ETV Bharat / bharat

দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন মানদণ্ড, সংকট কাটবে গাড়ি শিল্পের ?

দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গাড়ি শিল্প এবং পেট্রোপণ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইউরো-2 মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে 2003 সালে ভারত স্টেজ চালু হয় এবং তারপর থেকে ইউরোপীয় মানদণ্ড অনুযায়ী এর আধুনিকীকরণ হয়ে চলেছে । 1 এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে ভারত স্টেজ 6। ভারত স্টেজ গাড়ির ইঞ্জিনের মান বেঁধে দেয়, যা কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে ।

author img

By

Published : Mar 17, 2020, 5:08 PM IST

দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন মানদণ্ড, সংকট কাটবে গাড়ি শিল্পের ?
দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন মানদণ্ড, সংকট কাটবে গাড়ি শিল্পের ?

ভারত স্টেজ -6 (BS-6) কার্যকর করতে তৈরি ভারত

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে যানবাহনের সংখ্যাও। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ নতুন যানবাহন রাস্তায় নামছে। কার্বন নিঃসরণের জন্য দূষণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। বিশ্বের সবথেকে দূষিত ১০টি শহর ভারতে, এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিষয়টি কতটা গুরুতর। দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে, 1991 সালে প্রথমবার দেশে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ির কার্বন নিঃসরণের মাত্রার উপর বিধিনিষেধ আরোপ হয়। তখন থেকেই সিসা-বিহীন পেট্রলের বিক্রি এবং 'ক্যাটালিটিক কনভার্টার'-এর ব্যবহার গাড়ি থেকে দূষণ কমাতে শুরু করে। যানবাহন থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে 2002 সালে ভারত সরকার নিযুক্ত মাশেলকর কমিটি একটি রিপোর্ট তৈরি করে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই তাদের কার্বন নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড তৈরি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে। কমিটি নিজেদের রিপোর্টে মডেল করেছে এই মানদণ্ডকেই। মাশেলকর কমিটির রিপোর্টকে গ্রহণ করে কেন্দ্র । এরপর 2003 সালে জাতীয় যানবাহন জ্বালানি নীতি ঘোষণা করে। একে 'ভারত স্টেজ' নাম দেওয়া হয় এবং এটা ইউরোপীয় মানদণ্ডের সমতুল্য। কার্বন নিঃসরণে বিধিনিষেধ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একেও বদলানো হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গাড়ি শিল্প এবং পেট্রোপণ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইউরো-2 মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে 2003 সালে ভারত স্টেজ চালু হয় এবং তারপর থেকে ইউরোপীয় মানদণ্ড অনুযায়ী এর আধুনিকীকরণ হয়ে চলেছে । 1 এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে ভারত স্টেজ 6। ভারত স্টেজ গাড়ির ইঞ্জিনের মান বেঁধে দেয়, যা কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে । ভারত স্টেজ 6 ইঞ্জিনে আরও পরিশুদ্ধ জ্বালানি দরকার, তাই তৈল শোধনাগারগুলিও তাদের কারখানার আধুনিকীকরণ করেছে। জানা গেছে, যে এই আধুনিকীকরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির খরচ হয়েছে 30 হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিএস-4 যানবাহনের বিক্রি এবং রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে 31 মার্চ। 1 এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র বিএস-6 গাড়িই বিক্রি হবে। বৈদ্যুতিন যানবাহনে নজর দেওয়ার পাশাপাশি, গোটা বাজারেই বিএস-6 কার্যকর করতে চায় কেন্দ্র। এতে গাড়ি-শিল্পে কিছুটা ধন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে বৈদ্যুতিন যানবাহন আসতে এখনও যথেষ্ট সময় লাগবে। যদিও কেন্দ্র ২০৩০ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যায় বৈদ্যুতিন গাড়ি আনতে চায়, তবে এতে সময় লাগার কথা ।

বহুমুখী সুবিধা

1 এপ্রিল থেকেই দেশজুড়ে বিএস-6 মানদণ্ডের উপযোগী জ্বালানি মিলবে। বর্ধিত বিমা ও করের জেরেও গাড়ি বিক্রি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। GST কমালে গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে এবং গাড়ি শিল্প ক্ষতির মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। নীতি আয়োগের আশা, 2030 সালের মধ্যে ভারত 10 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে । গাড়িশিল্পে, 2025 সালের মধ্যে 150 CC-র নিচে দু-চাকার এবং 2023-এর মধ্যে তিনচাকার বৈদ্যুতিন বাহন আনার প্রস্তাব রয়েছে। বৈদ্যুতিন গাড়ির ক্ষেত্রে বিএস-6 ইশু নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎচালিত বাহন ইতিমধ্যেই বাজারে এসেছে। যদিও তাদের বিক্রি কম, কারণ সাধারণ বাহনের থেকে তাদের দাম বেশি, এবং চার্জিং পয়েন্ট বা ব্যাক-আপের সুবিধাও সীমিত। সেজন্য, শহরের মধ্যে কম দূরত্বেই তাদের যাতায়াত সীমিত। এইসব বাহনে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার হয়। তৈরিতে কাঁচামালের অভাবের জন্য, উৎপাদন আশাব্যঞ্জক নয়। এইগুলি এবং আরও বহু সীমাবদ্ধতার জন্য, আগামী অন্তত 15 বছর পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির সঙ্গে বৈদ্যুতিন বাহনের প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা আশ্বাস দিচ্ছেন, যে গাড়িশিল্প নিঃসঙ্কোচে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে, অনেক সংস্থাই বৈদ্যুতিন বাহনের ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমছে। পেট্রোপণ্য নিয়ে রাশিয়া ও সৌদি আরবের প্রতিযোগিতার জেরে দাম কমেছে। এর ফলে, প্রচলিত যানবাহনের ব্যবহারকেই শ্রেয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিএস-৬ প্রয়োগের ফলে জ্বালানির মধ্যে সিসা, গন্ধক, কার্বন-মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের মতো দূষণসৃষ্টিকারী পদার্থ কমবে। এইসব দিক মাথায় রাখলে, বিএস-6-এর ব্যবহারের দেশ অনেক দিক থেকেই উপকৃত হবে। যানবাহনের আয়ু 15 বছরে বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র। 15 বছর পেরিয়ে গেলে সেসব যানবাহনকে বর্জন করা হবে। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে নতুন গাড়ির বিক্রি ফের পুনরুজ্জীবিত হবে।

পরিবেশ-স্বাস্থ্যরক্ষা

বিএস-6 যানবাহন এবং তাদের জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেশি হবে। যদিও, বিএস-6 পরিবেশরক্ষার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আসলে, বিএস-৪-এর পরে, পঞ্চম পর্যায় কার্যকর হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের মধ্যে বিশেষ তফাত নেই, তাই কেন্দ্র 1 এপ্রিল থেকে ষষ্ঠ পর্যায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একরকম ভাবে, এটা জনসাধারণ এবং গাড়িশিল্পের জন্য লাভজনক। পঞ্চম পর্যায় কার্যকর হলে, আধুনিকীকরণের জন্য গাড়ি শিল্পে বিপুল খরচ হত । এখন আরও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে মাইলেজও বাড়বে আর দূষণও কমবে। বিএস-৬ মানদণ্ডে, পেট্রলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমবে 25 শতাংশ এবং ডিজেলে 68 শতাংশ। গণপরিবহনে বিরাট সংখ্যায় ডিজেলচালিত বাহনের পাশাপাশি, ক্যাব পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত নতুন গাড়িগুলো থেকে দূষণও অনেকটাই কমবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর দশজনের মধ্যে 9 মানুষকেই দূষিত বাতাসে শ্বাস নিতে হয়। দূষণ সৃষ্টিকারী গ্যাসগুলো জনস্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ভারতে প্রতি বছর পাঁচ বছরের নিচে প্রায় এক লক্ষ শিশু দূষণের কারণে মারা যায়। হাঁপানি, হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ হয় দূষণ থেকে। যানবাহনজনিত দূষণ কমানো গেলে এইসব রোগের প্রকোপও কমবে। বর্তমানে, বিএস-৪ যানবাহনগুলি 50 PPM পর্যন্ত গন্ধক নিঃসরণ করে। বিএস-6-এ এটা কমে 10 শতাংশে দাঁড়াবে। বিএস-6 ইউরোপীয় দেশগুলোতে চালু ইউরো-6 মানদণ্ড মেনে চলে। জাপান ও আমেরিকাও ইউরো-6 মানদণ্ড মেনে চলে। বিএস-6-এর সঙ্গে, আমরাও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং অত্যাধুনিক বাহন ব্যবহারকারী হিসেবে পরিচিত হব। পুরোনো বাহনের ক্ষেত্রেও নতুন জ্বালানি উপযোগী হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করবে। জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য আমরা আমদানির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। নতুন ব্যবস্থায় মাইলেজ বাড়ার ফলে জ্বালানি কম পুড়বে। এর ফলে তেল আমদানি কমবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি মুদ্রা বাঁচানো সম্ভব হবে।

বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

বেশ কিছুটা সময় ধরে দেশের গাড়ি শিল্প সংকটের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বিএস-6-এ যাওয়া শিল্পের উপর ভারী বোঝা চাপিয়েছে। পরিবেশবিদদের যুক্তি, জনস্বাস্থ্যের খাতিরে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। নতুন ব্যবস্থায় যাওয়ার ফলে বাহনের দাম বেড়েছে। 1 এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র বিএস-6 যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হবে। এর ফলে, লক্ষ লক্ষ বিএস-4 যানবাহন বাজারে থেকে যাবে। আধিকারিকরা বলছেন, সেগুলিকে বর্জিত বলেই গণ্য করা হবে। সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, বেশিরভাগ মানুষই আর বিএস-4 যানবাহন কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। মাল পরিবহনে বিরাট সংখ্যায় ট্রাক ব্যবহার হয়। বিএস-6-কে মাথায় রেখে মালিকরা নতুন ট্রাক কেনা স্থগিত রেখেছেন। এর জেরে বহু অনুসারী শিল্পে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিএস-6 দু চাকা এবং যাত্রীবাহী গাড়ি ইতিমধ্যেই বাজারে এসে গেছে। গত এক বছর ধরে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অটোমোবাইল শিল্প। যদিও, ক্রেতাদের মধ্যে এখনও বিএস-6 নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। পরিবেশবিদরা মনে করেন, যদি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে বিএস-6 বাহনের উপকারিতা নিয়ে বড় করে প্রচার করত, তাহলে ক্রেতারা নতুন গাড়িগুলি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারতেন।

তেলুগু থেকে অনুবাদ করেছেন কোলাকালুরি শ্রীধর

ভারত স্টেজ -6 (BS-6) কার্যকর করতে তৈরি ভারত

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে যানবাহনের সংখ্যাও। প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ নতুন যানবাহন রাস্তায় নামছে। কার্বন নিঃসরণের জন্য দূষণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। বিশ্বের সবথেকে দূষিত ১০টি শহর ভারতে, এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিষয়টি কতটা গুরুতর। দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে, 1991 সালে প্রথমবার দেশে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ির কার্বন নিঃসরণের মাত্রার উপর বিধিনিষেধ আরোপ হয়। তখন থেকেই সিসা-বিহীন পেট্রলের বিক্রি এবং 'ক্যাটালিটিক কনভার্টার'-এর ব্যবহার গাড়ি থেকে দূষণ কমাতে শুরু করে। যানবাহন থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে 2002 সালে ভারত সরকার নিযুক্ত মাশেলকর কমিটি একটি রিপোর্ট তৈরি করে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই তাদের কার্বন নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড তৈরি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে। কমিটি নিজেদের রিপোর্টে মডেল করেছে এই মানদণ্ডকেই। মাশেলকর কমিটির রিপোর্টকে গ্রহণ করে কেন্দ্র । এরপর 2003 সালে জাতীয় যানবাহন জ্বালানি নীতি ঘোষণা করে। একে 'ভারত স্টেজ' নাম দেওয়া হয় এবং এটা ইউরোপীয় মানদণ্ডের সমতুল্য। কার্বন নিঃসরণে বিধিনিষেধ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একেও বদলানো হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গাড়ি শিল্প এবং পেট্রোপণ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইউরো-2 মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে 2003 সালে ভারত স্টেজ চালু হয় এবং তারপর থেকে ইউরোপীয় মানদণ্ড অনুযায়ী এর আধুনিকীকরণ হয়ে চলেছে । 1 এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে ভারত স্টেজ 6। ভারত স্টেজ গাড়ির ইঞ্জিনের মান বেঁধে দেয়, যা কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে । ভারত স্টেজ 6 ইঞ্জিনে আরও পরিশুদ্ধ জ্বালানি দরকার, তাই তৈল শোধনাগারগুলিও তাদের কারখানার আধুনিকীকরণ করেছে। জানা গেছে, যে এই আধুনিকীকরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির খরচ হয়েছে 30 হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিএস-4 যানবাহনের বিক্রি এবং রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে 31 মার্চ। 1 এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র বিএস-6 গাড়িই বিক্রি হবে। বৈদ্যুতিন যানবাহনে নজর দেওয়ার পাশাপাশি, গোটা বাজারেই বিএস-6 কার্যকর করতে চায় কেন্দ্র। এতে গাড়ি-শিল্পে কিছুটা ধন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে বৈদ্যুতিন যানবাহন আসতে এখনও যথেষ্ট সময় লাগবে। যদিও কেন্দ্র ২০৩০ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যায় বৈদ্যুতিন গাড়ি আনতে চায়, তবে এতে সময় লাগার কথা ।

বহুমুখী সুবিধা

1 এপ্রিল থেকেই দেশজুড়ে বিএস-6 মানদণ্ডের উপযোগী জ্বালানি মিলবে। বর্ধিত বিমা ও করের জেরেও গাড়ি বিক্রি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। GST কমালে গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে এবং গাড়ি শিল্প ক্ষতির মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। নীতি আয়োগের আশা, 2030 সালের মধ্যে ভারত 10 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে । গাড়িশিল্পে, 2025 সালের মধ্যে 150 CC-র নিচে দু-চাকার এবং 2023-এর মধ্যে তিনচাকার বৈদ্যুতিন বাহন আনার প্রস্তাব রয়েছে। বৈদ্যুতিন গাড়ির ক্ষেত্রে বিএস-6 ইশু নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎচালিত বাহন ইতিমধ্যেই বাজারে এসেছে। যদিও তাদের বিক্রি কম, কারণ সাধারণ বাহনের থেকে তাদের দাম বেশি, এবং চার্জিং পয়েন্ট বা ব্যাক-আপের সুবিধাও সীমিত। সেজন্য, শহরের মধ্যে কম দূরত্বেই তাদের যাতায়াত সীমিত। এইসব বাহনে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার হয়। তৈরিতে কাঁচামালের অভাবের জন্য, উৎপাদন আশাব্যঞ্জক নয়। এইগুলি এবং আরও বহু সীমাবদ্ধতার জন্য, আগামী অন্তত 15 বছর পেট্রল ও ডিজেল গাড়ির সঙ্গে বৈদ্যুতিন বাহনের প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা আশ্বাস দিচ্ছেন, যে গাড়িশিল্প নিঃসঙ্কোচে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে, অনেক সংস্থাই বৈদ্যুতিন বাহনের ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমছে। পেট্রোপণ্য নিয়ে রাশিয়া ও সৌদি আরবের প্রতিযোগিতার জেরে দাম কমেছে। এর ফলে, প্রচলিত যানবাহনের ব্যবহারকেই শ্রেয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিএস-৬ প্রয়োগের ফলে জ্বালানির মধ্যে সিসা, গন্ধক, কার্বন-মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের মতো দূষণসৃষ্টিকারী পদার্থ কমবে। এইসব দিক মাথায় রাখলে, বিএস-6-এর ব্যবহারের দেশ অনেক দিক থেকেই উপকৃত হবে। যানবাহনের আয়ু 15 বছরে বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র। 15 বছর পেরিয়ে গেলে সেসব যানবাহনকে বর্জন করা হবে। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে নতুন গাড়ির বিক্রি ফের পুনরুজ্জীবিত হবে।

পরিবেশ-স্বাস্থ্যরক্ষা

বিএস-6 যানবাহন এবং তাদের জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেশি হবে। যদিও, বিএস-6 পরিবেশরক্ষার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আসলে, বিএস-৪-এর পরে, পঞ্চম পর্যায় কার্যকর হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের মধ্যে বিশেষ তফাত নেই, তাই কেন্দ্র 1 এপ্রিল থেকে ষষ্ঠ পর্যায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একরকম ভাবে, এটা জনসাধারণ এবং গাড়িশিল্পের জন্য লাভজনক। পঞ্চম পর্যায় কার্যকর হলে, আধুনিকীকরণের জন্য গাড়ি শিল্পে বিপুল খরচ হত । এখন আরও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে মাইলেজও বাড়বে আর দূষণও কমবে। বিএস-৬ মানদণ্ডে, পেট্রলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমবে 25 শতাংশ এবং ডিজেলে 68 শতাংশ। গণপরিবহনে বিরাট সংখ্যায় ডিজেলচালিত বাহনের পাশাপাশি, ক্যাব পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত নতুন গাড়িগুলো থেকে দূষণও অনেকটাই কমবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর দশজনের মধ্যে 9 মানুষকেই দূষিত বাতাসে শ্বাস নিতে হয়। দূষণ সৃষ্টিকারী গ্যাসগুলো জনস্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ভারতে প্রতি বছর পাঁচ বছরের নিচে প্রায় এক লক্ষ শিশু দূষণের কারণে মারা যায়। হাঁপানি, হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ হয় দূষণ থেকে। যানবাহনজনিত দূষণ কমানো গেলে এইসব রোগের প্রকোপও কমবে। বর্তমানে, বিএস-৪ যানবাহনগুলি 50 PPM পর্যন্ত গন্ধক নিঃসরণ করে। বিএস-6-এ এটা কমে 10 শতাংশে দাঁড়াবে। বিএস-6 ইউরোপীয় দেশগুলোতে চালু ইউরো-6 মানদণ্ড মেনে চলে। জাপান ও আমেরিকাও ইউরো-6 মানদণ্ড মেনে চলে। বিএস-6-এর সঙ্গে, আমরাও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং অত্যাধুনিক বাহন ব্যবহারকারী হিসেবে পরিচিত হব। পুরোনো বাহনের ক্ষেত্রেও নতুন জ্বালানি উপযোগী হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করবে। জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য আমরা আমদানির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। নতুন ব্যবস্থায় মাইলেজ বাড়ার ফলে জ্বালানি কম পুড়বে। এর ফলে তেল আমদানি কমবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি মুদ্রা বাঁচানো সম্ভব হবে।

বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

বেশ কিছুটা সময় ধরে দেশের গাড়ি শিল্প সংকটের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বিএস-6-এ যাওয়া শিল্পের উপর ভারী বোঝা চাপিয়েছে। পরিবেশবিদদের যুক্তি, জনস্বাস্থ্যের খাতিরে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। নতুন ব্যবস্থায় যাওয়ার ফলে বাহনের দাম বেড়েছে। 1 এপ্রিল থেকে শুধুমাত্র বিএস-6 যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন হবে। এর ফলে, লক্ষ লক্ষ বিএস-4 যানবাহন বাজারে থেকে যাবে। আধিকারিকরা বলছেন, সেগুলিকে বর্জিত বলেই গণ্য করা হবে। সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, বেশিরভাগ মানুষই আর বিএস-4 যানবাহন কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। মাল পরিবহনে বিরাট সংখ্যায় ট্রাক ব্যবহার হয়। বিএস-6-কে মাথায় রেখে মালিকরা নতুন ট্রাক কেনা স্থগিত রেখেছেন। এর জেরে বহু অনুসারী শিল্পে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিএস-6 দু চাকা এবং যাত্রীবাহী গাড়ি ইতিমধ্যেই বাজারে এসে গেছে। গত এক বছর ধরে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অটোমোবাইল শিল্প। যদিও, ক্রেতাদের মধ্যে এখনও বিএস-6 নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। পরিবেশবিদরা মনে করেন, যদি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে বিএস-6 বাহনের উপকারিতা নিয়ে বড় করে প্রচার করত, তাহলে ক্রেতারা নতুন গাড়িগুলি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারতেন।

তেলুগু থেকে অনুবাদ করেছেন কোলাকালুরি শ্রীধর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.