মুম্বই ও দিল্লি, 23 নভেম্বর : নাটক শুরু হয়েছিল শুক্রবার মাঝরাতেই । দিন যত এগিয়েছে নাটক ততই জমে উঠতে শুরু করেছে । আর এবার 'মহারাষ্ট্র কোন্দল' সুপ্রিম কোর্টের দরজায় । যেভাবে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং NCP -র 'চোখে ধুলো' দিয়ে সরকার গড়েছে BJP , তার বিরুদ্ধেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে শিবসেনা, NCP ও কংগ্রেস । একদিকে তাঁরা ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়ে আদালতের দরজার কড়া নাড়ছে, অন্যদিকে 'বিশ্বাসঘাতক'-এর তকমা দিয়ে NCP নেতা অজিত পাওয়ারকে পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন শরদ পাওয়ার । তাঁর জায়গায় বসানো হয়েছে শরদ ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত পাটিলকে ।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের এক নাটকের যবনিকা পতন হয়েছিল গতকাল মাঝরাতে । আর তারপরেই শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় নাটক । শরদ পাওয়ারদের সিদ্ধান্তকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোররাতে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের পর যেভাবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসলেন, তাকে গণতন্ত্রের 'সর্বনাশ' হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা ।
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক বাতাবরণ আজ ভোর থেকেই উত্তপ্ত । যেভাবে BJP সরকার গড়েছে, তাকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের অভিযোগ, "মানুষকে ঠকিয়ে BJP সরকার গড়েছে । এই সরকার বেআইনি । 23 নভেম্বর মহরাষ্ট্রের কালো দিন ।" জোটবার্তা বজায় রাখতে এক কদম এগিয়ে অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করেছে দল । সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে । কিন্তু যে সমীকরণে BJP সরকার গড়ল, তাতে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার কথা শিবসেনার । কারণ NCP -সূত্রে খবর তাদের কয়েকজন নেতা না কি অজিত পাওয়ারের সঙ্গে রয়েছেন । শিবসেনার কিছু বিধায়কও গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন বলে খবর । জনা 15 নির্দল বিধায়ককে পাশে পেয়েছেন ফড়নবিস । পরিস্থিতি যা তাতে 145-র ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেছেন ফড়নবিস, দাবি এমনটাই । তিরিশ নভেম্বরের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ।
যদিও ক্ষমতা হাতছাড়ার মতো পরিস্থিতি হলেও শেষ দেখে ছাড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিবসেনা নেতৃত্ব । প্রায় 20 বছর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল শিবসেনা । কিন্তু আপাতত স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে । বাবাকে দেওয়া কথা না রাখতে পারার বেদনা এখন উদ্ধব ঠাকরের বুকে । সেই সঙ্গে মারাঠা রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে । ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসেছে শিবসেনা । যদি মহারাষ্ট্রের কুর্সি হাতছাড়া হয়ে যায়, তাহলে অনেককিছুই হারাতে হতে পারে প্রথমবার ভোটে জেতা ঠাকরে পরিবারের তরুণ সদস্য আদিত্যকে ।
শিবসেনা যেখানে অনেকটা অস্তিত্বের সংকটে, সেখানে শরদ পাওয়ারের অবস্থাও কিন্তু অনেকটা কোণঠাসা । দিল্লি রাজনীতির অলিন্দে একটি খবর বেশ কিছুদিন ধরেই ঘোরাফেরা করছিল । তা হল শরদ পাওয়ারকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হতে পারে । কিন্তু যেভাবে দলের প্রতিষ্ঠাতা শরদ পাওয়ারকে তোয়াক্কা না করে NCP-র 'সেকেন্ড-ইন-কমান্ড' অজিত পাওয়ার গেরুয়া শিবিরে হাত মিলিয়েছেন, তাতে দলের বিভাজন স্পষ্ট । এই পরিস্থিতিতে মরণ কামড় দিতে মরিয়া শরদ পাওয়ারও ।
গতকাল রাত থেকে পরিস্থিতি যে নাটকীয় মোড় নিয়েছে তার পেছনে BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর মস্তিষ্ক রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে । একসময় কংগ্রেস বিপদে পড়লে ত্রাতা হিসেবে 'চাণক্যে'র ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে । আর এখন BJP শিবিরের কোনও সমস্যায় চাণক্যের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে অমিত শাহকে । কর্নাটকের পর মহারাষ্ট্রেও শাহর মস্তিষ্ক যে কাজ করছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের । আপাতত মহারাষ্ট্র তাকিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে । রবিবার সাড়ে 11টা নাগাদ শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে । শিবসেনার অভিযোগের পর সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনও পদক্ষেপ করে, তাহলে ফের একবার মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মোড় আসতে পারে ।