ETV Bharat / bharat

এত তাড়াতাড়ি ইস্তফা দেবেন না নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি, মত পর্যবেক্ষকদের

author img

By

Published : Jul 19, 2020, 9:04 AM IST

বিতর্কিত কাজ—কারবার এবং ভারত—বিরোধী মন্তব্যের জন্য নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবি উঠেছে । তবে ওই দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণকারীদের অভিমত, এত তাড়াতাড়ি তিনি ইস্তফা দেবেন না । প্রধানমন্ত্রিত্ব আরও অন্তত এক মাস ধরে রাখতে পারেন তিনি । এই বিষয়ে মতামত জানিয়ে লিখছেন অরুণিম ভুইয়াঁ ।

oli
oli

দিল্লি : বিতর্কিত কাজ এবং ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জেরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগ চেয়ে চারদিকে প্রবল দাবি ওঠা সত্ত্বেও হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এত তাড়াতাড়ি তিনি ইস্তফা দেবেন না । প্রধানমন্ত্রিত্ব আরও অন্তত এক মাস ধরে রাখতে পারেন তিনি । বৃহস্পতিবার দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, পুষ্প কুমার দহল যিনি আবার দেশে ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (NCP) সহকারী চেয়ারম্যানও বটে এবং মাধব নেপাল যিনি বরিষ্ঠ দলনেতা–দু’জনই কাঠমাণ্ডুতে এক বৈঠকে ওলির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ওলিকে তাঁর তৈরি করা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিতর্কের দায়ভার মেনেই পদত্যাগ করতে বলেছেন দহল এবং মাধব নেপাল।

ওলি বর্তমানে NCP-র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের তরফে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন, যাঁরা তাঁর কাজ করার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । গত মাসে ওলি পার্লামেন্টে একটি নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র পেশ করেন । এরপরই নেপালের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত তলানিতে এসে পৌঁছায় । ওই মানচিত্রে ভারতের কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল । মে মাসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লিপুলেখ পর্যন্ত একটি সড়কপথের সূচনা করেছিলেন । কৈলাস মান সরোবরের উদ্দেশে যাত্রাকারী পুণ্যার্থীদের জন্য এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল । ওই সড়কপথের উদ্বোধনের পরই ওলি এই পদক্ষেপ করেন ।

হাউজ় অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের পর পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে বিলটি প্রথম পাস হয় ১৩ জুন । ভারতের তরফে প্রতিক্রিয়ায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, “মানচিত্রে কৃত্রিমভাবে এই অঞ্চল বাড়ানোর দাবি কোনও ঐতিহাসিক সত্যতা বা তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভরশীল নয় । এমনকী যুক্তিযুক্তও নয় । নিষ্পত্তি বাকি রয়েছে এমন সব সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় বসার আমাদের সাম্প্রতিক বোঝাপড়ারও এটি পরিপন্থী ।” যদিও ওলির সম্মানরক্ষার চেষ্টায় নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যাওয়ালি বলেছিলেন, কূটনৈতিক দৌত্যে এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হবে ।

২৯ জুন সংসদে এক বৈঠকে গ্যাওয়ালি বলেছিলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, কূটনৈতিক দৌত্যের মাধ্যমে আমরা বিবাদ মিটিয়ে ফেলব । নেপাল-ভারতের বহুস্তরীয় সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না । সীমান্ত সমস্যা কোনওভাবেই ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্কের গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ করতে পারে না ।”

তাঁর এই মন্তব্য তখন প্রকাশ্যে এসেছিল যখন এর একদিন আগেও ওলি তাঁর ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব বজায় রেখে কাঠমাণ্ডুর একটি জনসভায় বলেছিলেন, দিল্লি তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত করতে চাইছে । চলতি COVID-19 প্যানডেমিকের মধ্যে জনতার দুর্দশা আরও বাড়িয়ে ওলির দল 21 জুন একটি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও আনে যা পার্লামেন্টারি স্টেট অ্যাফেয়ার্স এবং গুড গর্ভন্যান্স কমিটি সমর্থন করে ।

এই নয়া সংশোধনী অনুসারে নেপালি নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে হওয়া বিদেশিনিদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নেপালের নাগরিকত্ব পেতে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে । এর আগের আইনে বিয়ের পর পরই এই সুবিধা মহিলারা পেয়ে যেতেন । এই ঘোষণার জেরে দু’দেশেই জনরোষ তীব্র হয় । বিশেষ করে নেপাল সীমান্তের ভারতীয় এলাকাগুলিতে । কারণ এই সব এলাকা থেকেই অনেক ভারতীয় তাদের মেয়েদের বিয়ে নেপালি নাগরিকদের সঙ্গে দিয়ে থাকেন ।

এরপর আবার এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে ওলি বলেছিলেন যে, ভগবান রামের জন্মভূমি অযোধ্যা, প্রকৃতপক্ষে নেপালের পারসা জেলার থোরিতে অবস্থিত । এই মন্তব্যে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় । এমনকী নিজের দলের নেতা বামদেব গৌতমও ওলিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন ।

পর্যবেক্ষকদের মতে, COVD-19 প্যানডেমিকের ফলে নেপালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজের দলের সদস্যদের থেকেই প্রবল চাপের মুখে পড়েছিলেন । তার থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই তিনি এই ধরনের ভারত-বিরোধী পদক্ষেপ করছেন ।

দহল যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং NCP—র সহকারী চেয়ারম্যানের পদ, দুই থেকেই ওলির পদত্যাগ চাইছেন । সেখানেই NCB-র স্ট্যান্ডিং কমিটির তরফে ওলির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে । স্ট্যান্ডিং কমিটির আরও একটি বৈঠক যা শুক্রবার হওয়ার কথা ছিল তা রবিবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

NCP—র স্ট্যান্ডিং কমিটিতে 44 জন সদস্যের মধ্যে মাত্র 13 জনের সমর্থন রয়েছে ওলির দিকে । ইতিমধ্যেই আস্থাভোট এড়ানোর জন্য ওলি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা করে পার্লামেন্টকেও স্থগিত করে দিয়েছেন । এখন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে, ওলি এত তাড়াতাড়ি নিজের পদ ছাড়বেন না এবং আরও অন্তত এক মাস তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখবেন । কাঠমাণ্ডু থেকে ফোনে রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হরি রোকা ETV ভারতকে জানিয়েছেন যে, রবিবার NCP-র স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক নিয়ামক হবে না । রোকা বলেছেন, “ওরা খুব সম্ভবত অগাস্টের দ্বিতীয়ার্ধে দলের সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠক ডাকবে আর সেখানেই ওলির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে ।”

তিনি বলেছেন, ওলি যেখানে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে সিদ্ধহস্ত, সেখানেই বিদেশমন্ত্রী গ্যাওয়ালি, তাঁর বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট, বিতর্ক বাঁধলেই তা সামাল দিতে দেরি করেন না । এর সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা গেছে অযোধ্যা নিয়ে ওলির বিতর্কিত মন্তব্যে । এই মন্তব্যের পর সে দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছিল ।

ওলির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেখানে বলা হয়েছিল, “প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য কোনও রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল না এবং কারও ভাবাবেগকে আঘাত করা এর উদ্দেশ্য ছিল না ।” বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “শ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর জন্মস্থান নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারণা এবং মতামত রয়েছে । এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র রামায়ণের সুবিশাল ভৌগোলিক পরিসর এবং রামচন্দ্র সম্পর্কে সত্য অন্বেষণ সংক্রান্ত উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন । কারণ একাধিক স্থানের সঙ্গে এই প্রাচীন সভ্যতার সূত্র জড়িয়ে আছে ।”

নেপালের পার্লামেন্টে নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র পাশ হওয়ার পর যদিও ভারত সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল । কিন্তু ওলির অযোধ্যা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লি নীরবতা বজায় রেখেছে । অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাঙ্কের "নেবারহুড রিজিওনাল স্টাডিজ় ইনিশিয়েটিভ"—এর সিনিয়র ফেলো কে ওয়াইহোম বলেছেন, “বড় দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করেছে ।” তিনি বলেন, “আমাদের এই ধরনের আচরণ করা আরও অনুশীলন করতে হবে ।” সঙ্গে আরও যোগ করেছেন যে নেপালের প্রতিটি ভারত-বিরোধী মন্তব্যেরই জবাব দেওয়া ভারতের জন্য জরুরি নয় ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নয় সদস্যের NCP সচিবালয় শনিবার কাঠমাণ্ডুতে একটি বৈঠকে বসবে । যেখানে তারা অগাস্টের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে সেন্ট্রাল কমিটির একটি বৈঠকের সুপারিশ করবে । দলে দহলপন্থীরা চায় বলেই রবিবারের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি তোলা হবে । এই সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠকের পরই ওলি জানতে পারবেন, তাঁর ভাগ্যে কী আছে । নেপালের অর্থনৈতিক এবং প্যানডেমিকজনিত সংকটের জন্যই এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে । দলের ভিতরে বিবাদের শিকড় দীর্ঘবিস্তৃত এবং বিভাজন প্রায় নিশ্চিত । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেউই ঝুঁকি নিতে চান না । তাহলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যবেক্ষক ETV ভারতকে সব কিছু জানিয়েছেন ।

দিল্লি : বিতর্কিত কাজ এবং ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জেরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগ চেয়ে চারদিকে প্রবল দাবি ওঠা সত্ত্বেও হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এত তাড়াতাড়ি তিনি ইস্তফা দেবেন না । প্রধানমন্ত্রিত্ব আরও অন্তত এক মাস ধরে রাখতে পারেন তিনি । বৃহস্পতিবার দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, পুষ্প কুমার দহল যিনি আবার দেশে ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (NCP) সহকারী চেয়ারম্যানও বটে এবং মাধব নেপাল যিনি বরিষ্ঠ দলনেতা–দু’জনই কাঠমাণ্ডুতে এক বৈঠকে ওলির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ওলিকে তাঁর তৈরি করা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিতর্কের দায়ভার মেনেই পদত্যাগ করতে বলেছেন দহল এবং মাধব নেপাল।

ওলি বর্তমানে NCP-র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের তরফে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন, যাঁরা তাঁর কাজ করার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । গত মাসে ওলি পার্লামেন্টে একটি নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র পেশ করেন । এরপরই নেপালের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত তলানিতে এসে পৌঁছায় । ওই মানচিত্রে ভারতের কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল । মে মাসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লিপুলেখ পর্যন্ত একটি সড়কপথের সূচনা করেছিলেন । কৈলাস মান সরোবরের উদ্দেশে যাত্রাকারী পুণ্যার্থীদের জন্য এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল । ওই সড়কপথের উদ্বোধনের পরই ওলি এই পদক্ষেপ করেন ।

হাউজ় অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের পর পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে বিলটি প্রথম পাস হয় ১৩ জুন । ভারতের তরফে প্রতিক্রিয়ায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, “মানচিত্রে কৃত্রিমভাবে এই অঞ্চল বাড়ানোর দাবি কোনও ঐতিহাসিক সত্যতা বা তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভরশীল নয় । এমনকী যুক্তিযুক্তও নয় । নিষ্পত্তি বাকি রয়েছে এমন সব সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় বসার আমাদের সাম্প্রতিক বোঝাপড়ারও এটি পরিপন্থী ।” যদিও ওলির সম্মানরক্ষার চেষ্টায় নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যাওয়ালি বলেছিলেন, কূটনৈতিক দৌত্যে এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হবে ।

২৯ জুন সংসদে এক বৈঠকে গ্যাওয়ালি বলেছিলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, কূটনৈতিক দৌত্যের মাধ্যমে আমরা বিবাদ মিটিয়ে ফেলব । নেপাল-ভারতের বহুস্তরীয় সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না । সীমান্ত সমস্যা কোনওভাবেই ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্কের গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ করতে পারে না ।”

তাঁর এই মন্তব্য তখন প্রকাশ্যে এসেছিল যখন এর একদিন আগেও ওলি তাঁর ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব বজায় রেখে কাঠমাণ্ডুর একটি জনসভায় বলেছিলেন, দিল্লি তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত করতে চাইছে । চলতি COVID-19 প্যানডেমিকের মধ্যে জনতার দুর্দশা আরও বাড়িয়ে ওলির দল 21 জুন একটি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও আনে যা পার্লামেন্টারি স্টেট অ্যাফেয়ার্স এবং গুড গর্ভন্যান্স কমিটি সমর্থন করে ।

এই নয়া সংশোধনী অনুসারে নেপালি নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে হওয়া বিদেশিনিদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নেপালের নাগরিকত্ব পেতে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে । এর আগের আইনে বিয়ের পর পরই এই সুবিধা মহিলারা পেয়ে যেতেন । এই ঘোষণার জেরে দু’দেশেই জনরোষ তীব্র হয় । বিশেষ করে নেপাল সীমান্তের ভারতীয় এলাকাগুলিতে । কারণ এই সব এলাকা থেকেই অনেক ভারতীয় তাদের মেয়েদের বিয়ে নেপালি নাগরিকদের সঙ্গে দিয়ে থাকেন ।

এরপর আবার এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে ওলি বলেছিলেন যে, ভগবান রামের জন্মভূমি অযোধ্যা, প্রকৃতপক্ষে নেপালের পারসা জেলার থোরিতে অবস্থিত । এই মন্তব্যে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় । এমনকী নিজের দলের নেতা বামদেব গৌতমও ওলিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন ।

পর্যবেক্ষকদের মতে, COVD-19 প্যানডেমিকের ফলে নেপালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজের দলের সদস্যদের থেকেই প্রবল চাপের মুখে পড়েছিলেন । তার থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই তিনি এই ধরনের ভারত-বিরোধী পদক্ষেপ করছেন ।

দহল যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং NCP—র সহকারী চেয়ারম্যানের পদ, দুই থেকেই ওলির পদত্যাগ চাইছেন । সেখানেই NCB-র স্ট্যান্ডিং কমিটির তরফে ওলির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে । স্ট্যান্ডিং কমিটির আরও একটি বৈঠক যা শুক্রবার হওয়ার কথা ছিল তা রবিবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

NCP—র স্ট্যান্ডিং কমিটিতে 44 জন সদস্যের মধ্যে মাত্র 13 জনের সমর্থন রয়েছে ওলির দিকে । ইতিমধ্যেই আস্থাভোট এড়ানোর জন্য ওলি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা করে পার্লামেন্টকেও স্থগিত করে দিয়েছেন । এখন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে, ওলি এত তাড়াতাড়ি নিজের পদ ছাড়বেন না এবং আরও অন্তত এক মাস তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখবেন । কাঠমাণ্ডু থেকে ফোনে রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হরি রোকা ETV ভারতকে জানিয়েছেন যে, রবিবার NCP-র স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক নিয়ামক হবে না । রোকা বলেছেন, “ওরা খুব সম্ভবত অগাস্টের দ্বিতীয়ার্ধে দলের সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠক ডাকবে আর সেখানেই ওলির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে ।”

তিনি বলেছেন, ওলি যেখানে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে সিদ্ধহস্ত, সেখানেই বিদেশমন্ত্রী গ্যাওয়ালি, তাঁর বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট, বিতর্ক বাঁধলেই তা সামাল দিতে দেরি করেন না । এর সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা গেছে অযোধ্যা নিয়ে ওলির বিতর্কিত মন্তব্যে । এই মন্তব্যের পর সে দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছিল ।

ওলির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেখানে বলা হয়েছিল, “প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য কোনও রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল না এবং কারও ভাবাবেগকে আঘাত করা এর উদ্দেশ্য ছিল না ।” বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “শ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর জন্মস্থান নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারণা এবং মতামত রয়েছে । এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র রামায়ণের সুবিশাল ভৌগোলিক পরিসর এবং রামচন্দ্র সম্পর্কে সত্য অন্বেষণ সংক্রান্ত উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন । কারণ একাধিক স্থানের সঙ্গে এই প্রাচীন সভ্যতার সূত্র জড়িয়ে আছে ।”

নেপালের পার্লামেন্টে নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র পাশ হওয়ার পর যদিও ভারত সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল । কিন্তু ওলির অযোধ্যা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লি নীরবতা বজায় রেখেছে । অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাঙ্কের "নেবারহুড রিজিওনাল স্টাডিজ় ইনিশিয়েটিভ"—এর সিনিয়র ফেলো কে ওয়াইহোম বলেছেন, “বড় দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করেছে ।” তিনি বলেন, “আমাদের এই ধরনের আচরণ করা আরও অনুশীলন করতে হবে ।” সঙ্গে আরও যোগ করেছেন যে নেপালের প্রতিটি ভারত-বিরোধী মন্তব্যেরই জবাব দেওয়া ভারতের জন্য জরুরি নয় ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নয় সদস্যের NCP সচিবালয় শনিবার কাঠমাণ্ডুতে একটি বৈঠকে বসবে । যেখানে তারা অগাস্টের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে সেন্ট্রাল কমিটির একটি বৈঠকের সুপারিশ করবে । দলে দহলপন্থীরা চায় বলেই রবিবারের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি তোলা হবে । এই সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠকের পরই ওলি জানতে পারবেন, তাঁর ভাগ্যে কী আছে । নেপালের অর্থনৈতিক এবং প্যানডেমিকজনিত সংকটের জন্যই এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে । দলের ভিতরে বিবাদের শিকড় দীর্ঘবিস্তৃত এবং বিভাজন প্রায় নিশ্চিত । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেউই ঝুঁকি নিতে চান না । তাহলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যবেক্ষক ETV ভারতকে সব কিছু জানিয়েছেন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.