সদস্যপদ খারিজ সংক্রান্ত নোটিস নিয়ে স্পিকারের ক্ষমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়কদের আবেদন জানানোর ক্ষমতা দিয়েছে রাজস্থান হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট। দুই আদালতের এই রায়ের ফলে প্রশ্নের মুখে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের দেওয়া 28 বছর আগের রায় । এমনটাই দাবি করলেন সাংবিধানিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পিডিটি আচার্য । ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পিডিটি আচার্য বললেন, দলীয় বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেন স্পিকার। স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী বিধায়কদের করা আর্জি শুনতে রাজি হয়েছে রাজস্থান হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত তাঁর সরকারের ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য জয়পুরে একটি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন রাজস্থানের উপ মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট সহ কংগ্রেসের 19 বিদ্রোহী বিধায়ক। দলের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই তাঁরা ওই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন। এর পরেই, 15 জুলাই রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশী ওই 19 বিধায়কের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেন।
পিডিটি আচার্য বলেন, "আইন মেনেই স্পিকার নোটিস জারি করেন। এই বিধিগুলি দশম তফসিলের আওতায় প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সংসদে সে সব অনুমোদিতও হয়েছে। স্পিকারকে নয়, নিয়ম অনুযায়ী আবেদককেই তাঁর অবস্থানের বিষয়ে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে হয়।" আচার্যের দাবি, বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করার ক্ষমতা স্পিকারকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টই । এপ্রসঙ্গে 1992 সালের কিহোতো হোলোহান মামলার উল্লেখ করে তিনি জানান, ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়ে জানায় যে, একমাত্র স্পিকারের সিদ্ধান্তের পরেই আদালতে আবেদন করা যাবে । এর আগে কোনও ভাবেই আদালত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ETV ভারতকে আচার্য বলেন, "একমাত্র স্পিকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই আদালত এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত রায়দান 1992 সালেই হয়ে গিয়েছিল।"
রাজস্থানে কিন্তু হাইকোর্ট পুরো বিষয়টির উপর স্থিতাবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়ে স্পিকারকে বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কদের বিরুদ্ধে যে কোনও রকম পদক্ষেপ করা থেকে সাময়িক ভাবে বিরত রেখেছে। পুরো বিষয়টির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত জুড়ে আছে বলে এবং এর সঙ্গে 1985 সালের অ্যান্টি ডিফেকশান আইন জড়িত রয়েছে, সচিন পাইলটদের এই যুক্তি মেনে নিয়ে এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকে অন্যতম পক্ষ হওয়ার আবেদন মেনে নিয়েছে রাজস্থান হাইকোর্ট। এর ফলে নিশ্চিত ভাবে স্বস্তি বেড়েছে পাইলট শিবিরের। হাইকোর্টের এই রায় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আচার্য বলেন, "এই রায়ের অর্থ, স্পিকারের নোটিস দেওয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় এবং নোটিসের সাংবিধানিক অধিকারকেও চ্যালেঞ্জ জানানো যায়।" অ্যান্টি ডিফেকশান আইন এবং সদস্যপদ খারিজ সিদ্ধান্ত দুই ধরনের ক্ষেত্রে সদস্যপদ খারিজের নোটিস দিতে পারেন স্পিকার। এক, যদি কোনও বিধায়ক হাউজে দলের হুইপ অমান্য করেন। এবং দুই, যদি কোনও বিধায়ক স্বেচ্ছায় দলের সদস্যপদ ছেড়ে দন। লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “স্বেচ্ছায় দলের সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে আইনে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা নেই। কিন্তু এই বিষয়ে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন মালায় সুপ্রিম কোর্ট নিজের বক্তব্য ব্যাখ্যা করেছে। সে রকমই একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোনও বিধায়ক যদি আরও কয়েক জন বিধায়ককে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে নিজের দলেরই সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন, তা হলে তিনি যে দলীয় সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছেন, তা প্রমাণীত হয়।"
কীভাবে সদস্যপদ বাতিলের নোটিস জারি করতে পারেন স্পিকার আইন অনুযায়ী, কোনও সদস্যের সদস্যপদ বাতিলের একটি আবেদন জমা পড়লেই স্পিকার ওই সদস্যের বিরুদ্ধে সদস্যপদ বাতিলের নোটিস জারি করতে পারেন। আচার্য বলেন, "আইনের একটি অংশ বলছে, যিনি সদস্যপদ বাতিলের জন্য আবেদন করবেন, তাঁকে অবশ্যই নিজের যুক্তি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে হবে । সে সব যুক্তি প্রমাণ করার দায়িত্বও সেই আবেদনকারীর, স্পিকারের কোনও ভাবেই নয়।" স্পিকার দুই তরফের আবেদন ও বক্তব্য শুনে তবেই কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় তথ্য ও সনদ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। আইন অনুযায়ী, স্পিকার তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে শুনানির সুযোগ দেবেন। আর এত সব কিছুর পরেই স্পিকার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর দাবি, স্পিকার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই একমাত্র আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং স্পিকারের সিদ্ধান্ত বাতিল বা গ্রহণ করতে পারবে ব্যাখ্যা করলেন আচার্য।
সুপ্রিম কোর্ট কি অ্যান্টি ডিফেকশান আইনের এক্তিয়ার যাচাই করতে পারে? রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশীর দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ চলতি সপ্তাহে বিষয়টি শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সচিন পাইলট ও বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে যে কোনও রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার রাজস্থান হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের উপরেও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট । আচার্য বলেন, "যেহেতু 1992 সালের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের সিদ্ধান্ত প্রথমে রাজস্থান হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট ফের নতুন করে আতস কাচের তলায় এনেছে, তাই ওই আইনের এক্তিয়ার যাচাইয়ের মতো ঘটনার সম্ভাবনাও থাকছে যথেষ্টই । হয়ত আইনটি খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্ট আরও বেশি সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ তৈরি করবে। হয়ত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের সেই রায় খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যের বেঞ্চ তৈরি হবে । কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আর এই বিষয়টির সমাধান সুপ্রিম কোর্টকেই করতে হবে কারণ, আর কারও এক্তিয়ার নেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।"
174 নম্বর ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালের ক্ষমতা ইতিমধ্যে রাজস্থান সঙ্কট আরও গভীর হয়েছে কারণ, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত সরকারের গরিষ্ঠতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে শুক্রবার রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্রের কাছে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন। আচার্য বলেন, "174 নম্বর ধারা অনুযায়ী, রাজ্যপাল তখনই অধিবেশন ডাকতে পারেন, যখন মন্ত্রিসভা তা ডাকার পরামর্শ দেয়। আমাদের সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল কোনও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়।" রিপোর্টে প্রকাশ, রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র বিধানসভার অধিবেশন ডাকার সরকারি সুপারিশ মেনে নেননি। উলটে কবে থেকে অধিবেশন শুরু করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সরকারি সুপারিশ নির্দিষ্ট কিছু না বলায় এবং সুপারিশে মন্ত্রিসভার সরকারি অনুমোদন না থাকয় তিনি বিষয়টি রাজস্থানের সংসদ বিষয়ক দপ্তরকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন।