বিশ্বজুড়ে সমস্ত দেশ কোরোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে লকডাউন কার্যকর করছে । যাঁরা লকডাউনের জন্য বাইরে বেরোতে অক্ষম, তাঁদের কাছে কোরোনা নিয়ে বিশদ জ্ঞান এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহের বিষয়। বিভিন্ন দেশের সাইবার গ্যাংগুলো সমাজের সহৃদয়তা এবং প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে মানুষের ভয় ভাঙিয়ে রোজগার করতে চাইছে। তিন সপ্তাহ আগে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভুয়ো ওয়েবসাইটের একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা অধুনা বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ‘কোরোনা ভাইরাস’ শব্দটির আগে বা পরে ‘ম্যাপ’, ‘রিয়েলটাইম’, ‘স্টেটাস’ ইত্যাদি শব্দ জুড়ে দিয়েছে ।
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা অফিসার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজেশ পন্থের বক্তব্য অনুযায়ী, গত দু মাসে কোরোনা ভাইরাসের নাম ব্যবহার করে চার হাজারেরও বেশি প্রতারক পোর্টাল সামনে এসেছে । প্রতিদিন সাইবার অপরাধীদের থেকে কোরোনা সতর্কতা এবং ভুয়ো চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ নাগরিকের কাছে ই-মেল আসছে, যা দেখে অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের সরকার তাদের নাগরিকদের সতর্ক করছে, যাতে তারা এদের ফাঁদে না পড়েন এবং সতর্ক থাকেন । অ্যামেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা FBI বলছে, যে কোভিডের প্রকোপের পর, সাইবার অপরাধের সংখ্যা চতুর্গুণ বেড়েছে । ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ভন ডার লিয়েনের মন্তব্য, যে সাইবার অপরাধীরা আরও বেশি করে ঘরবন্দি নাগরিকদের ভয়কে ব্যবহার করে টাকা রোজগার করতে চাইছে.... এই পরিস্থিতির গুরুত্বকে স্পষ্ট করছে । 35টি দেশের তিনশোরও বেশি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা যে সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছেন, তার পাশাপাশি দেশের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কৌশলকেও আরও তীক্ষ্ন করতে হবে । তিন বছর আগে, ‘ওয়ান্না ক্রাই ’ নামে সাইবার অপরাধীদের সন্ত্রাস হানার মুখে পড়েছিল 175টি দেশ । এরপর রাশিয়া, ইউক্রেন, আমেরিকা, জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় লক্ষ লক্ষ ডেবিট কার্ডের তথ্য চুরির ঘটনা সামনে আসে । কেন্দ্রের বহু ওয়েবসাইট তখন সাইবার- হামলার শিকার হয়েছিল । লকডাউনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের তাঁদের বাড়ি থেকে কাজ করতে হচ্ছে । এটা সত্যি, যে বাড়ির কম্পিউটার বা ল্যাপটপগুলোতে অফিসের মতো নিরাপত্তা থাকে না । অ্যাপের ব্যবহারে কোনও গাফিলতি অথবা সন্দেহজনক লিঙ্কে কোনও ক্লিক হলেই সাইবার অপরাধীরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নাগাল পেয়ে যাবে । সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে, জুম ভিডিয়ো অ্যাপ ব্যবহারকারী দুই IT পেশাদারের কম্পিউটার হ্যাক করে নেওয়া, এবং তারপর বিটকয়েনের মাধ্যমে বিপুল মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনা সামনে এসেছে ।
কোরোনাভাইরাস ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা তাদের শিকারদের কম্পিউটার ও স্মার্টফোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, এবং তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মুহূর্তে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে । এই সাইবার গ্যাংগুলো কতটা শৈল্পিকভাবে এই কাজ করছে, তার পরিষ্কার প্রমান হল, সামান্য পরিবর্তন ছাড়া PM কেয়ার্স ফান্ডের মতো হুবহু দেখতে লিঙ্কের জোয়ার। সম্প্রতি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যে বিশ্বের উচ্চতম সর্দার প্যাটেলের মূর্তি 400 মিলিয়ন ডলারে অনলাইনে বিক্রি করছিল এবং সেই টাকা গুজরাত সরকারের কোভিড তহবিলে যাবে বলে দাবি করছিল । সেই নির্দোষ মানুষগুলো, যাঁরা এই সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পা দিয়ে, লকডাউনের শেষপর্যন্ত বিনামূল্যে সিনেমা দেখার লোভে, অথবা ফ্রি মোবাইল রিচার্জের লোভে ভুয়ো লিঙ্কগুলো ফরওয়ার্ড করছেন, তাঁরা আরও নিরীহ মানুষকে এই ফাঁদে টেনে আনছেন । এই সাইবার সন্ত্রাস একমাত্র থামানো যেতে পারে, যদি সরকার সাইবার-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত করে । ততক্ষণ ক্ষতির পরিমাণ কমাতে নেটিজেনদেরও প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।