কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশজুড়ে ‘জনতা কারফিউ’–এর ডাক দিয়েছেন। গত রবিবার দেশবাসীকে বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং অন্তত 14 ঘণ্টা বাইরে বেরোনোর অনুমতি ছিল না । সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং আধিকারিকদের তরফে এ কথা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যে সমস্ত নাগরিক যেন ওইদিন তাদের বাড়িতেই থাকেন । অথচ বিষয়টা শুধুমাত্র সেই একটা দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না, বরং দ্রুতগতিতে ছড়াতে থাকা কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনার জেরে বাড়িতে থাকার সেই সময়সীমা বেড়ে বেশ কিছু দিন এবং সপ্তাহ হয়ে গেল । চলুন, এই অপ্রত্যাশিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই সময়টায় কিছু স্বাস্থ্যকর এবং উপভোগ্য করি । বাড়িতে থাকার এই অভিজ্ঞতাকে কীভাবে নিরাপদ অথচ উপভোগ্য করে তোলা যায়, চলুন দেখা যাক !
সচেতনতা বাড়ান
কোরোনা ভাইরাস কী এবং তার সংক্রমণ কীভাবে হয়, সে সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের জানানো যেতে পারে । একইসঙ্গে এর প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তাও বলা যেতে পারে ।
শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত শরীরচর্চায় যে সময় দিতেন, এখন তার থেকে একটু বেশি সময় দিতে পারেন । যারা যোগচর্চা করেন, এই সময় নতুন কোনও আসন শিখতে এবং অনুশীলন করতে পারেন ।
একসঙ্গে রান্না করুন
বাড়ির মহিলারা প্রতিদিন রান্নাবান্না করেন । বিষয়টা তাঁদের কাছে একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে । এই সময়ে বরং পুরুষ সদস্যরা রান্নায় তাঁদের সাহায্য করতে পারেন । তাছাড়া বিশেষ করে সেই সব মহিলা চাকুরীজীবী কর্মচারী, যারা প্রতিদিন অফিসের কাজ এবং বাড়ির কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার মরিয়া চেষ্টা করেন, তাঁরা এখন পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর কিছু কাজের দায়িত্ব দিয়ে দিনে অন্তত কিছুটা সময় বিশ্রাম নিতে পারেন । এই সময় অন্তত এঁরা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
বই পড়তে পারেন
আজকালকার ব্যস্ত জীবনে মানুষ বইপত্রে চোখ রাখার সময়টাই হারিয়ে ফেলেছে । চলুন, এই সময়টায় শান্ত এবং ধীর স্থির মন নিয়ে একটা বই অন্তত পড়ে ফেলার চেষ্টা করা যাক ।
একসঙ্গে সাফ–সাফাই
ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যরক্ষায় বাড়ির ছোটদের জন্য একসঙ্গে কিছু করা যেতে পারে । হাউসকিপিংয়ের কাজ করতে পরিবারের সব সদস্যরা একজোট হতে পারেন । গোটা বাড়ি সাফ–সাফাইয়ের কাজে বাচ্চারাও অংশ হতে পারে । এই তালিকায় বাথটাব, ওয়াশরুমও থাকতে পারে, যা সচরাচর দৈনন্দিন ভিত্তিতে ব্যবহার হলেও দৈনন্দিন ভিত্তিতে পরিষ্কার করার সময় আমরা পাই না ।
চলুন প্রিয় হবিগুলো উপভোগ করা যাক
বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলো করুন । তাদের সঙ্গে সময় কাটান । ছবি আঁকা, রং করা এবং অন্যান্য কিছু সৃষ্টিশীল কাজকর্ম করতে পারেন । ব্রাশটা হাতে ধরুন এবং রং করুন । পরিবারের সদস্যরা মিলে শিশুদের সঙ্গে কোনও গানের তালে নাচুন । একসঙ্গে গান করুন, অন্ত্যাক্ষরী–ডাম্বশারাডের মতো গেম খেলুন, যাতে একটুও সময় নষ্ট না করার পাশাপাশি প্রাণ খুলে তা উপভোগও করা যায় ।
ম্যাগাজিনগুলো পুরোটা পড়ুন
আমাদের মধ্যে অনেকেই খবরের কাগজ বা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের পুরোটা পড়তে আগ্রহী । কিন্তু সময়ের অভাব এবং ব্যস্ততার জন্য প্রতিদিন সকালে শুধুমাত্র শিরোনামটুকু পড়েই উঠে পড়তে হয় তাঁদের । এবার সেই সময় এসেছে যখন গোটা কাগজ কিংবা ম্যাগাজিনটা পড়ে ফেলা যায় এবং তা–ও আবার কোরোনার মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোনও খবরই বাদ না দিয়ে । বিভিন্ন জার্নালগুলিতে করোনা নিয়ে প্রচুর বিজ্ঞানভিত্তিক এবং খাঁটি তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যা পড়লে সচেতনতা বাড়ে । তাই কোরোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সেগুলিও পড়তে পারেন।
চিঠি লিখতে শিখুন
বর্তমানে বাড়ির ছোট সদস্যরা তাদের দাদু–ঠাকুমা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফোনে প্রায়ই কথা বলে । চিঠি লেখা কী জিনিস, তা শুধুমাত্র তাদের পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ । এই জ্ঞান সম্পর্কে তারা এখনও অন্ধকারে। এটাই সঠিক সময় যখন তাদের চিঠি লেখার পাঠ দেওয়া যেতে পারে । শুধু পরিবারের সদস্যদের কীভাবে চিঠি লিখতে হয়, তা–ই নয় । সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনগুলিকেও চিঠি লেখার কৌশল তাদের শেখানো উচিত । এতে শিশুদের সৃষ্টিশীল লেখনীই উদ্বুব্ধ হবে না, তাদের ভাষার উপর দখলও বাড়বে ।
প্লাস্টিককে বিদায় জানান
প্লাস্টিক কভার, বোতল, বাক্স প্রভৃতি জিনিস যে কোনও ঘরের কোণে কোণে দেখতে পাওয়া যায় । গোটা বাড়ি থেকে সেই সব জিনিস সংগ্রহ করে ফেলে দেওয়ার কাজটাকে বরং এখন একটা প্রতিযোগিতায় পরিণত করুন আর তাতে বা্চ্চাদেরও সামিল করুন । যে যত বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করে আনতে পারবে, সে পুরস্কার পাবে।
তেলুগু পড়ান, শেখান
ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলিতে পড়ার ফলে শিশুরা ক্রমশ তেলুগু ভাষা ভুলে যাচ্ছে । আপনি তাদের এই ভাষার শিক্ষা দিতে পারেন, তেলুগু ভাষায় ছোট গল্প কিংবা কবিতা পড়ে শুনিয়ে । গোটা বিষয়টাকে উপভোগ্য করে তুলতে আপনার বলার পর তাদের বলুন, পুনরাবৃত্তি করতে ।
চিরাচরিত গেম খেলায় উৎসাহ দিন
বাড়িতে বসে খেলার জন্য চিরাচরিত কিছু গেম বেছে নিতে পারেন যেমন অষ্টচেম্মা, বৈকুণ্ঠপলি, পুলি–মেকা, ভমনাগুল্লু, দাবা এবং ক্যারম।
প্রকৃতির কাজে
বাড়ির উঠানই হোক কিংবা আপনার অ্যাপার্টমেন্ট চত্বর, সেখানে লাগানো গাছগুলিতে জল দিন । টবগুলো পরিস্কার করুন । নতুন গাছও লাগাতে পারেন ।
ক্যান্ডেললাইট ডিনারে যান
আর সবচেয়ে শেষে, নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে একটা দারুণ ক্যান্ডেললাইট ডিনার উপহার দিন । যেহেতু এই সময়টাই বাড়ির সব লোক, বাড়িতেই থাকছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা তো বেশি হবেই । যোগানের ক্ষেত্রেও তার চাপ থাকবে । তাই নৈশভোজকে মনোগ্রাহী এবং মজাদার বানাতে বাড়িতেই ক্যান্ডেললাইট ডিনারের আয়োজন করতে পারেন । ঘরের আলো নিভিয়ে, খাবার টেবিল এবং ঘরের অন্য কিছু কিছু জায়গায় বেশ কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন আর গোটা পরিবার মিলে খেতে বসুন । এত যোগাড়–আয়োজন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন ঠিকই কিন্তু এই পরিশ্রমের ফল দেখে আপনি স্বস্তি পাবেন আর আপনার ঘুমও ভাল হবে । ভোরে উঠে দেখবেন, এত আনন্দ অতীতে সম্ভবত খুব কমই পেয়েছেন ।
তাই সব মিলিয়ে বলতে গেলে বাড়িতে থাকা ততটাও খারাপ বিষয় নয় । বিশেষ করে তখন, যখন আমরা জানতে পারি, নিরাপদ থাকার এখন এটাই একমাত্র উপায় !!!