর্তে । গত সেপ্টেম্বরে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশে পাঁচটি ধর্ষণ এবং একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে । ধর্ষণের ঘটনায় আদালত সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় একটি মেয়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে । প্রথমে মেয়েটিকে মারধর করা হয়, তার পর ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয় । এমনকী, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে ভরতি করা হয় । সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।

বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মেয়েটির উপর হামলা চালানো হয়েছিল । অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বেশ কিছুটা পথ দৌড়ে পালাতে গিয়েছিল মেয়েটি । কিন্তু পারেনি । হাসপাতালে মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজনের নাম বলে যায় মেয়েটি ।

একই রকম একটি ঘটনা সামনে আসে পঞ্জাবে । ধর্ষণের পর মেয়েটি গিয়েছিল থানায় । পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে । কিন্তু অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ । এর পর লজ্জায়-অপমানে আত্মহত্যা করে মেয়েটি । পরিস্থিতি এমন দিকে মোড় নিচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি যেন অপরাধ করার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাচ্ছে । দেশের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় বিপর্যয় তৈরি করতে পারে । অবিলম্বে এক বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে ।

বাস্তব সত্য হচ্ছে, ভারতের গণতন্ত্র তার চরিত্র থেকে বিচ্যুত হচ্ছে । যখন কোনও রাজনৈতিক দল এমন দুষ্কৃতদের পাশে দাঁড়ায় তখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে ওঠে । শুধু পাশে দাঁড়ানোই নয়, সংসদ-বিধানসভায় নেতা করে পাঠানো হয় । এই ছবে দেশের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় । চারবারের বিধায়ক ছিল সেঙ্গার । কোনও রাজনৈতিক দলই সেঙ্গারকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারেনি। শুরু করেছিল কংগ্রেসে, তার পর বহুজন সমাজ পার্টি, তৃতীয় বার সমাজবাদী পার্টি এবং চতুর্থ বার গেরুয়া শিবিরের হয়ে বিধায়ক হয়েছিল সেঙ্গার ।

এতে কোনও সন্দেহ নেই, দেশের সর্বত্র এই ছবিটাই দেখা যাচ্ছে । প্রতিটি ক্ষেত্রেই সব কয়টি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই একই কথা বলা যায় । যদি ক্ষমতাশীন দলের ক্ষেত্রেই এমনই ছবি ধরা পড়ে তাহলে তা খুবই ভয়ঙ্কর । গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা কোনওদিনই সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে না ।

ভয়ে কেউ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি । সেঙ্গারের ভাই জেলা শাসককে খুন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে আইন সেক্ষেত্রে কিছু করতে পারেনি । বিষয়টি এখনও বিচারাধীন । উন্নাও মামলায় বিচারপতি মামলা চলাকালীন একটি কথা জানান ।

বলেন, দেশের সংবিধান এবং আইন সব কিছুর উপরে । এই উপলব্ধি বুঝিয়ে দেয়, রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকলেও কেউই আইনের উপরে যেতে পারবেন না । এই পরিস্থিতি তখনই বন্ধ করা সম্ভব, যখন পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থা কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে । যে কোনও রকম অপরাধের ক্ষেত্রে সঠিক পথে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে ।

এখন সময় এসেছে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার । রাজনৈতিক দলগুলিকে এই সব দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে । রাজনীতিকে হাতিয়ার করে কোনও অন্যায় কাজ করা যাবে না । আর তা না হলে পুলিশ-প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে ।

যদি এমন একটি সমাজ দেখতে পেতাম, যেখানে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, লুটপাট, জুলুমবাজির মতো কোনও ঘটনা না ঘটত। সত্যিই, স্বপ্ন কতটা সুন্দর হতে পারে ?

মানুষের প্রতিনিধিরা যখন ধর্ষণের মত অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েন, তখন কেবল রাজনীতিই নয়, কলুষিত হয়ে পড়ে গোটা সমাজ । যখন প্রতিটি পাতায় ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে তখন ভারতীয় সমাজের চিত্রটা এক ধাক্কায় অনেকটা নিচে নেমে যায় ।

ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য কিন্তু তেমন নয় । এই সংস্কৃতি প্রতিটি ভালো অনুষ্ঠানকে পালন করতে শেখায় । ভালো ভাবে বাঁচতে শেখায় । কিন্তু, বাস্তবের সঙ্গে এর অনেকটাই পার্থক্য দেখা যায় । যেখানে আইনের সমতার কথা বলা হয়, ক্ষেত্র বিশেষে সেখানেই পার্থক্যটা বেশ চোখে পড়ে । আবার ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, হয়রানির মতো ঘটনার সঠিক-ন্যায্য বিচার করতে ব্যর্থতা চোখে পড়ছে বার বার । অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিতা সঠিক ন্যায়বিচার পারছেন না ।

যখন একটি মেয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তখন সঠিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শুরু করে । ন্যায় বিচারের দাবিতে যখন এক জন নির্যাতিতা বার বার আবেদন করেও ব্যর্থ হন, তখন বিচার ব্যবস্থার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে । যখন বার বার অনুরোধ করার পর পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে না, তখন তাদের সদিচ্ছা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তথাকথিত পুলিশকর্তারা তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হন । এবং মাত্র দেড় মাসের মধ্যে সামনে আসে আসল তথ্য । শেষ পর্যন্ত মূল অভিযুক্তের শাস্তি ঘোষণা করে আদালত ।

উন্নাওয়ের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কী কী করতে পারে । বিচার প্রার্থনা করে মেয়েটি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে । একাধিকবার অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে । একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে । অবশেষে সুবিচার পেয়েছে ।

নিচের বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া যাক---

যে কোনও অপরাধ কঠোরভাবে দমন করার জন্য যোগী আদিত্যনাথের সরকার সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ করছে । এই পদক্ষেপের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে 100 জনের বেশি দুষ্কৃতী এবং অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । দেওয়া হয়েছে শাস্তিও ।

যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে একটি ঘটনার কথা বলা যাক । মানখি গ্রাম থেকে 17 বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় । অভিযোগ ওঠে, বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার এবং তার ভাই অথুপ সিং ওই মেয়েটিকে অপহরণ করে এবং ধর্ষণ করে । মেয়েটির বাবা পুলিশে অভিযোগ করার পর অভিযুক্তদের হাত থেকে মুক্তি মেলে মেয়েটির । যদিও পরে পুলিশ কুলদীপের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নিতে চায়নি । উলটে সেঙ্গারকে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য মেয়েটির উপর চাপ সৃষ্টি করা হতে থাকে ।

অত্যাচার এখানেই শেষ হয় না । বেআইনি অস্ত্র মামলায় মেয়েটির বাবাকে ফাঁসিয়ে দেয় বিধায়ক । মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মেয়েটির বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয় । এর পর মেয়েটিকে প্রাণে মেরে দেওয়ারও চেষ্টা শুরু হয় । সে সময় সুবিচার পেতে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মেয়েটি । ঠিক তার পর দিনই পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় মেয়েটির বাবার । এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার দেওয়া হয় CBI-এর হাতে । তারা বিধায়ক এবং তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে । ধর্ষণের ঘটনার নতুন কর তদন্ত শুরু হয় । কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে CBI কোনও দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারেনি । তদন্ত চলত থেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে । আর এর মধ্যে বিধায়ক এবং তার ভাই দলবল নিয়ে নিগৃহীতা এবং তার পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয় দেখাতে শুরু করে । শুরু হয় হুমকি । টাকার লোভ দেখানো থেকে শুরু করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি-- সব কিছুই চলতে থাকে । ইতিমধ্যেই মিথ্যা মামলায় মেয়েটির কাকার দশ বছরের জেল হয় ।

গোটা পরিবারকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয় । লরির ধাক্কায়ে মেয়েটির পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় । ভয়ঙ্কর সেই দুর্ঘটনায় মেয়েটি এবং তাঁর আইনজীবী মারাত্মক জখম হন । দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মেয়েটির দুই জন আত্মীয় ।

এই ভয়ঙ্কর ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে গোটা দেশ । বিধায়কের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে BJP । দল থেকে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। পরবর্তী সময় আদালত সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করে । যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয় ।

গত জুলাই মাসে মেয়েটিকে যখন প্রাণ মেরে ফেলার চেষ্টা হয় তখনই বিষয়টির দিকে সবার নজর পরে । মামলাটি দিল্লির একটি আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত হয় । শুরু হয় জরুরিভিত্তিতে শুনানি । দৈনিক শুনানি চলতে থাকে । দীর্ঘ শুনানির পর বিধায়ককে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । তার যাবজ্জীবন সাজা হয় ।

যাই হোক, পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছিল বিধায়ককে, শেষ পর্যন্ত মেয়েটি ন্যায়বিচার পেয়েছিল । উন্নাওয়ের মতো ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় । সামান্যতম শিথিলতা না দেখিয়ে দোষীর বিরুদ্ধে আইনত সর্বোচ্চ শাস্তিবিধান দিয়েছে শীর্ষ আদালত । আইন এবং নিয়ম মেনে যে কোনও রকম পদক্ষেপ করতে যে শীর্ষ আদালত বদ্ধপরিকর তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় । এই মামলার শুনানি চলার সময় সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করে । এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের

মন্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয় গোটা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ । বুঝিয়ে দেয় গোটা দেশে কী চলছে এই মুহূর্তে । গত সেপ্টেম্বরে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশে পাঁচটি ধর্ষণ এবং একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে । ধর্ষণের ঘটনায় আদালত সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় একটি মেয়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে । প্রথমে মেয়েটিকে মারধর করা হয়, তার পর ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয় । এমনকী, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েটিকে হাসপাতালে ভরতি করা হয় । সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ।

বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মেয়েটির উপর হামলা চালানো হয়েছিল । অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বেশ কিছুটা পথ দৌড়ে পালাতে গিয়েছিল মেয়েটি । কিন্তু পারেনি । হাসপাতালে মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজনের নাম বলে যায় মেয়েটি ।

একই রকম একটি ঘটনা সামনে আসে পঞ্জাবে । ধর্ষণের পর মেয়েটি গিয়েছিল থানায় । পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে । কিন্তু অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ । এর পর লজ্জায়-অপমানে আত্মহত্যা করে মেয়েটি । পরিস্থিতি এমন দিকে মোড় নিচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি যেন অপরাধ করার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাচ্ছে । দেশের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় বিপর্যয় তৈরি করতে পারে । অবিলম্বে এক বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে ।

বাস্তব সত্য হচ্ছে, ভারতের গণতন্ত্র তার চরিত্র থেকে বিচ্যুত হচ্ছে । যখন কোনও রাজনৈতিক দল এমন দুষ্কৃতদের পাশে দাঁড়ায় তখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে ওঠে । শুধু পাশে দাঁড়ানোই নয়, সংসদ-বিধানসভায় নেতা করে পাঠানো হয় । এই ছবে দেশের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় । চারবারের বিধায়ক ছিল সেঙ্গার । কোনও রাজনৈতিক দলই সেঙ্গারকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারেনি। শুরু করেছিল কংগ্রেসে, তার পর বহুজন সমাজ পার্টি, তৃতীয় বার সমাজবাদী পার্টি এবং চতুর্থ বার গেরুয়া শিবিরের হয়ে বিধায়ক হয়েছিল সেঙ্গার ।

এতে কোনও সন্দেহ নেই, দেশের সর্বত্র এই ছবিটাই দেখা যাচ্ছে । প্রতিটি ক্ষেত্রেই সব কয়টি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই একই কথা বলা যায় । যদি ক্ষমতাশীন দলের ক্ষেত্রেই এমনই ছবি ধরা পড়ে তাহলে তা খুবই ভয়ঙ্কর । গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা কোনওদিনই সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে না ।

ভয়ে কেউ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি । সেঙ্গারের ভাই জেলা শাসককে খুন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে আইন সেক্ষেত্রে কিছু করতে পারেনি । বিষয়টি এখনও বিচারাধীন । উন্নাও মামলায় বিচারপতি মামলা চলাকালীন একটি কথা জানান ।

বলেন, দেশের সংবিধান এবং আইন সব কিছুর উপরে । এই উপলব্ধি বুঝিয়ে দেয়, রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকলেও কেউই আইনের উপরে যেতে পারবেন না । এই পরিস্থিতি তখনই বন্ধ করা সম্ভব, যখন পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থা কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে । যে কোনও রকম অপরাধের ক্ষেত্রে সঠিক পথে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে ।

এখন সময় এসেছে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার । রাজনৈতিক দলগুলিকে এই সব দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে । রাজনীতিকে হাতিয়ার করে কোনও অন্যায় কাজ করা যাবে না । আর তা না হলে পুলিশ-প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে ।

New Delhi, Jan 06 (ANI): Students held protest outside Delhi Police headquarters at Delhi's ITO over violence inside campus. Students including professors received injuries after they were assaulted by masked goons. They have been admitted to AIIMS Trauma Center. Security has been beefed up at the campus following the attack.


Last Updated : Jan 6, 2020, 9:03 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.