ETV Bharat / bharat

ধ্বংসের ছাড়পত্র! - পূর্ব অসমের তিনসুকিয়া জেলা

পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে অনুমতি পাওয়ার আগেই শিল্প সংস্থাগুলিকে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে । ইতিমধে্যই অনেক প্রকল্প এবং শিল্প, যথাযথ পরিবেশগত ছাড়পত্র হাসিল না করেই নির্বিচারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । 2020 সালের গত 7 মে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে LG Polymers-এ সাম্প্রতিক যে ঘটনাটি ঘটল, সেটিই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।

Permissions for destruction
Permissions for destruction
author img

By

Published : Oct 3, 2020, 7:40 PM IST

ভুলে ভরা ‘পরিবেশ খসড়া’

উন্নয়নের নামে মানুষ সেই সব প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করছে, যা বাস্তুতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ । এর ফলে পরিবেশগত সংকট দেখা দিচ্ছে । এর ফলে যে ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, তাতে পৃথিবীতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে । এই সংকটের সময়, শিল্পাঞ্চল এবং পরিকাঠামোগত প্রকল্প গড়ে তুলতে পরিবেশগত ছাড়পত্র অনুমোদন করার প্রক্রিয়া আরও বেশি জোরদার করে তোলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে । যদিও কেন্দ্রের তরফে সম্প্রতি ঘোষিত খসড়া এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (EIA)—এর বেশিরভাগ প্রস্তাবই ভুলে ভরা । শিল্পাঞ্চল এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প গড়ে তোলার আগে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আদায় না করা বর্তমানে সুদুরপ্রসারী আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । কেন্দ্রের তরফে যদিও এই বলে সাফাই গাওয়া হয়েছে যে, গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং এতে শিল্পভিত্তিক সংস্থা ও প্রকল্পগুলিকে পরিবশেগত ছাড়পত্র অনুমোদন দেওয়াকে দ্রুততর করার উদে্যাগ নেওয়া হয়েছে।

মারাত্মক ফলাফল

এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক যে, পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে অনুমতি পাওয়ার আগেই শিল্প সংস্থাগুলিকে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে । ইতিমধে্যই অনেক প্রকল্প এবং শিল্প, যথাযথ পরিবেশগত ছাড়পত্র হাসিল না করেই নির্বিচারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । 2020 সালের গত 7 মে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে LG Polymers-এ সাম্প্রতিক যে ঘটনাটি ঘটল, সেটিই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । ঘটনার তদন্তে যে সতে্যর উদঘাটন হয়েছে, তা হল দুর্ঘটনাবশত স্টিয়ারিন গ্যাস লিক হওয়ার ফলেই ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছিল । এতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ধ্বংসাত্মক পরিণতির জন্যই অবাধে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে ! অভাবনীয়ভাবে, পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় না করেই LG Polymers গত 20 বছর ধরে কাজ করে আসছিল । আবার 27 মে, পূর্ব অসমের তিনসুকিয়া জেলায় প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ফোরণে, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রে বিধ্বংসী আগুন লেগেছিল । ঘটনায় উৎকৃষ্ট জীব—বৈচিত্রের জন্য সুপরিচিত ওই এলাকায় বন্য প্রাণী থেকে শুরু করে প্রচুর গাছপালাও নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ তথ্য প্রকাশে্য আসে যে, সংস্থাটি সরকারি খাতের আওতাধীন হলেও গত প্রায় 15 বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় না করেই প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট (1986)—এর আওতাতেই সম্পাদিত হয়। এই উদে্যাগের মাধ্যমে মৌলিক পরিকাঠামো তৈরির আবেদন করার পরই অবিলম্বে ছাড়পত্র আদায় করা থেকে শিল্প সংস্থাগুলিকে বিরত রাখা হয় । সময়ে সময়ে নিয়মের বদল ঘটানো হলেও প্রতে্যকটি প্রকল্প থেকে পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করার বিষয়টি বাদ রাখার প্রবণতায় পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । খসড়ার প্রধান বিষয় হল পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণে সরকারের বিচক্ষণশীল ক্ষমতা প্রয়োগ, যার ফলে পরিবেশরক্ষায় মানুষের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রিত হয় । জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিকে সাধারণত এই ‘কৌশলগত’ শ্রেণির আওতায় গণ্য করা হয় ।

প্রয়োজন বিচক্ষণতা

খসড়া অনুসারে, প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য জনগণের গোচরে আনার প্রয়োজন নেই । এই সুবাদে যে কোনও প্রকল্পই সহজে ‘কৌশলগত’ শ্রেণির ছদ্মবেশে পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় করে নিতে পারে । বিজ্ঞপ্তিতে সেই সব প্রকল্পের লম্বা তালিকা রয়েছে, যাদের জনমত প্রকাশের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । যেমন, দেশের সীমান্ত এলাকাগুলিতে সড়ক এবং পাইপলাইন গড়ে তোলার প্রকল্পগুলির জন্য যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তাতে জনমতের কোনও দরকার নেই । এর ফলে ওই সব এলাকার প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের পক্ষে বড়সড় বিপদ ঘনিয়ে এসেছে । অন্তঃদেশীয় নৌ পরিবহন এবং জাতীয় সড়ক প্রসারণ প্রকল্পগুলিকেও তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে । প্রস্তাব এসেছে, যে সব ভবনের পরিসর এক লাখ 50 হাজার বর্গ ফুটের মধে্য, তাদেরও এই অব্যাহতি দেওয়া হবে। 2016 সালে কেন্দ্র যখন এই ঘোষণা করেছিল, তখন ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল তা খারিজ করে দেয় । পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করা এবং আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণ করা এই ধরনের প্রকল্পের জন্য অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি । গোটা প্রক্রিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অর্ন্তভুক্ত করা উচিত । এতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে তৈরি হওয়া প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য তাঁরা অবহিত থাকবেন ।

ভুলে ভরা ‘পরিবেশ খসড়া’

উন্নয়নের নামে মানুষ সেই সব প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করছে, যা বাস্তুতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ । এর ফলে পরিবেশগত সংকট দেখা দিচ্ছে । এর ফলে যে ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, তাতে পৃথিবীতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে । এই সংকটের সময়, শিল্পাঞ্চল এবং পরিকাঠামোগত প্রকল্প গড়ে তুলতে পরিবেশগত ছাড়পত্র অনুমোদন করার প্রক্রিয়া আরও বেশি জোরদার করে তোলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে । যদিও কেন্দ্রের তরফে সম্প্রতি ঘোষিত খসড়া এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (EIA)—এর বেশিরভাগ প্রস্তাবই ভুলে ভরা । শিল্পাঞ্চল এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প গড়ে তোলার আগে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আদায় না করা বর্তমানে সুদুরপ্রসারী আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । কেন্দ্রের তরফে যদিও এই বলে সাফাই গাওয়া হয়েছে যে, গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং এতে শিল্পভিত্তিক সংস্থা ও প্রকল্পগুলিকে পরিবশেগত ছাড়পত্র অনুমোদন দেওয়াকে দ্রুততর করার উদে্যাগ নেওয়া হয়েছে।

মারাত্মক ফলাফল

এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক যে, পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে অনুমতি পাওয়ার আগেই শিল্প সংস্থাগুলিকে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে । ইতিমধে্যই অনেক প্রকল্প এবং শিল্প, যথাযথ পরিবেশগত ছাড়পত্র হাসিল না করেই নির্বিচারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । 2020 সালের গত 7 মে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে LG Polymers-এ সাম্প্রতিক যে ঘটনাটি ঘটল, সেটিই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । ঘটনার তদন্তে যে সতে্যর উদঘাটন হয়েছে, তা হল দুর্ঘটনাবশত স্টিয়ারিন গ্যাস লিক হওয়ার ফলেই ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছিল । এতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ধ্বংসাত্মক পরিণতির জন্যই অবাধে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে ! অভাবনীয়ভাবে, পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় না করেই LG Polymers গত 20 বছর ধরে কাজ করে আসছিল । আবার 27 মে, পূর্ব অসমের তিনসুকিয়া জেলায় প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ফোরণে, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রে বিধ্বংসী আগুন লেগেছিল । ঘটনায় উৎকৃষ্ট জীব—বৈচিত্রের জন্য সুপরিচিত ওই এলাকায় বন্য প্রাণী থেকে শুরু করে প্রচুর গাছপালাও নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ তথ্য প্রকাশে্য আসে যে, সংস্থাটি সরকারি খাতের আওতাধীন হলেও গত প্রায় 15 বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় না করেই প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট (1986)—এর আওতাতেই সম্পাদিত হয়। এই উদে্যাগের মাধ্যমে মৌলিক পরিকাঠামো তৈরির আবেদন করার পরই অবিলম্বে ছাড়পত্র আদায় করা থেকে শিল্প সংস্থাগুলিকে বিরত রাখা হয় । সময়ে সময়ে নিয়মের বদল ঘটানো হলেও প্রতে্যকটি প্রকল্প থেকে পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করার বিষয়টি বাদ রাখার প্রবণতায় পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । খসড়ার প্রধান বিষয় হল পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণে সরকারের বিচক্ষণশীল ক্ষমতা প্রয়োগ, যার ফলে পরিবেশরক্ষায় মানুষের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রিত হয় । জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিকে সাধারণত এই ‘কৌশলগত’ শ্রেণির আওতায় গণ্য করা হয় ।

প্রয়োজন বিচক্ষণতা

খসড়া অনুসারে, প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য জনগণের গোচরে আনার প্রয়োজন নেই । এই সুবাদে যে কোনও প্রকল্পই সহজে ‘কৌশলগত’ শ্রেণির ছদ্মবেশে পরিবেশগত ছাড়পত্র আদায় করে নিতে পারে । বিজ্ঞপ্তিতে সেই সব প্রকল্পের লম্বা তালিকা রয়েছে, যাদের জনমত প্রকাশের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । যেমন, দেশের সীমান্ত এলাকাগুলিতে সড়ক এবং পাইপলাইন গড়ে তোলার প্রকল্পগুলির জন্য যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তাতে জনমতের কোনও দরকার নেই । এর ফলে ওই সব এলাকার প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের পক্ষে বড়সড় বিপদ ঘনিয়ে এসেছে । অন্তঃদেশীয় নৌ পরিবহন এবং জাতীয় সড়ক প্রসারণ প্রকল্পগুলিকেও তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে । প্রস্তাব এসেছে, যে সব ভবনের পরিসর এক লাখ 50 হাজার বর্গ ফুটের মধে্য, তাদেরও এই অব্যাহতি দেওয়া হবে। 2016 সালে কেন্দ্র যখন এই ঘোষণা করেছিল, তখন ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল তা খারিজ করে দেয় । পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করা এবং আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণ করা এই ধরনের প্রকল্পের জন্য অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি । গোটা প্রক্রিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অর্ন্তভুক্ত করা উচিত । এতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে তৈরি হওয়া প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য তাঁরা অবহিত থাকবেন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.