প্রত্যেক স্বাধীন দেশের প্রতীক তার পতাকা ৷ প্রত্যেকটি স্বাধীন দেশের নিজস্ব পতাকা রয়েছে ৷ ভারতের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয় ৷ গেরুয়া, সাদা এবং গাঢ় সবুজ রং দিয়ে তৈরি ভারতের জাতীয় পতাকা ৷ আর সাদা রং করা অংশের মাঝে আঁকা থাকে নীল রঙের অশোক চক্র ৷
ভারতের এই জাতীয় পতাকা বিশ্বের দরবারে পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করে ৷ তাই জাতীয় পতাকা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতেই প্রতিবছর 22 জুলাই জাতীয় পতাকা গ্রহণ দিবস (ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ অ্যাডপশন ডে) উদযাপন করা হয় ৷ এই দিনটিতে আমরা দেশের জাতীয় পতাকার তাৎপর্য স্মরণ করে স্যালুট জানাই ৷ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করি ৷
ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা দেশপ্রেমের আসল অর্থকে উপস্থাপন করে ৷ একইসঙ্গে দেশপ্রেমের আসল মর্ম ও উৎসাহকে ভারতাবাসী, বিশেষত যুবসমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে জাগরিত করে ৷ এই জাতীয় পতাকা গ্রহণ দিবস পালনের আরও একটি গুরুত্ব রয়েছে ৷ সেটা হল মানুষকে এই জাতীয় পতাকার মূল্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করা ৷
ভারতের এই জাতীয় পতাকার নকশা করেছিলেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া ৷ আর 1947 সালের 22 জুলাই ভারতীয় গণপরিষদের অধিবেশনে সেই পতাকা গৃহীত হয় ৷ তার পর থেকে প্রতিবছর 22 জুলাই এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে ৷ গণপরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর ভারতের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি গৃহীত হয় ৷
ভারতের জাতীয় পতাকার পরিবর্তনের ইতিহাস -
- ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় 1906 সালের 7 অগাষ্ট তৎকালীন ক্যালকাটার (বর্তমানে কলকাতা) পারসি বাগান স্কয়্যারে (গ্রিন পার্ক) ৷ লাল, হলুদ ও সবুজ রং দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা ৷
- দ্বিতীয় জাতীয় পতাকাটিকে 'সপ্তঋষি পতাকা' বলে উল্লেখ করা হয় ৷ 1907 সালের 22 অগাস্ট স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশালিস্ট কংগ্রেসে এই পতাকাটি উত্তোলন করা হয় ৷
- 1917 সালে দেশে রাজনৈতিক লড়াই যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিচ্ছে তখন অ্যানি বেসান্ত ও লোকমান্য তিলক হোমরুল আন্দোলন চলাকালীন ভারতের তৃতীয় পতাকাটির উত্তোলন করেন ৷ এই পতাকা পর্যায়ক্রমে পাঁচটি লাল ও চারটি সবুজ রঙের দণ্ড দিয়ে তৈরি ৷ তার উপরে সপ্তঋষির মতোই সাতটি তারাও আঁকা ছিল ভারতের এই তৃতীয় পতাকায় ৷ পতাকার বাঁদিকের উপরে কোনায় একটি ইউনিয়ন জ্যাক ছিল ৷ শুধু তাই নয়, এর এক কোণে একটি সাদা চাঁদ ও তারাও আঁকা ছিল ৷
- ভারতের চতুর্থ পতাকাটির নকশা করেছিলেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া ৷ তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা ছিলেন ৷ এই চতুর্থ পতাকায় দুটি রং ব্যবহার করা হয় ৷ লাল ও সবুজ ৷ এই দুটি রং হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়কে উপস্থাপন করত ৷ ভারতের অন্য সম্প্রদায়ের জন্য সাদা রং ও দেশের প্রগতির প্রতীক হিসেবে চরকার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন গান্ধিজি ৷
- 1931 সাল পতাকার ইতিহাসে যুগান্তকারী সময় ছিল ৷ একটি তেরঙা পতাকাকে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাশ হয় ৷ এই পতাকাটিকে বর্তমান পতাকার পূর্বসূরী বলা যেতে পারে ৷ কারণ এই পতাকাটিও গেরুয়া, সাদা, সবুজ রংঙের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল ৷ একইসঙ্গে সাদা রঙের উপরে গান্ধিজির পরামর্শমতো চরকা আঁকা হয় ৷ এই পতাকার যে কোনও সাম্প্রদায়িক তাৎপর্য নেই তা স্পষ্টভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় ৷
- ভারতের বর্তমান পতাকাটিকে 1947 সালে 22 জুলাই গণপরিষদে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয় ৷ আগের মতোই এই পতাকায় একই রং ব্যবহার করা হয় ৷ একইসঙ্গে রংগুলির তাৎপর্য একই থাকে ৷ শুধু চরকার জায়গায় অশোক চক্র গ্রহণ করা হয় ৷
ভারতের জাতীয় পতাকার তিনটি রংয়ের তাৎপর্য -
- পতাকার গেরুয়া রংটি দেশের শক্তি ও সাহসের প্রতীক
- সাদা রং সত্য ও শান্তির প্রতীক
- সবুজ রং ভূমির উর্বরতা, বৃদ্ধি ও পবিত্রতার প্রতীক
এই তিনটি রংয়ের মতো অশোক চক্রের 24 টি দণ্ডের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে ৷ এই 24 টি দণ্ড আলাদা আলাদা অনুভূতির প্রতীক ৷ সেই অনুভূতিগুলির মধ্যে রয়েছে - ভালোবাসা, ধৈর্য, উদারতা, বিশ্বাস, স্ব-স্বল্পতা, আত্মত্যাগ, ন্যায়নিষ্ঠা, করুণা, নম্রতা, সহানুভূতি, নৈতিক মূল্যবোধ, ঈশ্বরে ভয়, আশা, বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক, মায়া, সৌন্দর্য, ন্যায়বিচার, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভদ্রতা, শান্তি, ধার্মিকতা ও সাহস ৷
ভারতের জাতীয় পতাকার কিছু চিত্তাকর্ষক বিষয় আছে -
- 1953 সালের 29 মে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল
- 1907 সালে 22 অগাস্ট জার্মানির স্টুটগার্টে বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ম্যাডাম ভিকাজি রুসতম কামা
- 1984 সালে উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা মহাকাশে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন ৷ ওই পতাকাটি রাকেশ শর্মার স্পেশ সুটে পদক হিসেবে লাগানো হয়েছিল ৷ (রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় যিনি মহাকাশে গিয়েছিলেন )