গত বছর এই সময়ই বিহারে এবং অগাস্টে ওড়িশা, কেরালা, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছিল । বর্তমানে অসমও একইভাবে বন্যার কারণে যন্ত্রণার মুখে পড়েছে । ব্রহ্মপুত্র, ধানসিরি, জিয়াভরলি, কোভিলি নদী উপচে বন্যা হচ্ছে, যা বিপদসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে । রাজ্যের 27 জেলার 50 লাখেরও বেশি মানুষ প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এই বন্যার জেরে এখনও পর্যন্ত 80 জনের মৃত্যু হয়েছে। ভাসিয়ে দিয়েছে 430 বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাজ়িরাঙা পার্কের 95 শতাংশ । বন্যপ্রাণীরও মৃত্যু হয়েছে ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অনুমান, অগাস্টের মাঝামাঝি কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা 64 হাজারে পৌঁছাতে পারে । এছাড়াও, এই ধ্বংসাত্মক বন্যা আড়াই লাখ হেক্টর ফসলের উপর তাণ্ডব চালিয়েছে এবং জাপানি এনসেফ্যালাইটিসেরও উৎস তৈরি করেছে । যদিও বহু দশক আগেই চিহ্নিত করা গিয়েছিল যে ভারতের 12 শতাংশ জমি (4 কোটি হেক্টর) বন্যার ঝুঁকির মুখে রয়েছে । এবং 52 শতাংশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই বন্যার কারণে হয়ে থাকে । যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে বহু রাজ্যই এখন কেন্দ্রের সাহায্য চাইছে । দু’বছর আগেই কেন্দ্রীয় জল কমিশন জানিয়েছিল যে 1953 থেকে 2017 সালের মধ্যে বন্যায় আনুমানিক 1 লাখ 7 হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে । প্রায় 3.66 লাখ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে । জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বন্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং বড় শহরগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । সংশোধনমূলক পদক্ষেপ করতে সরকার আর দেরি বা অবহেলা করতে পারে না ।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, 2050 সালের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক ভারতীয়র জীবনযাত্রার মান 50 শতাংশ নেমে যাবে । ভারত সেই প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে যেখানে বন্যার কারণে জীবন ও সম্পত্তিহানি খুবই বেশি । কেন্দ্র মেনে নিয়েছে যে কম সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, অপর্যাপ্ত নিকাশিব্যবস্থা, জলাধারগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপই বন্যার পিছনে কারণ হিসেবে কাজ করে । ছয়ের দশকে তৈরি বাঁধগুলো 1990 সালের মধ্যে তাদের কার্যকারিতা হারিয়েছে । 2000 সালের পর থেকে প্রতিবছর বন্যা অসমের বিপুল ক্ষতি করছে । 2004 সালে বন্যায় 500 জনের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় সরকার একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য । কিন্তু সেই রিপোর্টে এখন ধুলো জমছে । 40 হাজার কোটি টাকা খরচ করে ব্রহ্মপুত্রের নদীবক্ষ থেকে পলি তোলার পরিকল্পনা প্রস্তাবের স্তরের বাইরে বের হয়নি । বিপর্যয় মোকাবিলায় 14তম অর্থ কমিশন পুরো দেশের জন্য পাঁচ বছরে বরাদ্দ করেছিল 61 হাজার 219 কোটি টাকা । আমরা জানি না নতুন অর্থ কমিশন জীবন ও সম্পত্তিহানি কমানোর জন্য কতদূর কী করবে । বিশ্ব ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে যে বন্যা আটকানোর জন্য খরচ করা এক-একটি ডলার, বন্যার জেরে হওয়া আট ডলারের ক্ষতি আটকাতে পারবে ।
নেদারল্যান্ডস যা সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে এবং যার 2/3 অংশ অর্থনৈতিক উৎস বন্যাপ্রবণ এলাকায় রয়েছে, একটা শক্তিশালী সুরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং গোটা পৃথিবীকে সেই শিক্ষা দিচ্ছে। ভারতেরও একই মনোবল নিয়ে বন্যা আটকাতে উদ্যোমী হওয়া উচিত ।